আশঙ্কা থাকলেও মানতে চায়নি সরকার। নাগরিকপঞ্জির সমন্বয়রক্ষাকারী আমলা প্রতীক হাজেলাও বারবার দাবি করেছিলেন এনআরসি হবে সম্পূর্ণ বিদেশিমুক্ত। কিন্তু মরিগাঁও জেলার ঘটনায় নড়েচড়ে বসল রাজ্য সরকার। বিদেশী সনাক্তকরণ আদালতে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা এক ব্যক্তি হাইকোর্টে জানালেন, তাঁর নাম ঢুকেছে নাগরিকপঞ্জিতে। অবশ্য হাজেলা ঘটনার দায় পুলিশের উপরেই চাপিয়েছেন।
২০১১ সালের ২২ নভেম্বর আদালত লাহরিঘাটের বাসিন্দা আলি আহমেদকে বাংলাদেশি হিসেবে সনাক্ত করে রায় দিয়েছিল। তিনি ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানান। আজ শুনানির সময় আলি নিজের ভারতীয় হওয়ার স্বপক্ষে প্রমাণ হিসেবে এনআরসির খসড়া তালিকায় নিজের নাম তুলে ধরেন। যখন রাজ্যের অনেক ভূমিপুত্রের নামও প্রথম তালিকায় স্থান পায়নি, সেখানে বিদেশি হিসেবে ইতিমধ্যে সনাক্ত হওয়া ব্যক্তির নাম কীভাবে নাগরিকপঞ্জিতে ঢুকল- তাতে বিস্ময় প্রকাশ করে আদালত। এ নিয়ে রাজ্য সরকারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়ে এনআরসি কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া ও নথিপত্র পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়ার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
আসু ও বিভিন্ন সংগঠন ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে। বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব বিধানসভা চত্বরে বলেন, “এনআরসিতে এক দিক থেকে বাংলাদেশি মুসলিমদের নাম ঢুকছে। অন্যদিকে পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে এনআরসি নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। এমন চললে অসমবাসী নিজের পায়েই কুড়ুল মারবে। এই নিয়ে অভিযোগ জানাতে আমি দিল্লি যাব।”
প্রতীক হাজেলা বলেন, "আমরা সীমান্ত শাখার কাছ থেকে ঘোষিত বিদেশিদের তালিকা পাই। এ ক্ষেত্রে পুলিশ আমাদের সোনারির বাসিন্দা আবদুল বসিরের উদ্দিনের পুত্র আলি আহমেদের নাম দিয়েছিল। আমরা তেমন কাউকে পাইনি। কিন্তু আদতে বিদেশি ঘোষিত আলি আহমেদের বাবার নাম আবদুল বসির, বাড়ি লাহরিঘাটে। তাই পুলিশই আমাদের বিভ্রান্ত করেছে।" আগেও বাবার নাম ও ঠিকানার গরমিলের জেরে সীমান্ত পুলিশ ও আদালতের নোটিস পেয়েছিলেন এক সেনাকর্মী ও এক পুলিশকর্মী। হাজেলার আরও অভিযোগ, পুলিশ কখনও বিদেশিদের ছবি দিতে পারে না। তিনি জানান, এত সমস্যার পরেও নাগরিকপঞ্জির আবেদন পরীক্ষার সময় এনআরসি কর্মীরা ৪২৫৯ জন ঘোষিত বিদেশিকে সনাক্ত করেছে- যাঁদের নাম পুলিশ দেয়নি। তাঁদের আবেদন বাতিল করা হয়। সেই সঙ্গে ৬৩ হাজার ডি-ভোটারকে নিজেদের তরফে সনাক্ত করেছে এনআরসি দফতর। তাদের কারও নাম নাগরিকপঞ্জির তালিকায় ঢোকাতে দেওয়া হয়নি।