‘ভোট চুরি’ নিয়ে অভিযোগ তুলে নির্বাচনের ময়দানে সাড়া মিলছে না। বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ করেও ভোটে ভরাডুবি হয়েছিল। সেই হার থেকে শিক্ষা নিয়ে কংগ্রেস ফের রুটিরুজির দাবি নিয়ে আন্দোলনে ফেরার সিদ্ধান্ত নিল।
কংগ্রেস কার্যকরী কমিটির বৈঠকে আজ সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইউপিএ সরকারের তৈরি মনরেগা কার্যত তুলে মোদী সরকার যে বিকশিত ভারত-জি রাম জি আইন তৈরি করেছে, তার বিরুদ্ধে ৫ জানুয়ারি থেকে দেশ জুড়ে গণ আন্দোলন হবে। মনরেগা বাঁচানোর দাবিতে পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ— দেশের চারটি অঞ্চলে চারটি জনসভা হবে। কার্যকরী কমিটির বৈঠকে অধীররঞ্জন চৌধুরী দাবি তুলেছেন, পূর্বাঞ্চলের জনসভা যেন পশ্চিমবঙ্গে হয়। তা হলে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস লাভবান হবে।
নরেন্দ্র মোদীর সরকার ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই ইউপিএ সরকারের তৈরি জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন আইন শিল্পের স্বার্থে সংশোধন করতে চেয়েছিল। কংগ্রেসের বিরোধিতায় তা সম্ভব হয়নি। ২০১৯-এ ক্ষমতায় দ্বিতীয়বার আসার পরে মোদী সরকার বিরোধীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করে শিল্পমহলের স্বার্থে তিন কৃষি আইন চালু করে। পরে কৃষকদের আন্দোলনে তিন আইন প্রত্যাহার করতে হয়। তৃতীয় বার ক্ষমতায় এসে মোদী সরকার ইউপিএ-র মনরেগা বদলে বিকশিত ভারত-জি রাম জি আইন চালু করেছে। দেশ জুড়ে খেতমজুরদের সংগঠন না থাকায়, এর বিরুদ্ধে আন্দোলন নিয়ে সংশয় থাকলেও আজ কংগ্রেস কার্যকরী কমিটির বৈঠকে জি রাম জি-রবিরুদ্ধে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস নেতারা একে একই সঙ্গে ‘সুযোগ’ ও ‘বাধ্যবাধকতা’ হিসেবে দেখছেন।
বাধ্যবাধ্যকতা— কারণ, মোদী সরকার মনরেগা-র নামও বদলে, মহাত্মা গান্ধীর নাম তুলে দিয়ে ইউপিএ সরকারের উত্তরাধিকার মুছে দিতে চাইছে। সুযোগ— কারণ, কংগ্রেস ফের সামাজিক ন্যায়, গরিব, প্রান্তিক মানুষ, দলিত, ওবিসি, জনজাতি, মহিলা, সংখ্যালঘুদের হয়ে কথা বলার সুযোগ পাবে। এই পিচে ব্যাটিং করেই ২০২৪-এ লোকসভার নির্বাচনে কংগ্রেস আগের তুলনায় ভাল ফল করেছিল। তার সঙ্গে ‘মনরেগা বাঁচাও’ নিয়ে আন্দোলনে তৃণমূলের মতো ইন্ডিয়া মঞ্চের দলগুলিও পাশে থাকবে।
জি রাম জি আইনে ১০০ দিনের বদলে ১২৫ দিনের কাজের বন্দোবস্ত করলেও, মোদী সরকার মজুরির খরচের শতকরা ৪০ ভাগ রাজ্যের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। এর ফলে রাজ্যের উপরে আর্থিক দায় চাপবে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। রাজ্যের হাতে অর্থ না থাকলে, চাইলেও কাজ মিলবে না। ফলে মনরেগা-য় যে কাজের আইনি অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তা খর্ব করা হচ্ছে বলে রাহুল গান্ধীর অভিযোগ। সাধারণতকার্যকরী কমিটির বৈঠকের পরে কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্রধান মুখপাত্র সাংবাদিক সম্মেলন করেন। আজ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও রাহুল গান্ধী সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। খড়্গে বলেন, মোদী সরকার রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি। রাহুল বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথাই বলেননি। মন্ত্রিসভাতেও আলোচনা হয়নি।’’ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান অবশ্য একে কংগ্রেসের ‘কুম্ভীরাশ্রু’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)