Advertisement
০৫ মে ২০২৪

শিলচরে জঞ্জাল সাফাই বন্ধের আশঙ্কা পুরপ্রধান নীহারেন্দ্রর

পুরপ্রধান ও এগজিকিউটিভ অফিসারের সংঘাতে শিলচর শহরের উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ার মুখে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জঞ্জাল সাফাই নিয়েও। পুরসভার অভিযোগ, পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক কোনও বিলে সই করছেন না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৩৬
Share: Save:

পুরপ্রধান ও এগজিকিউটিভ অফিসারের সংঘাতে শিলচর শহরের উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়ার মুখে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জঞ্জাল সাফাই নিয়েও। পুরসভার অভিযোগ, পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক কোনও বিলে সই করছেন না। ফলে পাওনাদারদের টাকা মেটানো যাচ্ছে না। এগজিকিউটিভ অফিসারের সাফাই— ‘‘সব কিছু না দেখে সই করি কী করে!’’

শিলচর পুরসভার সভাপতি নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর জানিয়েছেন, তিনি এ নিয়ে জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনের সঙ্গে কথা বলবেন। কারণ জঞ্জাল নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে পড়লে দুর্গন্ধে শহরবাসী মুশকিলে পড়বেন।

আগে অবশ্য স্বশাসিত পুরসভাগুলিতে নির্বাচিত সভাপতিই ছিলেন শেষ কথা। গত বিধানসভায় পুর-আইন সংশোধন করে এগজিকিউটিভ অফিসার নিযুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যুক্তি দেখানো হয়, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সহ প্রচুর সরকারি অনুদান পায় পুরসভা। এগজিকিউটিভ অফিসার সেগুলির উপযুক্ত নজরদারি করবেন।

নীহারবাবুর বক্তব্য, তাঁরা এই পদে প্রথমে পেয়েছেন এস এন সিংহকে। পরে এ আর শেখ। দু’জনই অতিরিক্ত জেলাশাসক ছিলেন। তাঁদের কারও সময়ে বিল পাশ নিয়ে কোনও জটিলতা দেখা দেয়নি। কিন্তু সীমান্ত কুমার দাস দায়িত্ব নেওয়ার পরই সমস্যার সূত্রপাত হয়।

কাজের ঠিকাদার, বিভিন্ন সামগ্রীর সরবরাহকারীদের বিল আটকে রাখার সঙ্গে এ বার তিনি গাড়ির জ্বালানি-বিল আটকে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন শিলচরের পুরপ্রধান। তিনি বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে ডিজেলের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। এখন ডিজেল সরবরাহকারীরা জানিয়ে দিয়েছেন, বকেয়া না মেটালে আর তেল দেওয়া হবে না জঞ্জাল নিষ্কাশনের গাড়ি বা পুরসভার কোনও যানবাহনে।’’ নীহারবাবু বলেন, এক-দুদিনে এই বিষয়টির নিষ্পত্তি না ঘটলে তেলের অভাবে পুরসভার জঞ্জাল নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাবে।

দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি পুরসভার একটি জঞ্জালবাহী গাড়ি নষ্ট হলে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার কিছু যন্ত্রাংশ বদলাতে পরামর্শ দেন। জরুরি বিবেচনায় পুরপ্রধান এক দিনে দরপত্র সংগ্রহ করেন, সর্বনিম্ন দরদাতাকে তা সরবরাহের জন্য ওয়ার্ক-অর্ডারও তৈরি করেন। অভিযোগ, এগিজিকিউটিভ অফিসার তাতে বাগড়া দেন। যুক্তি দেখান, সরকারি গাড়ির কী কী যন্ত্রাংশ বদল প্রয়োজন মোটর ভেহিক্যালস ইন্সপেক্টররাই বলতে পারেন, পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার নন। ফলে গাড়িটি কয়েক দিন ধরে পড়ে রয়েছে। এখন তাঁর পরামর্শ মেনে জেলা পরিবহণ অফিসারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি কবে মোটর ভেহিক্যালস ইন্সপেক্টর পাঠাবেন এবং ওই ইন্সপেক্টর কী বলেন, পুরসভা এখন সেই অপেক্ষায়।

কেন এমনটা করছেন এগজিকিউটিভ অফিসার? নীহারবাবু বলেন, ‘‘দায়িত্ব নিয়েই সীমান্তবাবু পুরপ্রধানের গাড়িটি নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। আমি আপত্তি করি। সে থেকেই চলছে অসহযোগিতা। পুরসভায় এগজিকিউটিভ অফিসারের জন্য পৃথক অফিস-কক্ষ রয়েছে, তিনি সেখানে যান না। পুর-কর্মীদের নির্বাচন শাখায় যেতে বলেন। এসব গাড়ি না দেওয়ারই বদলা।’’

উদাহরণ দিয়ে শিলচর শহরের ‘ফার্স্ট সিটিজেন’-এর বক্তব্য, স্ট্রিটলাইট জ্বালানোর জন্য বাল্ব ও অন্যান্য সামগ্রী কারা সরবরাহ করবেন, দরপত্র ডেকে তাঁদের মনোনীত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের বিল দেখলেই সীমান্তবাবু তাঁদের কাজ পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিলও আটকে রেখে দিয়েছেন। পুরসভার স্বল্পপুঁজির ঠিকাদাররাও একই কারণে সমস্যায় পড়েছেন।

এ ভাবে চললে যে পুরসভাকে মামলা-মোকদ্দমায় জড়াতে হবে, তাও চিন্তায় রেখেছে নীহার ঠাকুরকে। কারণ শহরে স্ট্রিটলাইট হিসেবে এলইডি বাল্ব লাগানোর জন্য বাইরের একটি সংস্থার সঙ্গে কিছু দিন আগে চুক্তি হয়েছে শিলচর পুরসভার। তাঁর আশঙ্কা, এখন সে কাজেও সীমান্তবাবু বাগড়া দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তভঙ্গের জন্য তাঁরা মামলা করতে পারে।

অতিরিক্ত জেলাশাসক সীমান্তকুমার দাস এখন একই সঙ্গে জেলার নির্বাচন অফিসার এবং পুরসভার কার্যবাহী অফিসারও। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে নীহারবাবুর অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি অফিসার হিসেবে বিলে অনুমোদন বা সইয়ের আগে সমস্ত ব্যাপারে খোঁজখবর করাই স্বাভাবিক।’’ পেট্রল পাম্পের হুঁশিয়ারি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘এটা আমি জেনেছি। তখন গুয়াহাটি ছিলাম। তেল সরবরাহকারীদের দু’দিন চালিয়ে নিতে বলেছি। সোমবার তাঁদের সঙ্গে কথা বলব। যথার্থতা বিচার করে তাঁদের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’’

গাড়ির মেরামতি সম্পর্কে তাঁর যুক্তি, ‘‘সরকারি গাড়ির যন্ত্রাংশ কেনা বা বড় মেরামতির জন্য পরিবহণ দফতরের অনুমোদন আবশ্যক। এটাই নিয়ম। জেলাশাসকের অফিসেও তা-ই করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Garbage silchar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE