Advertisement
E-Paper

নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ‘ছুরি দিয়ে গলা কেটে নেওয়ার’ সমান: মনমোহন

নোট বাতিলের ধাক্কা নিয়ে আর দু’দিন পরেই বড় আন্দোলনের ঘোষণা করতে চলেছেন রাহুল গাঁধী। তার আগে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ফের তোপ দাগলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বললেন, যতই অন্য প্রচার করা হোক, নোট বাতিলে বড় ক্ষতি হবে অর্থনীতির। পাল্টা যুক্তি দিয়ে আসরে নেমেছেন মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি। তাঁর দাবি, কর আদায়ের হিসেবই বলে দিচ্ছে, নোট বাতিলের বিরূপ প্রভাব পড়েনি অর্থনীতিতে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৪

নোট বাতিলের ধাক্কা নিয়ে আর দু’দিন পরেই বড় আন্দোলনের ঘোষণা করতে চলেছেন রাহুল গাঁধী। তার আগে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ফের তোপ দাগলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বললেন, যতই অন্য প্রচার করা হোক, নোট বাতিলে বড় ক্ষতি হবে অর্থনীতির। পাল্টা যুক্তি দিয়ে আসরে নেমেছেন মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলি। তাঁর দাবি, কর আদায়ের হিসেবই বলে দিচ্ছে, নোট বাতিলের বিরূপ প্রভাব পড়েনি অর্থনীতিতে।

নরেন্দ্র মোদীকে চারপাশ থেকে কোণঠাসা করতে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন রাহুল। ক’দিন আগেই দলের নেতাদের গোপন বৈঠকে রাহুল জানিয়েছেন, মনমোহন সিংহ তাঁকে বলেছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ‘ছুরি দিয়ে গলা কেটে নেওয়ার’ সমান। মনমোহনের মতো বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদকে দিয়ে সংসদেও দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। মনমোহন আজ বলেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশের অর্থনীতিতে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসতে চলেছে। তাঁর মতে, আগাম অনুমান অনুযায়ী এই অর্থবর্ষে এমনিতেই বৃদ্ধির হার ৭.৬ থেকে কমে ৭.১ শতাংশ হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে। এর মধ্যে নোট বাতিলের ধাক্কার হিসেব করা হয়নি। সেটি হলে দেখা যাবে বৃদ্ধির হারে আরও নেতিবাচক প্রভাব অপেক্ষা করে রয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মতে, নোট বাতিলে কোনও ক্ষতি হবে না— এমন কথা যতই প্রচার করা হোক, আসল ছবিটা হবে উল্টো। বৃদ্ধি ও জাতীয় আয়ের ক্ষেত্রে এই ক্ষতির প্রভাব বিরাট ভাবে পড়বে।

নোট নাকচের অনুমান বাদ দিয়েই গত অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব দেখে পরিসংখ্যান মন্ত্রক দু’দিন আগে জানিয়েছিল, আর্থিক বৃদ্ধি এ বার কম হচ্ছে। নোট বাতিলের ধাক্কা জুড়লে তা আরও কমতে পারে। এই নিয়ে অর্থনীতির মনোবলে যেমন ছাপ পড়েছে, তেমনই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির হাতেও উঠে এসেছে নতুন অস্ত্র। এই পরিস্থিতি সামাল দিতেই আজ কর আদায়ের পাল্টা হিসেব নিয়ে সামনে আসেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাঁর মতে, নোট বাতিলে সব থেকে প্রভাব পড়ার কথা ডিসেম্বর মাসে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই ডিসেম্বরে কর আদায় অনেক বেড়েছে। এই অঙ্ক গত আর্থিক বছরের ডিসেম্বর কিংবা এ বছরের নভেম্বরের থেকেও বেশি। জেটলির দাবি, নোট বাতিলে উৎপাদন ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব পড়েনি।

অর্থমন্ত্রী জানান, এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রথম তিনটি ত্রৈমাসিকে প্রত্যক্ষ কর আদায় বেড়েছে ১২.০১ শতাংশ হারে। পরোক্ষ কর আদায় বেড়েছে ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় উৎপাদন শুল্ক বেড়েছে ৪৩%, পরিষেবা কর ২৩.৯%, আর আমদানি শুল্ক ৪.১%। অর্থমন্ত্রীর যুক্তি, গত অর্থবর্ষের ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবর্ষের ডিসেম্বরে মূলত সোনার আমদানি কমার জন্য উৎপাদন শুল্ক কমেছে ৬ শতাংশ। কিন্তু এই একই সময় উৎপাদন শুল্কে বৃদ্ধি ৩১.৬%, পরিষেবা কর বৃদ্ধি ১২.৪%। এমনকী চলতি অর্থবর্ষে নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে পরোক্ষ কর বেড়েছে ১২.৮%। বিরোধীদের মতে, শুধু কর আদায়ের ভিত্তি দেখিয়ে যদি দাবি করা হয়, অর্থনীতিতে নোট বাতিলের কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না— সেই দাবি অনর্থক।

কেননা, আর্থিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র একটি মাসে কর আদায় বেড়েছে কিনা, তা দেখে শিল্প বা অর্থনীতির নাড়ির গতির আন্দাজ পাওয়া শক্ত। তার জন্য অন্য মাসগুলির পরিসংখ্যানে নজর রাখা জরুরি। জেটলির দাবি, উৎপাদন শুল্ক আদায় বেড়েছে মানে তা কল কারখানায় উৎপাদন বাড়ায় ইঙ্গিতবাহী। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, আর শিল্পমহল কর দিয়েছে কিনা, সেটা উৎপাদন বৃদ্ধির মাপকাঠি হতে পারে না। শিল্পের বিকাশ কতটা হয়েছে, সেটাই দেখা উচিত।

নোট বাতিলের আসল ধাক্কা কতটা, কী ভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা জানার জন্য সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি আগামী ২০ জানুয়ারি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলকে ডেকে পাঠিয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেস নেতা ভি কে টমাস জানিয়েছেন, কমিটিতে ঐকমত্য হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও ডাকা হবে। কিন্তু বিজেপি সূত্রের দাবি, কোনও ভাবেই এটা সম্ভব হবে না। কারণ, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে শাসক দলের শক্তিই বেশি। ফলে প্রধানমন্ত্রীকে ডাকার ব্যাপারে ঐকমত্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মতে, কী ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তড়িঘড়ি নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল, তা নিয়ে রহস্য আছে। ১৪ জনের বোর্ডে মাত্র ৩ জন হাজির ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর চাপেই কোনও পরিকাঠামো ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেটি জনতার জানা উচিত। তাঁর মন্তব্য, ‘‘মনমোহন সিংহ আগেই জানিয়েছেন, নোট বাতিলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ২ শতাংশ কমতে পারে। আর ১ শতাংশ কমলেই দেশের দেড় লক্ষ কোটি টাকার লোকসান।’’

আজ বর্ধমানে ‘মাটি উৎসবে’র মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ করে তোপ দাগেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, ‘‘চেম্বারগুলো (বণিকসভা) কেন চুপ, বুঝতে পারছি না। ভয় পাচ্ছেন, কীসের ভয়? জেলে পুরবে? কত জনকে জেলে পুরবে! আমাদের গ্রেফতার করুন আর নতুন নতুন জেল তৈরি করুন। মানুষ খেতে না পেলে আমি বলব না তো কে বলবে?’’

Manmohan Singh GDP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy