Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Enforcement Directorate

Enforcement Directorate: আর্থিক নয়ছয়ের একটা অংশ ঘটেছে দিল্লিতেই, বেআইনি কয়লা পাচার কাণ্ডে দাবি ইডি-র

আর্থিক নয়ছয়ের ক্ষেত্রে এই সীমারেখা খাটে না। কারণ বিদেশেও এর ডালপালা ছড়িয়ে রয়েছে।’’ এই কারণেই অভিষেক-রুজিরাকে দিল্লিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা একেবারেই নিয়ম বহির্ভূত নয় বলে ইডি সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দেবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২২ ০৬:১৮
Share: Save:

বেআইনি কয়লা পাচার থেকে আয়ের ১৬৮ কোটি টাকা দিল্লি ও ভারতের বাইরে পাঠানো হয়েছিল বলে ইডি-র অভিযোগ। কয়লা পাচারের আর্থিক নয়ছয়ের একটা অংশ তাই দিল্লিতেই ঘটেছে বলে তাদের দাবি। ‘বাকিটা হয়েছে বিদেশে’। কেন বারবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হচ্ছে, তার যুক্তি হিসেবে এই বক্তব্যই পেশ করতে চলেছে ইডি।

ইডি-র তরফে বারংবার দিল্লিতে সমন পাঠানোর বিরুদ্ধে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী রুজিরা সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছেন। আগামী সপ্তাহে এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা। সেই মামলাতে কয়লা পাচারের সঙ্গে ‘দিল্লি-যোগের’ কথা উল্লেখ করে ইডি বলতে চায়, দিল্লিতে সদর দফতরে অবস্থিত তদন্তকারী শাখা বা ‘হেডকোয়ার্টার্স ইনভেস্টিগেশন ইউনিট‌’-এরই কয়লা পাচারের আর্থিক নয়ছয়ের তদন্ত করা উচিত। আগামী কাল দিল্লিতেই কয়লা পাচার কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী মলয় ঘটককে তলব করেছে তারা।

ইডি সূত্রের যুক্তি, কয়লা পাচার কাণ্ডে সিবিআই মামলা দায়ের করার পরে সেই সূত্র ধরে আর্থিক নয়ছয় ও বিদেশে অর্থ পাচারের দিকটি খতিয়ে দেখতে ইডি নিজের ইসিআইআর (এনফোর্সমেন্ট কেস ইনফর্মেশন রিপোর্ট) দায়ের করে। ২০২০-র নভেম্বরে ইডি-র দিল্লির সদর দফতরের ইনভেস্টিগেশন ইউনিটেই সেই ইসিআইআর দায়ের করা হয়েছিল। ইডি-র এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ‘‘কয়লা পাচারের মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝির থেকে বাঁকুড়া থানার তৎকালীন আইসি অশোক মিশ্র মাত্র ১০৯ দিনে ১৬৮ কোটি টাকা পেয়েছিলেন। অশোক মিশ্রর কাজ ছিল সেই টাকা বিনয় মিশ্র-সহ তাঁর রাজনৈতিক ‘বস’দের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই টাকাই পরে দিল্লি ও ভারতের বাইরে পাঠানো হয়। কলকাতায় কারও হাতে নগদ টাকা জমা করে ভাউচার নিয়ে নেওয়া হত। দিল্লিতে সেই ভাউচার দেখিয়ে টাকা মিলত।’’

ইডি সূত্রের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি কয়লা পাচার মারফত ২০১৮-র জুলাই থেকে ২০১৯-এর ডিসেম্বর, এই ২১ মাস মোট ১৩৫২ কোটি টাকা ঘরে তুলেছিল কয়লা মাফিয়ারা। সেই টাকা মাফিয়া, রাজনৈতিক নেতা, ইস্টার্ন কোল্ডফিল্ডস ও পুলিশ অফিসারদের মধ্যে ভাগ হত। ইডি-র অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত পাওয়া নথি থেকে স্পষ্ট, এই ১৩৫২ কোটি টাকার মধ্যে তৃণমূল নেতা বিনয় মিশ্রের ভাই বিকাশ মিশ্র ওরফে ছোটুর কাছে মোট ৭৩১ কোটি টাকা পৌঁছেছিল। এর মধ্যে ২১৮ কোটি টাকা হাতবদল হয় ২০১৮-১৯-এ। ২০১৯-২০-তে বিকাশের কাছে ৫১৩ কোটি টাকা গিয়েছিল।

অভিষেক-রুজিরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার আগে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তাঁদের মূল দাবি, দিল্লিতে ডেকে না পাঠিয়ে তাঁদের কলকাতায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। ইডি-র অফিসাররা বলছেন, তাঁরা দিল্লি হাই কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, অনুপ মাঝির অ্যাকাউন্ট্যান্ট নীরজ সিংহ ও অশোক মিশ্রর হোয়াটসঅ্যাপ কথাবার্তা থেকে বিদেশে টাকা পাচারের তথ্য জানতে পেরেছে আয়কর দফতর। হলফনামায় বলা হয়েছে, অশোক মিশ্র নীরজকে হোয়াটসঅ্যাপ করে এক বিশেষ ব্যক্তির তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য পাঠিয়েছিলেন। সঙ্গে ১০০০ তাই মুদ্রার নোটের ছবিও পাঠান। নীরজ ব্যাঙ্কে জমার স্লিপের ছবি পাঠিয়ে জানান, ওই অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ তাই মুদ্রা জমা করা হয়েছে। অশোক, নীরজের হোয়াটসঅ্যাপ কথাবার্তা থেকে আরও জানা গিয়েছে, একই ভাবে ওই ব্যক্তির লন্ডনের বার্কলেজ় ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টেও টাকা জমা পড়েছিল।

তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, ‘‘আর্থিক নয়ছয়ের একাংশ দিল্লিতে ঘটেছে। অভিষেকরা ইডি-কে যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট, তাঁদের দিল্লিতেও একটি ঠিকানা রয়েছে। অভিষেকরা ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী তদন্তকারী সংস্থার ভৌগোলিক সীমারেখার কথা বলছেন। আর্থিক নয়ছয়ের ক্ষেত্রে এই সীমারেখা খাটে না। কারণ বিদেশেও এর ডালপালা ছড়িয়ে রয়েছে।’’ এই কারণেই অভিষেক-রুজিরাকে দিল্লিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা একেবারেই নিয়ম বহির্ভূত নয় বলে ইডি সুপ্রিম কোর্টে যুক্তি দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Enforcement Directorate Coal Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE