চিনের সঙ্গে বিদেশ নীতির প্রশ্নে মোদী সরকার যে প্রাক্তন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের দেখানো পথ নিচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে গেল নতুন বিদেশসচিবের একটি নোট প্রকাশ্যে চলে আসায়। গত মাসের ২২ তারিখ বিদেশসচিব বিজয় গোখলে ওই নোটে মন্ত্রিসভার সচিব পি কে সিংহকে জানিয়েছেন, চিনের সঙ্গে সম্পর্ক খুবই স্পর্শকাতর সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দলাই লামার কোনও অনুষ্ঠানে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের শীর্ষ কর্তারা যেন অংশগ্রহণ না করেন। এক কথায়, এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর দেশ চিনকে আদৌ না চটিয়ে বরং তাদের সন্তুষ্ট রেখে সীমান্ত এবং বাণিজ্য সম্পর্কে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে মোদী সরকার।
মূলত জয়শঙ্করের পরামর্শ মেনে এবং আড়াই মাসের ডোকলাম পর্ব থেকে শিক্ষা নিয়ে বেজিং-এর সঙ্গে সংঘাতের পথ থেকে গত বছরের শেষ থেকেই সরে এসেছে কেন্দ্র। প্রতিবেশী কূটনীতিতে কোণঠাসা সাউথ ব্লকের পক্ষে চিনের মতো শক্তিধর দেশের সঙ্গে বৈরিতার মাত্রা চড়ানো যে চূড়ান্ত অবিবেচকের কাজ হবে, সে কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বোঝাতে পেরেছিলেন জয়শঙ্কর। সেই সূত্র ধরে চিনের সঙ্গে সম্পর্কে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের নির্দেশিত আক্রমণাত্মক অবস্থান বদলে ফেলা হয়। যার প্রতিফলন ঘটেছে নতুন বিদেশসচিবের চিন সফরেও।
দায়িত্ব পাওয়ার পরই চলতি মাসের ২৩ তারিখ চিন গিয়েছিলেন নতুন বিদেশসচিব বিজয়। সেখানে বৈঠক হয় উপবিদেশমন্ত্রী কং জুয়ানইউ-এর সঙ্গে। স্থির হয়, দু দেশের মধ্যে তিক্ত-বিন্দুগুলিকে যতটা সম্ভব প্রশমিত রেখে আরও বাড়ানো হবে বাণিজ্যিক লেনদেন। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতীয় অংশের ব্যাপক ঘাটতির কথাও চিনকে ফের জানানো হয়। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, বেজিং-এর তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, সম্পর্ক মসৃণ থাকলে ভারতীয় পণ্য সে দেশে আমদানি করার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছাও তৈরি হবে। গোখলে ওই সফরে দেখা করেছেন বিদেশমন্ত্রী এবং স্টেট কাউন্সিলরের সঙ্গেও।
চিনকে সন্তুষ্ট রাখার সেই বাধ্যবাধকতাই প্রকাশিত হয়েছে দলাই লামার অনুষ্ঠান কার্যত বয়কট করার এই সিদ্ধান্তে। যা প্রকাশ্যে আসার পর অবশ্য কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে বিদেশমন্ত্রক। প্রশ্নের মুখে হোলির ছুটির মধ্যেও বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে সুষমা স্বরাজের মন্ত্রক। তাতে বিদেশসচিবের এই নোট প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য না করে বলা হয়েছে, দলাই লামা সম্পর্কে সরকারের অবস্থানে অস্পষ্টতা নেই। তিনি একজন শ্রদ্ধেয় ধর্মগুরু এবং ভারতবাসী তাঁকে গভীর সম্মান করেন। সেই অবস্থানের কোনও বদল হয়নি। এই দেশে তাঁর ধর্মাচরণ করার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy