বিহারের এসআইআর মামলা শুনানি সুপ্রিম কোর্টে। — ফাইল চিত্র।
বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘এমন প্রক্রিয়া হওয়া উচিত, যেখানে জনগণের আস্থা তৈরি হয়।’’ কারণ না-জানিয়ে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ যদি কেউ তথ্য দিয়ে আদালতে জানান, তবে কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হবে। জানান বিচারপতি সূর্য কান্ত। মামলাকারীর আইনজীবী প্রশান্ত বলেন, ‘‘অনেক লোকের নাম আমার কাছে রয়েছে। ১০০ জনের নামের তালিকা পরের শুনানিতে আদালতে জমা দেব।’’ আদালত তাঁকে সেই তালিকা জমা দিতে বলে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আবার পরের মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর)।
কারণ না-জানিয়ে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, এমন উদাহরণ থাকলে আদালতে জানাতে বলেন বিচারপতি। শুনানি চলাকালীন বিচারপতি বাগচী বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া ঠিক নয়। অভিযোগ উঠছে ৬৫ লক্ষ লোকের নাম বাদ গিয়েছে। তার পরে আবার নতুন নাম যোগ হয়েছে। এই নতুন কারা? কী ভাবে তাঁদের নাম যোগ হল। প্রথমে বাদ গিয়েছিল তার পরে আবার ঢোকানো হল? স্পষ্ট করে বলুন। খসড়া তালিকা এবং চূড়ান্ত তালিকার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করে বলুন।’’ কমিশনের পক্ষের আইনজীবী জানান, অনেক নতুন ভোটারের নাম যোগ হয়েছে।
আইনজীবীদের তথ্যের ভিত্তিতে সওয়াল করার কথা মনে করিয়ে দেন বিচারপতি। মামলাকারীর আইনজীবী জানান, কাদের নাম বাদ গিয়েছে। ভাগ ভাগ করে সেই তথ্য দেওয়া হয়নি। তা শুনে বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘কাদের নাম নেই? চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়েছে। সবাই দেখতে পাচ্ছেন সেখানে কাদের নাম রয়েছে।’’ বিচারপতি আরও বলেন, ‘‘ধরুন, আমার নাম নেই। কেন বাদ দেওয়া হয়েছে কারণ জানানো হয়নি। এমন উদাহরণ দিন। আদালতে হলফনামা দিন ওই বিষয়ে।’’
এসআইআর প্রক্রিয়ায় কি নিয়ম মেনে নাম বাদ দেওয়া হয়নি? প্রশ্ন বিচারপতি সূর্য কান্তের। তিনি জানতে চান, কেন এই কথা বলা হচ্ছে? মামলাকারীর আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘির সওয়াল, ‘‘ভোটার তালিকায় বলা হয়েছে নাম মুছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন মুছে দেওয়া হল তার কারণ জানানো হয়নি।’’ বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, ‘‘৩.৬৬ লক্ষ নাম প্রকাশ করা না হলে আমরা নির্দেশ দিতে পারি। লক্ষ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে আপনাদের এই বিষয়টি আগেই আদালত শুনছে।’’
শুনানিতে মামলাকারীর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ আদালতে বলেন, ‘‘এই সমীক্ষার মাধ্যমে মুসলিম এবং নারীদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া খুবই সমস্যার। আদালতের নির্দেশ মেনে ৬৫ লক্ষ নাম প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও অনেক নাম রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বাতিল হওয়া ৩.৬৬ লক্ষ ভোটারের নাম প্রকাশ করা হয়নি।’’
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে চলছে বিহারের এসআইআর মামলার শুনানি।
গত শুনানিতেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এই মামলার শুনানি হবে। আদালত আরও স্পষ্ট করে দিয়েছিল, এই মামলার চূড়ান্ত রায় শুধু বিহারের জন্য হবে না। দেশব্যাপী এসআইআর-এর কাজের জন্যই এই রায় কার্যকর হবে। বিহারের এসআইআর সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ব্যক্তি পরিচয়ের প্রামাণ্য নথি হিসাবে আধার কার্ডকে ব্যবহার করা যাবে। এই নিয়ম আপাতত শুধু বিহারের জন্যই। শীর্ষ আদালত এ-ও স্পষ্ট জানায়, আধার কার্ড কখনওই নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। শুধু ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে আধার কার্ড।
সুপ্রিম কোর্টে এসআইআর নিয়ে মামলা চলাকালীনই বিহার বিধানসভার ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ বার দু’দফায় নির্বাচন হবে বিহারে। ৬ এবং ১১ নভেম্বর হবে ভোটগ্রহণ। ফলপ্রকাশ ১৪ নভেম্বর। ভোটের আগে বিহারে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) করেছে কমিশন। অনেক ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। রবিবার নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার জানান, ভোটপ্রক্রিয়ায় ১৭টি নতুন পরিবর্তন আনা হচ্ছে, যা বিহার থেকে শুরু হবে। আগামী দিনে গোটা দেশ তা অনুসরণ করবে। এই পরিবর্তনগুলির ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত হবে বলে কমিশন আশাবাদী।
ভোট ঘোষণার আগে বিহার সফরে গিয়েছিল নির্বাচন কমিশনের সম্পূর্ণ বেঞ্চ। সফর সেরে জ্ঞানেশ জানান, কোনও ভোটকেন্দ্রে ১২০০ জনের বেশি ভোটার থাকবে না। এর আগে যা ছিল ১৫০০। আগে মোবাইল ফোন নিয়ে ভোট দিতে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। নতুন নিয়মে ভোটারেরা ফোন নিয়েই ভোট দিতে যেতে পারবেন। প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে থাকবে ফোন বুথ কক্ষ। সেখানে মোবাইল জমা রাখা যাবে। কমিশন জানিয়েছে, বুথ-স্তরের আধিকারিকদের সহজে চিহ্নিত করার জন্য পরিচয়পত্র চালু করা হয়েছে। এর ফলে তাঁদের সঙ্গে ভোটারদের পরিচয় আরও সহজ হবে। প্রতিটি বুথে হবে ওয়েবকাস্টিং। এ ছাড়া জ্ঞানেশ জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আধার কার্ডকে জন্ম বা নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে গণ্য করা যাবে না। এসআইআর নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। অনেকে এর বিরোধিতা করেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy