E-Paper

দিগ্বিজয়-বাক্যে কংগ্রেস দ্বিখণ্ডিত

প্রথমত, শনিবার কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এবং তার আগে তিনি দলের সংগঠন নিয়ে যে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন, তাকে সাধুবাদ জানানো। দ্বিতীয়ত, আরএসএসের সংগঠনের সঙ্গে কংগ্রেসের তুলনা টানাকে কটাক্ষ করা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৪১
দিগ্বিজয় সিংহ।

দিগ্বিজয় সিংহ। — ফাইল চিত্র।

রবিবারের সকাল। কংগ্রেসের একশো চল্লিশতম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে দলের সদর দফতরে অনুষ্ঠান। সেখানে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে দেখা হল দিগ্বিজয় সিংহের। রাহুল রসিকতার সুরে বললেন, ‘‘আপনি তো আপনার কাজ গত কাল করে দিয়েছেন।’’

রাহুল গান্ধীর ওই মন্তব্যকে কংগ্রেসের নেতারা দু’ভাবে দেখছেন। প্রথমত, শনিবার কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এবং তার আগে তিনি দলের সংগঠন নিয়ে যে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন, তাকে সাধুবাদ জানানো। দ্বিতীয়ত, আরএসএসের সংগঠনের সঙ্গে কংগ্রেসের তুলনা টানাকে কটাক্ষ করা। শনিবার দিগ্বিজয় সিংহ বলেছিলেন, বিজেপি-আরএসএসে সাধারণ কর্মকর্তারা নেতাদের পায়ের সামনে মেঝেতে পাতা আসন থেকে উঠে মুখ্যমন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। উদাহরণ হিসাবে লালকৃষ্ণ আডবাণী ও নরেন্দ্র মোদীর পুরনো ছবি তুলে ধরেছিলেন দিগ্বিজয়।

ওই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস আজ তার প্রতিষ্ঠা দিবসে আড়াআড়ি ভাবে দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে। দলের লোকসভার সচেতক মাণিকম টেগোর, জনসংযোগ বিভাগের চেয়ারম্যান পবন খেরা মনে করছেন যে, সঙ্ঘের মতো বিভাজনকারী শক্তি থেকে কংগ্রেসের কিছু শেখার নেই। আজ পবন যুক্তি দিয়েছেন, মহাত্মা গান্ধী যে কংগ্রেসের সংগঠন তৈরি করেছিলেন, আরএসএসের থেকে তার কী শেখার আছে? মাণিকম টেগোর আরএসএসের সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী আল কায়দার তুলনা টেনে প্রশ্ন করেছেন, ঘৃণার ভিত্তিতে তৈরি সংগঠন থেকে কী শিক্ষণীয় হতে পারে! দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও বলেছেন, যারা মনে করছেন কংগ্রেস শেষ হয়ে গিয়েছে তাঁদের জানা উচিত দল ক্ষমতায় না থাকলেও, আমাদের মেরুদণ্ড এখনও সোজা রয়েছে। কংগ্রেস দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে আর বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করে।

অন্য দিকে শশী তারুর, সলমন খুরশিদ, টি এস সিংহদেও-এর মতো নেতাদের বক্তব্য হল, সাংগঠনিক দিক থেকে অন্য সংগঠন থেকে শেখার থাকতেই পারে। শশীর মত হল, কংগ্রেসের সংগঠন মজবুত করা প্রয়োজন। দলের একশো চল্লিশ বছরের ইতিহাস রয়েছে। তিনি সেই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার উপরেও জোর দিয়েছেন। সলমন খুরশিদ, টি এস সিংহদেও-এর মতে, অন্য দলের সংগঠন ভাল কাজ করলে তা থেকে শিক্ষা নেওয়াই যায়। আর অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপি ওই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে রাহুল গান্ধীকে নিশানা করেছে। অমিত শাহ বলেছেন, ‘‘রাহুল গান্ধীকে বোঝানো কঠিন।’’ বাকি বিজেপি নেতারা ফের রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন।

দিগ্বিজয় আজ নিজের কথার ব্যাখ্যায় বলেছেন, কংগ্রেসের মধ্যে কোনও মতবিরোধ নেই। গোটা দল ঐক্যবদ্ধ। কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে তাঁর যুক্তি, ‘‘রাহুল গান্ধী নিজেই সংগঠন মজবুত করার কাজ শুরু করেছেন। জেলা স্তর থেকে সেই কাজ তৃণমূল স্তরে নিয়ে যাওয়া হবে। দ্রুত ওই কাজ শেষ হবে।’’ বিজেপি গান্ধী পরিবারের মধ্যে ফাটল তুলে ধরার চেষ্টা করছে বলে তিনি বিজেপির নিন্দাও করেছেন।

দিগ্বিজয় সিংহ শনিবার আরএসএসের সংগঠন থেকে কংগ্রেস শিক্ষা নিতে পারে— এ কথা বলার পাশাপাশি দলের মধ্যে বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়োজন রয়েছে বলেও যুক্তি দিয়েছিলেন। কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, দিগ্বিজয় আসলে রাহুল গান্ধীকে বার্তা দিয়ে রাহুলের আস্থাভাজন তথা কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপালের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। দিগ্বিজয়ের নিজের রাজ্য মধ্যপ্রদেশে দলের কাজকর্ম তিনি অসন্তোষ জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি কংগ্রেসের একাধিক নেতা মনে করছেন— দিগ্বিজয় যা বলেছেন, তাতে বিজেপি সম্প্রতি কংগ্রেসের মধ্যে রাহুল গোষ্ঠী বনাম প্রিয়ঙ্কা গোষ্ঠীর লড়াই চলছে বলে যে অপপ্রচার চালিয়েছিল, তা আরও ইন্ধন পেল। দিগ্বিজয় এক সময়ে রাহুলের ‘মেন্টর’ ছিলেন। এখন তাঁর কথা শুনে মনে হচ্ছে, তিনি যেন একের পর এক নির্বাচনী হারের পরে ‘রাহুল হটাও প্রিয়ঙ্কা লাও’ অভিযানে নেমেছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Digvijay Singh Rahul Gandhi Congress

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy