দেরি হলেও এত দিন কোনও মতে চলছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কিন্তু সেই খোঁড়া পা ফের জখম হয়ে গেল বুধবার। আর তার জেরে বন্ধ হয়ে গেল হাঁটাচলা।
কুয়াশার দাপটে এ বার উত্তর ভারতের ট্রেনগুলি সময়সূচি মেনে চলতে পারছে না ডিসেম্বর জুড়েই। আর বুধবার ভোরে কানপুরের কাছে ট্রেন-দুর্ঘটনার জেরে ওই শাখায় ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। পরিস্থিতি সামল দিতে বিকল্প পথে ট্রেন চালানো শুরু হল বটে, কিন্তু তার আগেই বাতিল করতে হয়েছে দূরপাল্লার চার-চারটি ট্রেন। তার মধ্যে রয়েছে ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসও। ওই সব ট্রেনের যাত্রীদের কেউ কেউ অন্য ট্রেনের জন্য দিনভর ছোটাছুটি করলেন। কোনও ভাবে যদি গন্তব্যে পৌঁছনোর বিকল্প ট্রেন মেলে! কিন্তু দৌড়োদৌড়িই সার। দিশাহারা ওই সব যাত্রী কখন এবং কী ভাবে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন, সেই বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি রেল।
কুয়াশা তো গেড়ে বসেছেই। তার উপরে ট্রেন চলাচলে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে এ দিনের দুর্ঘটনা। কুয়াশার দাপটে মঙ্গলবারেও দিল্লি থেকে অনেক ট্রেন ছেড়েছিল নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে। বুধবার সেই সব ট্রেন হাওড়ায় পৌঁছয় অনেক দেরি করে। দফায় দফায় দেরির জন্য ফিরতি পথে হাওড়া থেকে ওই সব ট্রেন ছাড়ার সময় পরিবর্তন করে দিয়েছিল রেল। কানপুরের ট্রেন দুর্ঘটনার জেরে সেই পরিবর্তিত সময়ও ফের পরিবর্তন করতে হয় কয়েকটি ক্ষেত্রে। ভুবনেশ্বর, হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে উত্তর ভারতগামী আটটি ট্রেনের সময়সূচি বদলে ফেলা হয়। সেগুলি বিকল্প পথে দিল্লি যাবে। তাতে অনেক ক্ষেত্রে সময়ও লাগবে বেশি।
অন্যান্য জোনে আবার অন্যতর সমস্যা। যেমন, রেক দেরিতে পৌঁছনোয় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের গুয়াহাটি ও ডিব্রুগড় স্টেশন থেকে ছাড়া বেশ কিছু ট্রেনেরও সময় পরিবর্তন করতে হয়েছে।
নানান ঝামেলায় ট্রেনের সময় বদলানো হয়নি হামেশাই। পরিবর্তিত সময়সূচির ট্রেনগুলিতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা যাঁদের রয়েছে, তাঁরা জানেন, এ-সব ক্ষেত্রে ভোগান্তি কতটা তুঙ্গে ওঠে! এমনিতেই ট্রেনে খাবারদাবারের মান নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই। তার মধ্যে মাঝপথে ৮-১০ ঘণ্টার বেশি আটকে থাকায় ট্রেনগুলিতে অতিরিক্ত খাবার দিতে হচ্ছে রেলকে। আর তখনই শুরু হয়ে যাচ্ছে গোলমাল। যাত্রীদের বক্তব্য, খাবার তো দূর অস্ত্, এক বারের বেশি দু’বার চা পরিবেশন করতেও কালঘাম ছুটে যাচ্ছে খাবার সরবরাহকারীদের। অনেক সময় মিলছে না পানীয় জলটুকুও। সময় মেনে ট্রেন চালানোটা এখন প্রায় অলীক ব্যাপার। দেরির আশঙ্কা ষোলো আনা জেনেও রেল-কর্তৃপক্ষ কেন বাড়তি খাদ্য ও জলের ব্যবস্থা করবেন না কেন, উঠছে সেই প্রশ্ন।
এ দিন হাওড়া স্টেশনে সোদপুরের অমিতাভ নাথ, বৈদ্যবাটীর জয়ন্ত দে-রা ভিড় করেছিলেন অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে। ওঁদের কেউ কানপুরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতে ছিলেন না। ওঁরা আসলে সময় পিছিয়ে যাওয়া ট্রেনের যাত্রী। পরিবর্তিত সময়ের ট্রেন পথে কত দেরি করতে পারে, রেলকর্মীদের কাছ থেকে সেটাই জেনে নিতে চাইছিলেন অমিতাভবাবুরা।
অনুসন্ধান কেন্দ্রের সামনে জমাট ভিড়ের একটি অংশ অবশ্য দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনের যাত্রীদের পরিজন। তাঁরা এসেছেন আত্মীয়স্বজনের খোঁজ নিতে। পূর্ব রেলের তরফে হাওড়া স্টেশনে একটি এবং শিয়ালদহ স্টেশনে চারটি হেল্প ডেস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ দিন দুপুরে শিয়ালদহ হেল্প ডেস্কে এসেছিলেন সোদপুরের শান্তনু দাস। তাঁর বাবা স্বপন দাস এবং মা সরস্বতী দাস দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটির যাত্রী ছিলেন। হেল্প ডেস্কের দ্বারস্থ হয়ে বাবা-মায়ের খবর পেয়েছেন শান্তনুবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বাবা-মা সামান্য চোট পেয়েছেন। ওঁদের বিপদ কেটে গিয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানালেন রেল-কর্তৃপক্ষ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy