Advertisement
E-Paper

সিএএ থেকে মুদ্রাস্ফীতি, নাজ়মা আপির ইনস্টা-তির

হিন্দু হয়েও হঠাৎ নাজ়মা নামটাই বেছে নেওয়া কেন?

অন্বেষা দত্ত

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:৩৪
নাজ়মা আপির সাজে সালোনি গৌর। ছবি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে

নাজ়মা আপির সাজে সালোনি গৌর। ছবি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে

‘আসসালাম আলেইকুম ইনস্টাগ্রাম কি বান্দো..!’

এই সম্বোধনেই কথা শুরু করেন নাজ়মা আপি (বোন)। কালো বোরখায় মাথা ঢেকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে পুরনো দিল্লির চেনা হিন্দিতে ভর করে এগোয় তাঁর বাচনভঙ্গি। কথাগুলো আপাত ভাবে দিল্লির কোনও সরল-সাদা এক মুসলিম ঘরণীর বয়ান ছাড়া কিছুই নয়। তবে একটু কান পাতলে বোঝা যাবে, নাজ়মা আপির ওই গড়গড়িয়ে বলে যাওয়ার মধ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) আছে, নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) আছে, মুদ্রাস্ফীতি আছে, জেএনইউ আছে, শাহিন বাগ আছে। কিন্তু নাজ়মা আপিকে সরাসরি সে সব নিয়ে প্রশ্ন করতে যাও, সব দিক বাঁচিয়েই বলবেন আপি।

নাজ়মা তখন বোরখা রেখে বছর কুড়ির সালোনি গৌর। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরের ছাত্রী। নাজ়মা নামে ইউটিউব আর ইনস্টাগ্রামে প্রসিদ্ধ তিনি। ছোট ছোট ভিডিয়ো তৈরি করে বিদ্রুপে বিঁধে চলেছেন আশপাশের ঘটনাপ্রবাহকে। আদতে উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের এর বাসিন্দা। তিন বছর ধরে দিল্লিতে। খবর রাখেন সব কিছুর। যে ঘটনা ‘ইন্টারেস্টিং’ লাগে, সঙ্গে সঙ্গে তা নিয়ে দু’চারটে বুলেট পয়েন্টে লিখে রাখা। পরে সেগুলোকেই বিস্তারিত ভাবে বলে দেওয়া মোবাইল ক্যামেরার সামনে। বলতে বলতে আরও যা যা মাথায় আসে, সে সবও জুড়ে দেওয়া। সব মিলেমিশে তৈরি স্কিটে ঠাসা বিদ্রুপ। ভিউয়ার রেটিং চড়চড়িয়ে বাড়ে। দু’বছর আগে থেকে এমন সব ভিডিয়ো তৈরি করা শুরু।

আরও পড়ুন: ‘এগজিট পোল একজ্যাক্ট নয়’, সমীক্ষার ফল উড়িয়ে দাবি বিজেপির

তবে হিন্দু হয়েও হঠাৎ নাজ়মা নামটাই বেছে নেওয়া কেন? ফোনে কুড়ির তরুণীর ভীষণ স্মার্ট গলা, ‘‘এর আগে কুসুম বহেনজি আর আশা বহেনজিও হয়েছি। আমারই দাদি আর নানির নাম এগুলো। এর মধ্যে আলাদা কিছু ভাববেন না। নাজ়মার ভিডিয়ো ইদের সময়ে বানিয়েছি। তাই ওই নাম। সেটা বেশি জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে, এই যা!’’ সম্প্রতি নাজ়মার যে ভিডিয়ো আপলোড করে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের নজরে পড়েছেন সালোনি, সে ভিডিয়োয় রয়েছে সিএএ নিয়ে ব্যঙ্গ।

এ বছরের গোড়ায় গুজরাতের একটি স্কুলে বাচ্চাদের দিয়ে সিএএ-র পক্ষে চিঠি লিখিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছিল। সে ঘটনাকেও ছাড়েননি সালোনি। নাজ়মা আপি ভিডিয়োয় বলে যাচ্ছেন, ‘‘বাচ্চাদের দিয়ে স্কুলে পোস্টকার্ড লেখাচ্ছে! এই জন্য আমি বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাই না। সোজা কলেজে পাঠাব। সব ভুলভাল শেখায় স্কুলে। ওই তো, শেখাবে চিঠি লেখানো... মহোদয়, আমাদের ফি মকুব করে দিন। কোনও দিন হয়েছে ফি মকুব? আর এখন কে পোস্টকার্ড লেখে? হোয়াটসঅ্যাপ করত বরং, ওরা শিখে নিত!’’

নাজ়মা আপির আরও সংযোজন, ‘‘সিএএ নিয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়েছে বাচ্চাগুলো। রাতে খোলা জায়গায় ঠান্ডা লেগে যাচ্ছে! সব হাঁচতে হাঁচতে বাড়ি ফিরছে। কী জ্বালাতন আমার।’’ আপির এই নিখাদ ঠাট্টায় কেউ এখনও পর্যন্ত কোনও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেননি বলেই দাবি। ‘‘কেউ আপত্তি করলেও মানব কেন?’’ বলে দেন সালোনি।

প্রথমে দিল্লির বায়ুদূষণের মতো বিষয় নিয়ে শুরু। গত নভেম্বরে সেটাই ভাইরাল হয়। নকল করতে স্বচ্ছন্দ সালোনি এখন জনপ্রিয়তা পেয়ে এটাই চালিয়ে যেতে চান। কিন্তু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ভিডিয়ো তৈরি করলেও নিজের রাজনৈতিক অবস্থান খোলসা করতে আপত্তি রয়েছে তাঁর। সালোনি বলেন, ‘‘আমি সিএএ নিয়ে নাজ়মার ভিডিয়ো করেছি। কারণ নাজ়মা রোজকার ঘটনা নিয়েই কথা বলে। এর বেশি কিছু এর মধ্যে নেই।’’

কিন্তু সিএএ-র বিরুদ্ধে মুসলিম মহিলারা একজোট হয়ে প্রতিবাদ করছেন শাহিন বাগে। দিল্লিতে বসে পড়াশোনা করা সালোনির কিছুই মনে হয় না? ‘‘সিএএ-র ভালমন্দ নিয়ে আমি মন্তব্য করব না। কিন্তু মহিলারা যে ভাবে প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছেন, তার প্রশংসা করতেই হবে। মহিলাদের সমানাধিকারের জন্যও লড়াই চাই।’’

মোবাইল থেকে ভবিষ্যতে কি স্ট্যান্ডআপ কমেডির দিকে যাওয়ার ইচ্ছে? ‘‘হ্যাঁ, সে রকম ইচ্ছে খুবই আছে। এখন কলেজ ফেস্টে করি। আপাতত পড়াশোনা শেষ করে তবে ওই সব ভাবব।’’ মা-বাবাও সমঝে চলেন নাজ়মা আপিকে। বলেছেন, ‘‘জো দিল মে হ্যায়, কর লো।!’’ মেয়ে থামছেন না। হালের বাজেট, দিল্লি ভোট— স্কিট চলছে সব নিয়েই। বাড়ছে ফলোয়ারও!

CAA Inflation Nazma Aapi Instagram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy