E-Paper

ভোটার কার্ডে একই নম্বর মানেই ভুয়ো নয়: কমিশন

মহারাষ্ট্র, দিল্লির পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ভোটার তালিকায় ‘ভূতুড়ে’ ভোটারদের নাম ঢোকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২৫ ০৬:০৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

একই নম্বরের ভোটার আইডি কার্ড বা সচিত্র পরিচয়পত্র একাধিক রাজ্যে রয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন মেনে নিল। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের কোনও ভোটারের ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর ও হরিয়ানার কোনও ভোটারের ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর মিলে যেতেই পারে। যদিও নির্বাচন কমিশনের দাবি, একই নম্বরের ভোটার আইডি কার্ড থাকার অর্থ ‘ভুয়ো’ ভোটার নয়। ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর এক হওয়ায় এক রাজ্যের ভোটারের অন্য রাজ্যে ভোট দেওয়াও সম্ভব নয়।

মহারাষ্ট্র, দিল্লির পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ভোটার তালিকায় ‘ভূতুড়ে’ ভোটারদের নাম ঢোকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রত্যেক ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্র বা ভোটার কার্ডে যাতে অভিন্ন নম্বরই থাকে, তা নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচন কমিশন রবিবার বিবৃতি দিয়ে এই কথা জানানোর পরে তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে, এর ফলে মমতার তোলা অভিযোগ ‘মান্যতা’পেল। ‘চক্রান্ত’ ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরে কেন্দ্রের নির্বাচন কমিশন এখন ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ নামছে বলেও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি।

যদিও বাংলায় বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়ের দাবি, সচিত্র পরিচয়পত্রের উদাহরণ দিয়ে যে কারচুপির অভিযোগ মমতা করেছিলেন, কমিশন তা খারিজ করে দিয়েছে। বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, আগামী ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে হারের আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ভোটার তালিকায় কারচুপির ‘মিথ্যে অভিযোগ’ তুলেছিলেন। যাতে নির্বাচনী ব্যবস্থায় মানুষের আস্থা নড়ে যায়। কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে, একই সংখ্যায় একাধিক ভোটার আইডি কার্ড থাকলেও সেখানে ‘ভুয়ো’ ভোটারের প্রশ্ন নেই। ভোটাররা শুধু নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রেই ভোট দিতে পারবেন।

কয়েক দিন আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সভায় মমতা অভিযোগ তুলেছিলেন, রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় রাজ্যের ভোটারদের নামের জায়গায় হরিয়ানা, গুজরাত, পঞ্জাবের বাসিন্দাদের নাম ভোটার হিসেবে নথিবদ্ধ করা হচ্ছে। এর পিছনে বিজেপি, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার দিকে আঙুল তুলে মমতা দাবি করেছিলেন, বিজেপি ঠিক এই ভাবেই মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে বিরোধীদের হারিয়েছে। এর পরে গোটা রাজ্যে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ভোটার তালিকা ধরে সমীক্ষার (স্ক্রুটিনি) কর্মসূচিতে নেমেছেন। তৃণমূল নেত্রী উদাহরণ দিয়েছিলেন, মুর্শিদাবাদের মতো জেলার ভোটারের সঙ্গে হরিয়ানার হিসার জেলার ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্রের নম্বর মিলে যাচ্ছে। কমিশনের এই সচিত্র পরিচয়পত্র বা ‘ইলেটকর’স ফোটো আইডেন্টিটি কার্ড’-এ দশ অঙ্কের অভিন্ন সংখ্যা থাকার কথা। একই নম্বর একাধিক ভোটার আইডি কার্ডে থাকার কথা নয়। কিন্তু একই সংখ্যা তিনটি ভোটার আইডি কার্ডে মিলেছে, এমনও রয়েছে। যার মধ্যে একটি কার্ড মুর্শিদাবাদের ভোটারের। অন্য কার্ডটি হরিয়ানার এক ভোটারের। কিন্তু সেই ভোটারের নামে মুর্শিদাবাদের ঠিকানার তৃতীয় একটি ভোটার কার্ডও রয়েছে!

কমিশন জানিয়েছে, এই বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। কিছু ভোটারের আইডি কার্ডের নম্বর এক হতে পারে। তবে নাম, ধাম, বিধানসভা কেন্দ্র, ভোটগ্রহণ কেন্দ্র আলাদা হবে। ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর যা-ই হোক না কেন, ভোটারেরা শুধু নিজের কেন্দ্রে ভোট দিতে পারেন। কমিশনের যুক্তি, ভোটার তালিকা ব্যবস্থাপনার জন্য তারা এখন ‘এরোনেট’ নামের একটি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থা তৈরি করেছে। তার আগে রাজ্যে রাজ্যে আলাদা আলাদা ভাবে, কোনও যান্ত্রিক নিয়ম না মেনে ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর দেওয়া হত। ফলে, কিছু রাজ্য একই সিরিজের সংখ্যা ব্যবহার করে থাকতে পারে। তাতে বিভিন্ন জায়গায় একই সংখ্যার ভোটার আইডি কার্ড বিলি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে এই বিষয়ে বিভ্রান্তি দূর করতে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভোটারদের আইডি কার্ডে ভিন্ন সংখ্যা থাকবে। কোথাও একই নম্বর থাকলে তা সংশোধন করা হবে।

কমিশন এই দাবি করলেও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, “আমরা ওদের কথায় বিশ্বাস বা নির্ভর করব না। দলনেত্রীর নির্দেশ মতো ভোটার তালিকার বুথভিত্তিক, ঠিকানাভিত্তিক স্ক্রুটিনি পুরোপুরি চলবে। কমিশনের দাবিতে সন্তুষ্ট হওয়ার কারণ নেই। মহারাষ্ট্র, দিল্লির চক্রান্ত বাংলায় চলবে না। আমাদের কাজ প্রতি বুথে, প্রতি ঠিকানায় ভোটার তালিকা মিলিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।”

রাজ্যে অবশ্য ‘ভুতুড়ে’ ভোটার নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। বিজেপি এ দিন কমিশনের কাছে দাবি করেছে, রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে বেআইনি বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের নাম সরানো হোক। আবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘একই নম্বরে নাকি একাধিক ভোটার কার্ড আছে! পরিচয়পত্রের নম্বর তো আলাদা হওয়ার কথা। হরিয়ানা বা মহারাষ্ট্রে যা হয়েছে, তার জবাবই কী হবে?’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘এক নম্বরে না হয় একাধিক ভোটার কার্ড থাকল। কিন্তু একই বাবার নামের পরিচয়ে ৫০ বা ৭০ জন ভোটার তালিকায় থাকতে পারে কি? এখানে চম্পাহাটি-সহ কিছু জায়গায় সে সবও আছে!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Voter Card

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy