ছবি: সংগৃহীত।
দেশভক্তির প্রমাণ দিতে গিয়ে সেনাবাহিনীকে যে ভাবে রাজনীতির অঙ্গ করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে, তার নিন্দা শুরু করলেন সেনাকর্তারাই। বলিউডি ছবি ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর মুক্তির জন্য সেনা কল্যাণ তহবিলে ৫ কোটি টাকা দেওয়ার যে শর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা, তার তীব্র বিরোধিতা করলেন বর্তমান ও প্রাক্তন সেনা আধিকারিকরা। নিজেদের রাজনৈতিক লাভের জন্য সেনাকে ব্যবহার করবেন না, এমএনএস-কে পরামর্শ সেনাকর্তাদের।
কর্ণ জোহরের ছবি ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এ পাক অভিনেতা ফওয়াদ খান অভিনয় করেছেন বলে সে ছবিটির মুক্তি আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল রাজ ঠাকরের দল এমএনএস। পরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসের মধ্যস্থতায় ছবিটির নির্মাতা এবং এমএনএস নেতৃত্বের মধ্যে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে রাজ ঠাকরে ছবির মুক্তিতে বাধা না দেওয়ার জন্য তিনটি শর্ত দেন। সেই শর্তগুলির অন্যতম হল, সেনা কল্যাণ তহবিলে ৫ কোটি টাকা জমা দেওয়া। সব শর্তই মেনে নেন কর্ণ জোহর। রাজ ঠাকরে তার পর জানান, ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর মুক্তিতে তাঁর দল বাধা দেবে না।
এমএনএস-এর দেওয়া এই শর্ত কর্ণ জোহররা মেনে নিলেও, দেশের সশস্ত্র বাহিনী কিন্তু বিষয়টিকে একেবারেই ভাল চোখে দেখছে না। রবিবার এক পদস্থ সেনাকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘সমস্ত দানই (সেনা কল্যাণ তহবিলে) স্বেচ্ছায় হওয়া উচিত। তোলাবাজি বরদাস্ত করা হবে না। বলপূর্বক কাউকে দিয়ে দান করানো হোক, তা আমরা চাই না, মানুষ চাইলে স্বেচ্ছায় দেবেন।’’ আর এক পদস্থ সেনাকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘সেনা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক। বাহিনীকে রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো অত্যন্ত ভুল কাজ।’’ এমএনএস-এর দেওয়া শর্ত প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আটা হাসনৈন স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘আমরা কখনোই এটাকে সমর্থন করব না।’’ বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্তা এয়ার ভাইস মার্শাল মনমোহন বাহাদুর টুইটারে কড়া মন্তব্য করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে নির্বাচনী উচ্চাকাঙ্খা পূরণের সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করা যায় না এবং তা উচিতও নয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, সাম্প্রতিক অতীতে এটাই প্রবণতা। অনুগ্রহ করে দূরে থাকুন।’’
আরও পড়ুন: টাকা আর মুচলেকায় ‘রফা’, ইতি মুশকিল
রাজ ঠাকরের দেওয়া শর্ত মেনে নিয়ে কর্ণ জোহররা যদি সেনা কল্যাণ তহবিলে ৫ কোটি টাকা দেনও, তা হলেও সেনা সে টাকা নেবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। সেনা সূত্রের খবর, দান কোথা থেকে আসছে এবং কী ভাবে আসছে, তা যাচাই করে তবেই দান গ্রহণ করা হয়। সুতরাং, জোর করে কাউকে দিয়ে সেনা কল্যাণ তহবিলে অর্থসাহায্য দেওয়ানোর চেষ্টা হলে, তা প্রত্যাখ্যান করার অধিকারও সেনার রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy