Advertisement
E-Paper

অবাধ-শান্তিপূর্ণ ভোট, বিহারে ছবিটা বদলাল কী করে

শুক্রবার রাতে দানাপুর এক্সপ্রেস হাওড়া ছেড়ে সবে বর্ধমান ঢুকবে ঢুকবে করছে। এসি-২এ কামরার ভেতর থেকেই চেঁচামেচিটা শোনা গেল। দরজার কাছে গিয়ে দেখি এক যাত্রী কোচ অ্যাটেন্ড্যান্টের উপর চেঁচাচ্ছেন। তাঁর ব্যাগ চুরি গেছে বলে দাবি।

উজ্জ্বল চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৫ ১৭:৫৩

শুক্রবার রাতে দানাপুর এক্সপ্রেস হাওড়া ছেড়ে সবে বর্ধমান ঢুকবে ঢুকবে করছে। এসি-২এ কামরার ভেতর থেকেই চেঁচামেচিটা শোনা গেল। দরজার কাছে গিয়ে দেখি এক যাত্রী কোচ অ্যাটেন্ড্যান্টের উপর চেঁচাচ্ছেন। তাঁর ব্যাগ চুরি গেছে বলে দাবি। কোচ অ্যাটেন্ড্যান্ট বোঝানোর চেষ্টা করছেন— কোথাও ভুল হচ্ছে, চলন্ত ট্রেনে এসি কামরা থেকে এ ভাবে চুরি যেতে পারে না। কথা, পাল্টা কথা, তর্ক, বিতর্কের মধ্যেই ওই বাঙালি যাত্রী চিত্কার করে উঠলেন— ইয়ে বাঙ্গাল হ্যায়, বিহার নেহি। ঘটনাচক্রে কোচ অ্যাটেনড্যান্ট ভদ্রলোক বিহারি। তিনি এই অপমান হজম না করে যা বললেন তার বাংলা মানে হল: বিহারেও ভোট দেখলেন আর বাংলাতেও ভোট দেখেছেন, তার পরেও বলবেন বিহারের খারাপ আর বাংলা দারুণ! এ সব আর বলবেন না।

সত্যিই তো! ‘জঙ্গলের রাজত্ব’ তুলনা টানা হত বিহারের সঙ্গে! অন্যান্য রাজ্যে, এমনকী বাংলাতেও, সন্ত্রাসের বাড়াবাড়ি ঘটলে ‘রাজ্যটাকে বিহার বানিয়ে ফেলল’ জাতীয় উক্তি শোনা যেত হামেশাই। এ বারের বিহার ভোট দেখার পর, সেই বিহার আর এই বিহার মেলাতে পারছেন না অনেকেই।

অচেনা লালু গম্ভীর! চেনা লালু বললেন, মহাজোট ১৯০

এ দেশে প্রথম বুথ দখল বিহারেই। ভারতের গণতান্তিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রথম নথিবদ্ধ বুথ দখলের ঘটনা ১৯৫৭ সালে, বিহারের বেগুসরাইয়ে। এ হেন রেকর্ড দিয়ে যার শুরু, তার পরবর্তী হাওয়াও গোলা-বারুদ-মাসল পাওয়ারে মাখামাখি। বিহারের যে কোনও ভোটে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের ভরসা ছিল মাসল ম্যানরাই। জোর যার মুলুক তার! এই মার্কা মারা বিহার রাজনীতিতে অবশ্য অন্য হাওয়া বইয়েছিলেন এক গাঁধীবাদী। জয়প্রকাশ নারায়ণ। কিন্তু জয়প্রকাশের শিষ্যকুলও যখন বিহারে ক্ষমতার লড়ালড়িতে ঢুকেছে, তাঁরাও সবাই এড়িয়ে থাকেননি মাসল ম্যানদের। সাহাবুদ্দিনের মতে বিতর্কিত চরিত্রকে সঙ্গে নিয়ে চলেছেন লালু। পাপ্পু যাদব তো লালু-রামবিলাস দু’জনের আশ্রয়েই ভোটে জিতেছেন। এমপি হয়েছেন চার-চার বার!

মেনস্ট্রিম পলিটিক্সের এই মাসল গেমের বাইরে, গত দু’দশকে মাথা চাড়া দিয়েছিল মাওবাদী সন্ত্রাসও। ২০১০-এর বিধানসভা ভোটে পর্বে বড় ধাক্কা দিয়েছিল মাওবাদীরা। দ্বিতীয় দফার ভোটের আগে মাওবাদীদের ল্যান্ড মাইনে প্রাণ দিতে হয়েছিল ছয় পুলিস কর্মীকে।

সেই বিহারেই এ বারের ভোট চমকে দিয়েছে অনেককেই। টুকটাক গোলমাল যে হয়নি তা নয়। কিন্তু বড় কোনও নির্বাচনী সন্ত্রাস এ বার খবরের শিরোনামে আসেনি। কী করে এটা সম্ভব হল?

কিছু তথ্য গুরুত্ব দেওয়ার মতো।

• ২০০৫ আর ২০১০-এর বিধানসভা ভোটে ক্রিমিনাল রেকর্ডধারী প্রার্থীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৯ শতাংশ আর ৩৬ শতাংশ। এ বার এটা নেমে এসেছে ৩০ শতাংশের নীচে।

• মায়ঙ্ক মিশ্রের মতো বিশেযজ্ঞদের মতে, ক্রিমিনাল রেকর্ডধারী প্রার্থীর সংখ্যা যত বেড়েছে, জয়ের সম্ভাবনা তত বেড়েছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীদের। ফলে প্রার্থী করার ক্ষেত্রে ক্রিমিনাল রেকর্ডধারীদের এড়িয়ে চলার প্রবণতা বিহারে বাড়ছে।

তবে বিহারের সাংবাদিক বন্ধুদের মতে, এ বার ভোটে বড় গোলমাল না হওয়ার সব থেকে বড় কারণ, প্রচুর আধাসামরিক বাহিনী দিয়ে ভোট সামলেছে নির্বাচন কমিশন। কোথাও কোথাও দশ-পনেরো জন ভোটার পিছু এক জন নিরাপত্তারক্ষীও ছিল। এ বারের ভোটে এই বেনজির নিরাপত্তা খুব একটা ট্যাঁ-ফো করতে দেয়নি মাসল পাওয়ার বাহিনীকে। এবং সাফল্যের উপর দাঁড়িয়ে আসছে বছর এই বিহার মডেল হয়তো পশ্চিমবঙ্গেও প্রয়োগ করতে চলেছে নির্বচন কমিশন।

Free Fair Polling Bihar Change Situation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy