রিখটার স্কেলে মাত্রা ৪। সোমবার ভোরের এই ভূমিকম্প সাড়া ফেলে দিয়েছে দেশের রাজধানী দিল্লিতে। ভূমিকম্পের পর সমাজমাধ্যমে বার্তা দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লির বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি। তবে এখনও আতঙ্ক কাটছে না দিল্লিবাসীর। কিন্তু কেন বার বার ভূমিকম্প হয় দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায়? বিজ্ঞান কী বলছে?
ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই দিল্লিতে ভূমিকম্প অস্বাভাবিক কিছু নয়। ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এনডিএমএ)-র তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় ৫৯ শতাংশ এলাকায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে। সিসমিক জ়োনিং ম্যাপ অনুযায়ী, ভারতকে চারটি সিসমিক জ়োন বা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় বিভক্ত করা হয়ে থাকে। এগুলি হল যাথাক্রমে জ়োন ২, জ়োন ৩, জ়োন ৪ এবং জ়োন ৫। এই জ়োন বা অঞ্চলগুলির মধ্যে জ়োন ৫ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং জ়োন ২-এ ঝুঁকি সবচেয়ে কম। আর ভূকম্প প্রবণতার নিরিখে দেশের রাজধানী দিল্লি পড়ে জ়োন ৪-র আওতায়। ফলে মাঝে মাঝেই সেখানে ৫ থেকে ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও রিখটার স্কেলে ৭-৮ও ছুঁয়ে ফেলতে পারে কম্পনের তীব্রতা।
আরও পড়ুন:
সিসমিক জ়োনের মানচিত্র অনুযায়ী, জ়োন ৫-এর অধীনে পড়ে দেশের প্রায় ১১ শতাংশ ভূখণ্ড। তার মধ্যে গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশের কিছু কিছু এলাকা, বিহারের দ্বারভাঙা এবং উত্তরপূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও ভূমিকম্প প্রবণ। সেখানে কখনও কখনও রিখটার স্কেলে ৮-এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্প পর্যন্ত হতে পারে। জ়োন ৪-এর অধীনে রয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ ভূখণ্ড। জ়োন ৩-এ রয়েছে ৩০ শতাংশ ভূমি। আর বাকিটা রয়েছে জ়োন ২-এ।
ভূত্বকের বহিস্তরে বেশ কয়েকটি প্লেট রয়েছে। অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলা দিয়ে তৈরি এই প্লেটগুলিকে ‘টেকটনিক প্লেট’ বলা হয়। বড় এবং ছোট মিলিয়ে এ ধরনের মোট সাতটি প্লেট রয়েছে। এই প্লেটগুলি স্থির নয়, চলমান। অতি মন্থর গতিতে চলতে চলতে কখনও কখনও দু’টি প্লেটের সংঘর্ষ হয়। তখনই ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে উপরের ভূপৃষ্ঠ। যেমন, ইউরেশীয় প্লেটের সঙ্গে ভারতীয় প্লেটের সংঘর্ষে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল-সহ উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন:
দিল্লিতে ভূমিকম্প প্রতিরোধী নির্মাণের সংখ্যা কম। তা ছাড়া, রাজধানীতে জনঘনত্বও বেশি। এনডিএমএ বলছে, অপরিকল্পিত ভাবে নির্মাণকাজ চালানো এবং উচ্চ জনঘনত্বের কারণে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প হলে বড়সড় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে দিল্লিতে। কখনও ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে দিল্লির ৬ শতাংশেরও বেশি বাড়ি ধসে পড়তে পারে। ৮৫ শতাংশ বাড়িতে দেখা দিতে পারে ফাটল। অদূর ভবিষ্যতে এ নিয়ে সতর্ক হওয়ার বার্তাও দিয়েছে সে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর।
সোমবারের ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল দিল্লিতেই। দক্ষিণ দিল্লির ধৌলাকুঁয়ায় দুর্গাবাই দেশমুখ কলেজ অফ স্পেশ্যাল এডুকেশনের জমির ঠিক নীচে ভূমিকম্পের উৎসমুখ ছিল। মাটি থেকে তার গভীরতা মাত্র পাঁচ কিলোমিটার। ভোর ৫টা ৩৬ মিনিটে বেশ কয়েক সেকেন্ড কম্পন স্থায়ী হয়। উৎসস্থল অগভীর হওয়ার কারণে মাত্র ৪ মাত্রাতেই এত কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।