সোমবার বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিট। যাত্রীকে অটোতে বসিয়ে পুরনো দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন রাম বালক সাহনির পুত্র। রাত সাড়ে ৮টায় তাঁদের বাড়িতে আসে ফোন। দিল্লির লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণের কথা সেখান থেকেই জানতে পারেন প্রৌঢ়। শুনে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠেছিল। ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুত্রকে আর ফেরাতে পারেননি।
সাহনির পুত্র পেশায় অটোচালক। সংসারের একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর কী ভাবে সংসার টানবেন, দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ কী ভাবে জোগাবেন, ভেবে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না প্রৌঢ়। থেকে থেকে কপাল চাপড়াচ্ছেন। হাহাকার করে উঠছেন। বলছেন, ‘‘এ বার খাব কী?’’
২০০৫ সালে সরোজিনি নগরের বিস্ফোরণের ঘটনায় ভুক্তোভোগীরা লালকেল্লাকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিতে বৃহস্পতিবার একটি জমায়েতের আয়োজন করেছিলেন। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন পুত্রহারা প্রৌঢ়। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলেন, ‘‘আমার দুই মেয়ে এখনও পড়াশোনা করছে। আমি অনেক দিন ধরে অসুস্থ। ছেলেই আমাদের বাড়ির একমাত্র রোজগেরে সদস্য ছিল। ও আর নেই। এ বার খাব কী আমরা?’’
আরও পড়ুন:
বিকেলে যাত্রী নিয়ে বেরিয়েছিলেন পুত্র। তার পর ফেরার পথে হয়তো আরও যাত্রী পেয়েছিলেন। কী হয়েছিল, কোথায় গিয়েছিলেন, কিছুই জানে না পরিবার। ঘটনার খবর পেয়ে পুত্রের সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন প্রৌঢ়। পারেননি। বিস্ফোরণস্থলে পৌঁছে প্রথমে অটোটিকে দেখতে পান। ঘটনার অভিঘাতে তা একেবারে দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল। তা দেখেই প্রৌঢ় আন্দাজ করে নিয়েছিলেন পুত্রের পরিণতি। কিছু ক্ষণ পরে তাঁর ক্ষতবিক্ষত দেহও খুঁজে পান। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে আমি অটোটা দেখলাম। সাংঘাতিক অবস্থায় ছিল। ভেবেছিলাম, ছেলের হয়তো বড়সড় কোনও আঘাত লেগেছে। ও যে এ ভাবে চলে যাবে, ভাবতেও পারিনি। ওর মুখের বাঁ পাশে লাল দাগ হয়ে গিয়েছিল।’’
দিল্লির বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও বেশ কয়েক জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী হামলা বলে উল্লেখ করেছে ভারত সরকার। অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে, আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই মতো তদন্ত চলছে। পুলিশ একাধিক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনায় জম্মু ও কাশ্মীরের একাধিক চিকিৎসকের যোগ পাওয়া গিয়েছে।