১৪তম প্রবাসী ভারতীয় দিবস-এর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার বেঙ্গালুরুতে। ছবি: পিটিআই
বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা চলছে তিনি জাতীয় রাজনীতিতে পা রাখার সময় থেকেই। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডিগ্রি সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ের পথ খুলে গেল কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন (সিআইসি)-এর রায়ে। কমিশনের নির্দেশ, ১৯৭৮ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যত জন বিএ পাশ করেছেন, তাঁদের রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখার অনুমতি দিতে হবে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী ওই বছরই স্নাতক হন মোদী। এর সত্যাসত্য জানতেই নীরজ ও মহম্মদ ইরশাদ নামে দু’জন তথ্য জানার অধিকার (আরটিআই) আইনে মোদীর স্নাতক ডিগ্রি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। দু’জনের আর্জিই খারিজ করে দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন সেই সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, অবাস্তব যুক্তি দেখিয়ে তথ্য না জানানোর জন্য ২৫ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন-তথ্য আধিকারিক (সিপিআইও) মীনাক্ষী সহায়কে। তথ্য কমিশনের নির্দেশ, সিপিআইও-র বেতন থেকেই দিতে হবে ওই টাকা।
কারও ব্যক্তিগত তথ্য তৃতীয় পক্ষকে দেওয়া যাবে না বলে যে যুক্তি সিপিআইও-র তরফে দেওয়া হয়েছিল, তা ঠিক নয় বলে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে। কারণ, ওই সময়ে পরীক্ষার ফল নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হতো। সংবাদপত্রেও প্রকাশ করা হতো। ফলে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা ‘পাবলিক ডোমেন’-এই রয়েছে। গোপন কিছু নয়। বর্তমানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি সংক্রান্ত তথ্যের ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষকে তা না জানানোর যুক্তি খারিজ করে দিয়েছে কমিশন। কারণ, কাউকে ডিগ্রি দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যেই ঘটে।
দিল্লির আইনজীবী মহম্মদ ইরশাদের আবেদনটি খারিজ হয় অদ্ভুত কারণে। তিনি আবেদনের সঙ্গে যে ১০ টাকার পোস্টাল অর্ডারটি দিয়েছিলেন, তাতে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অনুকূলে’ লেখা ছিল না। তাতেই আবেদন খারিজ করা হয়। শুরু হয় চিঠি চালাচালি। আবেদন গড়ায় দ্বিতীয় স্তরে। সেই বিষয়ে সাম্প্রতিক এক রায়ে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনার এম শ্রীধর আচারুলু কার্যত তুলোধোনা করেছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিপিআইও মীনাক্ষীকে।
আচারুলুর মতে, ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’র নতুন এক সংজ্ঞা হতে পারে এই ঘটনা। সামান্য অঙ্কের একটি পোস্টাল অর্ডার নিয়ে জট! তা নিয়েই পাহাড়-প্রমাণ নথি লেখা হল, তৈরি হল ফাইলের পর ফাইল। আইনি লড়াইয়ের জন্য দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ও খরচ করে ফেলল বিপুল টাকা! সরকারি অর্থ ও কর্মীদের মূল্যবান সময়ের এই বিপুল অপচয় অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
সিপিআইও মীনাক্ষী যুক্তি দিয়েছিলেন, আবেদন খারিজ করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের মধ্যে থেকেই যা করার করেছেন। কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন এই যু্ক্তিকে আদৌ সঙ্গত বলে মনে করেনি। কমিশনের মতে, আবেদন ফি নিয়ে জট আরটিআই আবেদন খারিজের কোনও যুক্তি হতে পারে না। তা ছাড়া, একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে সিপিআইও কোনও রকম সাড়া দেননি।
এ কারণে শুধু সিপিআইও-কে জরিমানা করাই নয়, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকার— নির্দিষ্ট কারও নাম না করে প্রশাসনের উদ্দেশে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন আচারুলু। তা হল, সংশ্লিষ্ট সকলেরই তথ্য জানার অধিকার আইনের ব্যাপারে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। যাতে আরটিআই আবেদন খারিজ করাটাকে তাঁরা রুটিন ব্যাপার করে না তোলেন। মগজটাও একটু খাটান। এবং সেই সঙ্গে প্রশাসন সংক্রান্ত আইনগুলি এবং আরটিআই আইন নিয়ে সর্বশেষ লেখা বইগুলিও পড়ে ফেলার পরামর্শ দেন আচারুলু।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার গত বছর বলেছিলেন, ‘‘আমরা রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখেছি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১৯৭৮ সালে এখান থেকে পরীক্ষা পাশ করেন। ১৯৭৯ সালে তাঁকে স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হয়।’’ নীরজ-ইরশাদদের এ বার আশা, কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের এই রায়ে কাগজে কলমে সেই তথ্য তাঁরা যাচাই করতে পারবেন। মোদীর ডিগ্রি নিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের নিরসন হবে এ বার। কমিশনের নির্দেশ, ১৯৭৮ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাঁরা বিএ পাশ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের নাম, রোল নম্বর, বাবার নাম, প্রাপ্ত নম্বর, ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের নির্যাসের ‘সাটিফায়েড কপি’ নিখরচায় জোগাতে হবে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়কে। সিপিআইও মীনাক্ষী জানিয়েছেন, ওই বছরে বিএ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২,০০,০০০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy