ক্ষতিগ্রস্ত বিমানের বাঁ দিকের ইঞ্জিন। ছবি: পিটিআই।
ওড়ার মুখেই জোর ধাক্কা। সুরাত বিমানবন্দরে স্পাইসজেটের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানের ১৪০ জন যাত্রী তখনও বুঝতে পারেননি ঠিক কী ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধে ছ’টা কুড়ি নাগাদ ওই বিমানটি সুরাত থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছিল। কিন্তু বাদ সাধল একটি মোষ। উড়তে গিয়ে বোয়িং ৭৩৭ বিমান সজোরে ধাক্কা মারে তাকে। তার পরে আর উড়তে পারেনি বিমানটি। সেটির বাঁ দিকের ইঞ্জিন সাংঘাতিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান সংস্থা। মোষটিও মারা যায়। সব যাত্রী এবং বিমানকর্মী অক্ষত আছেন।
কিন্তু এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে সুরাত বিমানবন্দরের রানওয়ের অবস্থা নিয়ে। বিমান মন্ত্রক ঘটনার দু’টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ডিজিসিএ এবং এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়াকে। সারা দেশের বিভিন্ন রানওয়েতে এ ভাবে পাখি বা অন্য পশু ঢুকে পড়ার ঘটনা বিরল নয়। তাই এ ব্যাপারে ফের নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর কোনও বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, দেখতে বলা হয়েছে সেটাও। মুম্বই থেকে ডিজিসিএ-র অফিসাররা ইতিমধ্যেই সুরাত গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। বিমানসচিব ভি সোমাসুন্দরম এই ঘটনা নিয়ে গুজরাতের মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। এফআইআর দায়ের করাও হয়েছে।
রানওয়ের সীমানার পাঁচিলের ফাঁক গলে হঠাৎ সকলের নজর এড়িয়ে কখন প্রাণীটি ঢুকে পড়েছে, বোঝেননি কেউ। এমনিতে সুরাত বিমানবন্দরের চারপাশের মাঠে প্রায়শই গরু মোষ চড়তে দেখা যায়। তার জন্য পাঁচিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে রানওয়ে। কিন্তু সেই পাঁচিলও পুরোপুরি অক্ষত নেই। কোথাও কোথাও বেড়া দিয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত কাল সেখান থেকেই কোনও ফাঁক পেয়ে ঢুকে পড়েছিল মোষটি। সেই পাঁচিলের ফাঁক এখন মেরামত করা হচ্ছে। প্রভাকর জোশী নামে এক যাত্রী জানিয়েছেন, মোষের ধাক্কায় বিমানের যা ক্ষতি হয়েছে, ভাবা যায় না। যদি তার পরেও ওটা উড়ত, আমরা হয়তো মরেই যেতাম। প্রভাকর বলেন, “বিমান রানওয়ে থেকে গতি বাড়াতে শুরু করার সময়েই বিশাল জোরে শব্দ হয়। আমরা ভেবেছিলাম রানওয়ের রাস্তাতেই কোনও ভাবে ঘষটে গিয়েছে বিমান। ব্যস ওই বিশাল শব্দের পরে সব বন্ধ। আর ওড়েনি।” চালকের দাবি, বিমানের চাকা কিছুটা এগোনোর পরে হঠাৎই তিনি দেখতে পান মোষটিকে। সন্ধের অন্ধকারে আগে দেখা যায়নি। দেখলে হয়তো ধাক্কা এড়ানো যেত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আর কিছু করার ছিল না।
সুরাত বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ মুম্বই থেকে অন্য একটি বিমান এনে দিল্লিগামী স্পাইসজেটের ওই বিমানের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন। রাত পৌনে এগারোটা নাগাদ রওনা দেয় সেটি। এই ঘটনার পরে সুরাত বিমানবন্দর থেকে স্পাইসজেটের কোনও বিমানই অনির্দিষ্টকালের জন্য না ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমানসংস্থা। বেশ কিছু রানওয়েতে এই ভাবে যখন তখন গরু-মোষ-ছাগল শেয়াল ঢুকে উটকো ঝামেলা তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন স্পাইসজেটের মুখপাত্র।
আজই আবার ইনদওরের বিমানবন্দরে শেয়াল ঢুকে পড়েছে বলে খবর মিলেছে। সেটিকে অবশ্য খাঁচাবন্দি করা হয়েছে। ডিভিশনাল বন অফিসার এ কে জোশীর দাবি, এই বিমানবন্দরেও দু’বার শেয়াল ঢুকে পড়েছিল রানওয়েতে। তার পর থেকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেন বন দফতরের সঙ্গে। সেখান থেকেই রানওয়েতে শেয়াল ধরার জন্য আটটি খাঁচার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আজ তারই একটিতে ধরা পড়েছে শেয়াল।
এর আগে ২০১০-এ মুম্বইয়ের বিমানবন্দরের একটি রানওয়েতে কুকুর ঢুকে পড়ায় আধ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দিতে হয়েছিল বিমানবন্দর। তার আগের বছর নাগপুর বিমানবন্দরে শুয়োরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে কিংফিশারের একটি বিমানের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy