প্রতীকী ছবি।
ভুটানের আপত্তিতে আপাতত থমকে গিয়েছে চতুর্দেশীয় অবাধ সড়ক পরিবহণ চুক্তির বাস্তবায়ন। কিন্তু তাতে দমছে না ভারত। ভুটানকে বাদ রেখে প্রয়োজনে ধাপে ধাপে চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে নয়াদিল্লি।
সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে ‘ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ভারত-বাংলাদেশ বহুমাত্রিক উন্নয়ন বিষয়ক এক আলোচনায় তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা।
ভুটান আপাতত যোগ না-দিলেও বাংলাদেশ-ভুটান-ইন্ডিয়া-নেপাল (বিবিআইএন) অবাধ স়ড়ক পরিবহণের জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে যান চলাচল চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়ে দিলেন বিদেশ মন্ত্রকের যুগ্মসচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন। মন্ত্রকের তরফে তিনিই বাংলাদেশ এবং মায়ানমার সংক্রান্ত বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত। আলোচনার প্রারম্ভিক ভাষণে তিনি বলেন, ‘‘বিবিআইএন চুক্তি ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনে ধাপে ধাপে এর বাস্তবায়ন করা হবে। যখন সব দেশের আইনসভা এই চুক্তিকে অনুমোদন দেবে, তখনই চূড়ান্ত ভাবে এগোতে তৈরি ভারত। এর মধ্যেই পণ্য পরিবহণের পরীক্ষামূলক কাজটি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’
পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহণের কারণ ব্যাখ্যাও করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যত দিনে সব চূড়ান্ত হবে, তার মধ্যে পরিবহণে কোথায় কী কী সমস্যা হচ্ছে তা বুঝে নেওয়া দরকার। প্রয়োজন মতো তা সংশোধন করে নেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, বিবিআইএন চুক্তি মেনেই ২০১৬ এর অক্টোবরে প্রথম ঢাকা থেকে দিল্লিতে পণ্য পৌঁছেছে। সেই ব্যবস্থা জারি রাখার পক্ষে ভারত।
২০১৪ সালের সার্ক শীর্ষ বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়াতে চার দেশের মধ্যে অবাধ সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তাব নেওয়া হয়। পরের বছর চুক্তি করে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপাল। তাতে এক দিকে পারাদ্বীপ এবং কলকাতা-হলদিয়া বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে সোজা তা সড়ক পথে চলে যেতে পারবে ঢাকা পর্যন্ত। একই ভাবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে সরাসরি ট্রাক-কনটেনার চলে আসতে পারবে নেপাল-ভুটানে। সড়ক পথে ভিন দেশের মাটি ব্যবহার করলেও যাতায়াত হবে অবাধ। চার দেশ সই করলেও হঠাৎই ভুটানের সংসদের উচ্চকক্ষ এই চুক্তির বিরোধিতা করে বসে। ফলে এ বছরের প্রথম দিনে বিবিআইএন চুক্তি কার্যকর করার কথা থাকলেও তা করা যায়নি। এ ঘটনাকে ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতির সব চেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেই কারণেই ভারত যে কোনও মূল্যে অবাধ সড়ক পরিবহণের জন্য পদক্ষেপ করছে।
বিদেশ মন্ত্রকের খবর, বিবিআইএন-কে সামনে রেখেই ভারত বাংলাদেশের শিলেট এবং খুলনাতে নতুন দু’টি উপদূতাবাস খুলছে। বাংলাদেশও গুয়াহাটিতে খুলছে তাদের নতুন উপদূতাবাস। ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা চেকপোস্টটিও খোলা হচ্ছে অবাধ পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যেই। ইতিমধ্যেই ভারতের উত্তর-পূর্বে পণ্য নিয়ে যেতে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার শুরু করেছে ভারত। সড়কপথে আখাউড়া-আগরতলা পথে পণ্য পরিবহণও শুরু হয়েছে।
পণ্য পরিবহণে গতি আনতে ভারত ফেনি নদীর উপর সেতুও নির্মাণ করে দিচ্ছে। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে যে ছ’টি রেলপথ দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, সেগুলিও ফের চালু করার কথা ভাবা হয়েছে বলে জানান বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা। এর মধ্যে দর্শনা-গেদে, রাধিকাপুর-বিরোল, সিংহবাদ-রোহনপুর, পেট্রাপোল-বেনাপোল রেলপথে পণ্য পরিবহণ চলছে। মেঘালয়ের ডাউকি চেকপোস্টের আধুনিকীকরণও শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার।
বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে এত বিপুল বিনিয়োগের পর অবাধ পরিবহণ ব্যবস্থা শুরু না-হলে ভারতের প্রভূত ক্ষতি হবে। সেই কারণে ভুটানের আপত্তিকে সম্মান জানিয়েও বাংলাদেশ এবং নেপালকে নিয়ে ভারত অবাধ পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা চালুর প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বলে জানাচ্ছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা।
ভারত এখন বাংলাদেশে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি পণ্য রফতানি করে। অবাধ যাতায়াত হলে পণ্য পরিবহণের খরচ ৭-১০ শতাংশ কমে যাবে। ফলে রফতানির অঙ্কও বাড়বে। গত বছর ঢাকা গিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রায় ১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী— যা মূলত সড়ক, বন্দর, বিদ্যুতের মতো পরিকাঠামো ক্ষেত্রে খরচ করার কথা। বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, এই প্রতিশ্রুতিও বিবিআইএন-এর কথা মাথায় রেখেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy