নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
গুজরাত ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর সোমবার রাতে রাহুল গাঁধী বসেছিলেন সহকর্মীদের নিয়ে ময়নাতদন্তে। সূত্রের খবর, গুজরাতের নির্বাচনী ম্যানেজারদের কাছে কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে রাহুল বলেন, বিভিন্ন শহরে তাঁর জনসভা ভিড়ে ভিড়াক্কার থাকত। কিন্তু ফলাফল দেখাচ্ছে শহরাঞ্চলে বিজেপির সাফল্য বেশি, গ্রামে কংগ্রেসের।
চারটি শহরকেন্দ্রিক জেলার ৫৫টি আসনের মধ্যে ৪৬টি বিজেপি জিতেছে। এর বাইরে ১২৭টি আসনে কংগ্রেস পেয়েছে ৭১টি।
এই বিভাজন বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি গত বারের তুলনায় মোট ১৬টি আসন কম পেলেও ভোট শতাংশ যে বাড়িয়ে নিতে পেরেছে, তার পিছনেও রয়েছে শহরের অকুণ্ঠ সমর্থন। শহরাঞ্চলে বিজেপি যে যে আসন জিতেছে, সেখানে ব্যবধান বিপুল। ফলে গ্রামীণ এলাকায় আসন হারালেও শহরে ভোট শতাংশের ক্ষতিটা পুষিয়ে নিয়েছেন মোদী-অমিত শাহ। গুজরাতে শহরাঞ্চলের লোকসংখ্যাও গ্রামের চেয়ে বেশি।
আরও পড়ুন: ৩৪! শুনে হতবাক মোদীর ভক্তকুল
কিন্তু নগর ও গ্রামে ভোট মানসিকতার এই ফারাক কেন? একাধিক বার এ রাজ্যে প্রাকনির্বাচনী পরিস্থিতি চাক্ষুষ করেই কারণটা স্পষ্ট হয়। তথাকথিত ‘গুজরাত মডেলে’ উন্নয়নের যা সুফল, তা পেয়েছে অমদাবাদ, সুরাত, বডোদরা, রাজকোট— চারটি শহরকেন্দ্রিক জেলা। এখানকার বণিক সম্প্রদায় দীর্ঘদিন বিজেপি সরকারের সুবিধাভোগী। জিএসটির ফলে তাঁদের অসন্তোষ তীব্র হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে দায়িত্ব নিয়ে সেই সব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। বস্ত্র এবং অন্যান্য বড় ব্যবসায়ীগোষ্ঠীকে নির্দিষ্ট আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রথম দিকের ক্ষোভ অনেকটা কমেছে। যাঁকে নভেম্বরের গোড়ায় ক্ষোভে ফুটতে দেখেছি, তিনিই ভোটের আগে বলেছেন, ‘‘আমরা নারাজ হয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু গদ্দার তো নই!’’
উৎসব: গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশে ভোটে বিজেপির জয়ের পরে নয়াদিল্লিতে দলের সদর দফতরের বাইরে কর্মী-সমর্থকেরা। সোমবার। —ফাইল চিত্র।
গুজরাতের সমাজবিজ্ঞানীরা এটাও মনে করেন, শহরবাসীর মধ্যে হিন্দুত্বের জোয়ার অনেকটাই বেশি গ্রামীণ বলয়ের থেকে। শহরবাসীদের মধ্যে এই ধারণা প্রোথিত যে, বিজেপি জমানায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক বদলে গিয়েছে। তাঁদের দাবি, মোদীর রাজদণ্ডে সংখ্যালঘুদের মধ্যে অপরাধের হার অনেক কমেছে।
সেই সঙ্গে শিল্পমহলের মত, জিএসটিতে যতটা না ধাক্কা খেয়েছে শহর, তার থেকে নোট বাতিলে অনেক বেশি ধাক্কা গ্রামে লেগেছে। গ্রাম থেকে শহরে যাওয়া শ্রমিকেরা কাজ হারিয়ে গ্রামে ফিরেছেন। ঝাঁ চকচকে এক্সপ্রেসওয়ের দু’পাশে কয়েক কিলোমিটার গেলেই গ্রামীণ সভ্যতার হাড় জিরজিরে চেহারা দেখা যায়। যেমন রাজকোটের পরেই দুমানিয়া গ্রাম। গ্রামের এক কাপাস চাষি বিগনেশ ভাই কাটারিয়া বলছেন, ‘‘সরকারি সহায়ক মূল্য কুড়ি কেজিতে ন’শো টাকা। যা আগে ছিল প্রায় দেড় হাজার টাকা। যদি দু’তিন হেক্টর জমি কারও থাকে, তবেই ঘরে টাকা ঢোকে। এখানে প্রায় কারওরই তা নেই। ফলে অন্যের জমিতে মজদুরি করতে হয়। বছরে তিন মাসের বেশি কাজ থাকে না।’’ গ্রামে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে একটি মাত্র জায়গায়। দু’থেকে তিন দিন অন্তর দু’ঘণ্টার জন্য জল আসে। তারও সময়ের ঠিক নেই।
গুজরাতের বেশির ভাগ গ্রামেরই এই পরিস্থিতি। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শিক্ষাকেন্দ্রের ভগ্নদশা, বেকারি থেকে জলসঙ্কট— ঘর ঘর কি কহানি। নর্মদার জল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে, প্রতিশ্রুতিই থেকে গিয়েছে। এখনও সৌরাষ্ট্র-কাঠিয়াওয়াড়ের উষর এলাকা জলহীন। গ্রামীণ এলাকায় মোদী ১২টি বড় জনসভা করা সত্ত্বেও তাই মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy