প্রতীকী ছবি।
মতে মিলছে না হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে হিজবুল মুজাহিদিনের। এমনকী, হিজবুল নেতৃত্বও একমত নয় তাদের সশস্ত্র কম্যান্ডারের সঙ্গে। কাশ্মীরে শান্তি ফেরাতে এই মতানৈক্যেরই ফায়দা তুলতে তৎপর এখন নয়াদিল্লি।
বুরহান ওয়ানির উত্তরসূরি জাকির মুসা গত কালই এক অডিও টেপে হুরিয়ত নেতাদের হুমকি দিয়েছিল, কাশ্মীরে তাদের লড়াই আসলে ইসলামি রাষ্ট্র তথা খিলাফত প্রতিষ্ঠার লড়াই। হুরিয়ত নেতারা একে রাজনৈতিক লড়াই আখ্যা দিলে তাঁরা যেন কোনও ইসলামি ধর্মস্থান বা প্রতীক ব্যবহার না করেন। কাশ্মীরের আন্দোলনকে খিলাফতের লড়াই বলে না মানলে শ্রীনগরের লালচকে ওই নেতাদের গলা কেটে হত্যা করা হবে।
মুসার হুমকিতে ভুল বার্তা যেতে পারে বুঝে দ্রুত মুখ খুলেছে হিজবুল। জঙ্গি গোষ্ঠীটির মুখপাত্র সেলিম হাশমি পাক অধিকৃত মুজফ্ফরাবাদ থেকে আজ বলে, ‘‘ওটা মুসার নিজস্ব মত। হিজবুলের নয়।’’ এরই পাল্টা মুসা আজ ঘোষণা করে, নিজের অবস্থানে সে অটল রয়েছে এবং হিজবুলের সংশ্রব ছিন্ন করছে। কারণ, নিছক একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সে তার জান কবুল করতে রাজি নয়। খিলাফতই তার লক্ষ্য। গত বছর সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে হিজবুল জঙ্গি কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পরে তার জায়গা নেয় এই জাকির মুসা। তার মতো এক কম্যান্ডারের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের এই বিরোধ দেখে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন, কাশ্মীর প্রশ্নে হিজবুল নেতৃত্বের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাকামী হুরিয়ত নেতারা এতে খানিকটা হলেও চাপে। ফলে এ বার তাঁদের আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা সম্ভব হতে পারে বলেই মনে করছে নর্থ ব্লক।
কাশ্মীরে বিক্ষোভকারীদের ভিড়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে আইএসের পতাকা দেখা গেলেও সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, উমর ফারুকের মতো হুরিয়ত নেতারা বলে এসেছেন, কাশ্মীরিদের লড়াইয়ের সঙ্গে আইএসের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি একটি রাজনৈতিক লড়াই। উপত্যকায় সংঘাত মেটাতে বরাবর ‘কাশ্মীরিয়ত’ তথা কাশ্মীরি সত্ত্বাকেই সামনে রাখা তথা গোটা কাশ্মীরের মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে চলার পক্ষেই সওয়াল করে এসেছে সব পক্ষ। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা স্বাধীনতা বা পাকিস্তানের সঙ্গে সংযুক্তির কথা বললেও, তাঁরা কখনওই একে ইসলামি সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত করেননি। মুসা সেই ‘কাশ্মীরিয়ত’কেই উপেক্ষা করে বলেছে, ‘‘আমরা কাশ্মীরে শরিয়তের শাসন প্রতিষ্ঠা করবই।’’ যা নিয়ে হিজবুল মুখপাত্রের মন্তব্য, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য গোটা আন্দোলনকে কবরে পাঠিয়ে দিতে পারে।’’
গোটা পর্বে দু’টি ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
এক, মুসার বক্তব্য খণ্ডন করা থেকে স্পষ্ট হিজবুল নেতৃত্বের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। তরুণ জঙ্গিরা আইএসের ধাঁচে খিলাফত প্রতিষ্ঠার পক্ষে। অন্য অংশ তাতে রাজি নয়। এই বিভেদকে কাজে লাগিয়েই হিজবুলের বিরুদ্ধে অভিযান তীব্র করতে চাইছে কেন্দ্র।
দুই, যে হুরিয়তপন্থীরা এত দিন আলোচনায় বসতে গররাজি ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ‘ট্র্যাক টু’ আলোচনা শুরু করার জন্য চাপ বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র। জম্মু-কাশ্মীরে দিনের পর দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসাপাতি বন্ধ করে রাখা বা স্কুল পোড়ানোর বিরুদ্ধে মুখ খোলার দাবি উঠলেও হুরিয়ত নেতারা সে পথে হাঁটেননি। ফলে উপত্যকায় ধীরে ধীরে তাঁরা যে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছেন, হুরিয়ত নেতারাও তা বুঝতে পারছেন। এখন মুসাদের মতো তরুণ প্রজন্ম যে ভাবে অস্ত্র হাতে খিলাফতের যুদ্ধে নামার হুমকি দিচ্ছে, বাড়ছে চরমপন্থীদের দাপট— তাতে আরও জমি খোয়াচ্ছেন হুরিয়ত নেতারা। হুরিয়তের ওই কোণঠাসা অবস্থাকেই কাজে লাগাতে চাইছে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy