সিবিআই থেকে শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সমস্ত স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতায় নরেন্দ্র মোদী সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলে সরব বিরোধীরা। কলকাতায় ব্রিগেডেও সেই সুর শোনা গিয়েছে। এ বার আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থে ওই সব প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালান। যিনি হালে তৈরি হওয়া শীর্ষ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার ভাগের কমিটির প্রধানও।
রবিবার প্রেসিডেন্সি কলেজের (২০১৪ সাল থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ২০২তম প্রতিষ্ঠাতৃ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জালান বলেন, ‘‘নীতি নির্ধারণের কাজ সরকারেরই। কিন্তু তা কার্যকর করার দায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি।’’ অনেকের মতে, স্বশাসিত সংস্থাগুলির কাজে মাথা গলাচ্ছে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে তাঁর ওই বক্তব্যের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধেই বার্তা দিলেন জালান। বলতে চাইলেন, নীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারের মাথা না-গলানোই উচিত। বরং পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া জরুরি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে। তবেই অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি সম্ভব।
জালানের মতে, ভারতে নির্বাচন কমিশন, সিএজি, ইউপিএসসি-র মতো স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। তাদের দক্ষতা আন্তর্জাতিক মানের। ওই সব প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র সরকারের কাছে নয়, সাধারণ মানুষের কাছেও দায়বদ্ধ। আর এই দায়বদ্ধতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জালান বলেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা মন্ত্রিসভার। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’’ পরে অবশ্য তাঁকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলা হলে জানান, ‘‘আমার মূল বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী নয়। আমি জোর দিতে চাই নীতি নির্ধারণ ও তা কার্যকর করার বিষয়টিকে আলাদা করার উপরে। যেখানে সিদ্ধান্তগুলি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সরকার আর নাক গলাবে না।’’
আরও পড়ুন: বেকারত্ব বাড়ছে, বিরোধীদের সুরে সঙ্ঘ প্রধান, অস্বস্তিতে মোদী
জালানের দাবি, দেশের আর্থিক উন্নতির পথে এগোনোর সম্ভাবনা বিপুল। প্রযুক্তি, দক্ষ মানবসম্পদ, সঞ্চয় ইত্যাদির নিরিখে ভারত বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। কিন্তু মূলত রাজনৈতিক কারণে সেই সম্ভাবনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। তাঁর মতে, এ জন্যই স্বাধীনতার ৭১ বছর পরেও দেশের সিংহভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে। অথচ, ১৯৮০-র মধ্যে সকলকে দারিদ্রসীমার উপরে তুলে আনার কথা ছিল। তাঁর দাবি, যা অবস্থা, তাতে এই লক্ষ্য পূরণ করতে এখনও কম করে ১৫ বছর গড়াবে।
আরও পড়ুন: বোতলের আঘাত! গেরোয় কংগ্রেস
হালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বাড়তি ভাঁড়ারের ভাগ পাওয়া থেকে শুরু করে ঋণের জোগান বাড়ানো-সহ নানা বিষয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্কের উপরে চাপ তৈরির অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। এই প্রেক্ষিতে জালানের বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত অনেকের।