Advertisement
E-Paper

ফের ভারী বর্ষণ! সন্ত্রস্ত চেন্নাইবাসী

বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট নেই, মোবাইল কিংবা ল্যান্ডফোনও নেই। জলমগ্ন রাস্তায় দেখা নেই অটো-বাস-ট্যাক্সির। রেল লাইনে জল, ফলে বন্ধ ট্রেন। টাকা নেই এটিএমে। নেই দু’বেলার দু’মুঠো খাবার। লাগাতার বৃষ্টিতে কার্যত ‘নেই-রাজ্যে’ পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম স্মার্ট-সিটি চেন্নাই!

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:২৫
টানা  বৃষ্টিতে ডুবেছে রাস্তাঘাট। যাতায়াতের জন্য তাই ভরসা নৌকোই। ছবি: রয়টার্স।

টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে রাস্তাঘাট। যাতায়াতের জন্য তাই ভরসা নৌকোই। ছবি: রয়টার্স।

বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট নেই, মোবাইল কিংবা ল্যান্ডফোনও নেই। জলমগ্ন রাস্তায় দেখা নেই অটো-বাস-ট্যাক্সির। রেল লাইনে জল, ফলে বন্ধ ট্রেন। টাকা নেই এটিএমে। নেই দু’বেলার দু’মুঠো খাবার। লাগাতার বৃষ্টিতে কার্যত ‘নেই-রাজ্যে’ পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম স্মার্ট-সিটি চেন্নাই!

এই প্রতিকূল অবস্থায় তামিলনাড়ু সরকার চেন্নাইকে বিপর্যয় অঞ্চল বলে চিহ্নিত করেছে। বৃহস্পতিবার সকালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা চেন্নাই, কাঞ্চিপুরম এবং তিরুভাল্লুর-সহ বেশ কিছু বন্যা কবলিত জায়গা পরিদর্শনে যান। সরকারি দফতরের সঙ্গে সমস্ত বেসরকারি অফিসগুলিতেও আগামীকাল পর্যন্ত দু’দিন ছুটি দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

আরও এক সপ্তাহ ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। এর মধ্যে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। যদিও বুধবার ভোরে বৃষ্টির তাণ্ডব খানিক কমেছিল। জল নামবে এই আশায় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন বাসিন্দারা। কিন্তু দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্ভাবনা মুছে যায় পুরোপুরি। জল তো নামেইনি, উল্টে চেমবারামবাক্কাম জলাধার থেকে জল ছাড়ায় আরও ফুলে ফেঁপে উঠেছে অ্যাডেয়ার নদী। আজ প্রায় ৩৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে সেখান থেকে। ভয়ানক অবস্থা সৈদাপেটের। জল বয়ে যাচ্ছে সৈদাপেট সেতুর উপর দিয়ে। ফলে বন্ধ যান-চলাচল। প্রশাসনের আশঙ্কা, খুব শিগ‌‌্গিরি ভেসে যাবে কাছেই গিন্ডি ও সৈদাপেটের মাঝের রেললাইনও। ফলে যেটুকু পরিবহণ ব্যবস্থা এখনও টিকে আছে, তা-ও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। জেগে থাকা রেললাইনটার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছে অনেককে। কারণ জলমগ্ন রাস্তার অবস্থা আরও করুণ। মাঝপথে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাস। দেখা নেই ট্যাক্সি কিংবা অটোর। যদি বা ভাগ্যক্রমে জুটছে ট্যাক্সি, পাঁচ গুণ ভাড়া হাঁকছেন চালক। এই পরিস্থিতিতে বিপর্যয় মোকাবিলায় নেমেছে ‘ওলা’-র মতো মোবাইল অ্যাপ নির্ভর ট্যাক্সি সংস্থা। তাদের বার্তা, ‘যোগাযোগ করুন। সাহায্যের আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে’।

এ দিকে শহরতলি কিংবা রাজ্যের মধ্যে যোগাযোগকারী সমস্ত ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। আগামী রবিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চেন্নাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সূত্রের খবর, চেন্নাইয়ের ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে আরাক্কোনাম বিমানবন্দরকে সাময়িক ভাবে বিমান ওঠা-নামার কাজে ব্যবহার করা হবে। সকাল পর্যন্ত খবর ছিল, চেন্নাই বিমানবন্দরে আটকে রয়েছে অন্তত হাজার তিনেক লোক। বাসে করে তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানা যায়। যদিও এর পরের খবর আর মেলেনি। জানা যায়নি বিমানবন্দরে এখনও কোনও যাত্রী আটকে রয়েছে কি না।

খোঁজখবর না মেলার আরও একটা বড় কারণ, বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিএসএনএল-সহ অধিকাংশ টেলিকম সংস্থাই ফ্রি-টকটাইম ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহ চেন্নাইয়ের আশপাশে সমস্ত ল্যান্ডলাইন কল বিনামূল্যে করা যাবে। ফোনের বিল জমা দিতে না পারলেও লাইন কেটে দেওয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি। যদিও বহু জায়গায় মোবাইল বা ল্যান্ডফোন, নেটওয়ার্ক নেই কিছুতেই।

সারা দিন ধরে বেজে যাচ্ছে ইলেক্ট্রিসিটি বোর্ড অফিসের ফোন। কারণ, বহু এলাকাতেই বিদ্যুৎ নেই। জলে বিদ্যুতের তার পড়ে যাতে কোনও বিপদ না ঘটে, তাই আগেভাগেই কিছু জায়গায় বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে প্রশাসন।

এর মধ্যে ত্রাতা হয়ে উঠেছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট। #চেন্নাইফ্লাড, #চেন্নাইরেনস, #চেন্নাইরেনসহেল্প, এমনই সব হ্যাশট্যাগ দিয়ে সাহায্যবার্তা পাঠাচ্ছেন অনেকে। জয়শ্রী নামে এক মহিলা যেমন টুইট করেছেন, ‘‘বাল্মিকীনগরে আমাদের ফ্ল্যাট। এখানকার রাস্তায় জল নেই। বিদ্যুৎ-ইন্টারনেটও রয়েছে। প্রয়োজনে যোগাযোগ করবেন।’’ রাজা নামে এক ব্যক্তি আবার লিখেছেন, ‘‘থোরাইপক্কমে আমার ফ্ল্যাটে অতিরিক্ত জায়গা রয়েছে। চাইলে এসে থাকতে পারেন।’’ কিন্তু বিপর্যস্ত এলাকাগুলোয় ইন্টারনেট কোথায়! ফলে জয়শ্রীদের সাহায্যবার্তা পৌঁচ্ছছে না দুর্গতদের কাছে।

একে তো বিদ্যুৎ নেই, যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন, তার উপরে ফুরিয়েছে সঞ্চিত অর্থও। মাসের শুরুতেও হাতে টাকা নেই অনেকের। জলমগ্ন আইটি হাব। অফিস বন্ধ। ফলে মাসের পয়লা তারিখেও জোটেনি বেতন। এটিএম থেকে টাকা তোলা যাচ্ছে না। কারণ সেখানেও টাকা নেই। যে সব এটিএম চালু রয়েছে, সেখানেও দীর্ঘ লাইন। এরই মধ্যে আগামী কয়েক দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বাড়িতে খাবার-ওষুধপত্র মজুত করে রাখার চেষ্টা করছেন বাসিন্দারা। ‘জোম্যাটো’ নামে একটি ‘ফুড-ডেলিভারি’ সংস্থা আবার জানিয়েছে, দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে তাদের মাধ্যমে দুর্গতদের পাশে থাকা যাবে। তাদের সাইট মারফত একটি খাবারের প্যাকেট কিনলে তারা দু’টো প্যাকেট পাঠিয়ে দেবে দুর্গতদের কাছে। যদিও কী ভাবে, তা স্পষ্ট করে জানাননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এক এক জায়গায় তো ৬ থেকে ১২ ফুট জল!

বন্যা বিধ্বস্ত চেন্নাইয়ের ছবি দেখুন নীচের গ্যালারিতে
বন্যা বিধ্বস্ত চেন্নাই

উদ্ধারকাজে নেমেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৬০০ কর্মী। বায়ুসেনার হেলিকপ্টার থেকে খাবারের প্যাকেট ফেলা হচ্ছে বন্যাকবলিত তাম্বারাম ও উরাপাক্কামের মতো শহরতলি এলাকায়। গৃহবন্দিদের উদ্ধারে নৌকা নামানো হয়েছে অ্যাডেয়ার ও কোট্টুপুরমে। ভারপ্রাপ্ত নৌ-অফিসার অলোক ভাটনগর জানিয়েছেন, ত্রাণে সাহায্য করতে এসেছে আইএনএস ঐরাবত। ইতিমধ্যেই অন্তত হাজার তিনেক লোককে উদ্ধার করা হয়েছে চেন্নাই শহর থেকে।

রাজধানীর এ হেন অবস্থার জন্য ‘অস্বাভাবিক বৃষ্টি’কেই দুষছেন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, জলাভূমি বুজিয়ে আবাসন, শপিং মল, এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির জন্যই কি বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা? প্রশাসন যাই বলুক, শহরের ‘অতি-আধুনিকীকরণ’কে দায়ী করছেন শহরবাসীদেরই অনেকে।

crisis worrisome chennai more rain meterological department prediction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy