Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর ছক ছিনিয়ে রাহুল অক্ষরধামেও

নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে বিজেপির ২২ বছরের রাজত্বে ভাঙন ধরাতে তাঁরাই এখন মূল অস্ত্র কংগ্রেস সহ-সভাপতির। কাঁটা দিয়েই কাঁটা তোলার কৌশল নিয়েছেন তিনি।

অক্ষরধাম মন্দিরে দর্শনের পরে কপালে তিলক কেটে মহন্ত স্বামীর আশীর্বাদ নেন রাহুল গাঁধী। ছবি: সংগৃহীত।

অক্ষরধাম মন্দিরে দর্শনের পরে কপালে তিলক কেটে মহন্ত স্বামীর আশীর্বাদ নেন রাহুল গাঁধী। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪১
Share: Save:

গাঁধীনগরের অক্ষরধাম মন্দির দর্শন করেই উত্তর গুজরাতের বিজেপি-দুর্গে পা রাখলেন রাহুল গাঁধী। পাখির চোখ রইল পাতিদারদের ভোট। অক্ষরধাম মন্দিরটি ধর্মীয় গুরু স্বামীনারায়ণের। রাজ্যের লক্ষ লক্ষ পটেল সম্প্রদায়ের মানুষ তাঁর ভক্ত। সেই পটেলদের মধ্যেই পাতিদার সম্প্রদায়ের মানুষ এখন সংরক্ষণের দাবিতে বিজেপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে বিজেপির ২২ বছরের রাজত্বে ভাঙন ধরাতে তাঁরাই এখন মূল অস্ত্র কংগ্রেস সহ-সভাপতির। কাঁটা দিয়েই কাঁটা তোলার কৌশল নিয়েছেন তিনি।

মুখ ফিরিয়ে রাখা পাতিদারদের ভোট ধরে রাখতে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা এই সম্প্রদায়ের উপরে বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা ও ধর্মগুরুদের প্রভাবকেও হাতিয়ার করতে ছাড়ছেন না। মোদী নিজেই দিন দশেক আগে গাঁধীনগরের অক্ষরধাম মন্দিরের রৌপ্য জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। মন্দিরের অনুষ্ঠানেও রাজনীতির কথা না তুলে পারেননি। বলেছিলেন, ‘‘স্বামীনারায়ণ ভক্তদের একটা বড় অংশই পটেল। বরাবরই তাঁরা বিজেপির সঙ্গে থাকেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের একাংশ এখন সংরক্ষণের দাবিতে বিজেপির বিরুদ্ধে চলে গিয়েছে।’’

আজ সেই অক্ষরধাম মন্দিরে গিয়েই বিজেপির দুর্বল জায়গাটিতে হানা দিয়েছেন রাহুল। গুজরাতের চতুর্থ দফার প্রচারে আজ থেকে উত্তর গুজরাতের ছ’টি জেলার সফর শুরু করেছেন তিনি। এই জেলাগুলি এক কথায় বিজেপির দুর্গ। সেই ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাতে রাহুল অক্ষরধাম মন্দিরে গিয়েছেন বটে, তবে মন্দিরে গিয়ে রাজনীতি বা ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করেননি। তিনি বরং মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন জিএসটি নিয়ে। আবার আমজনতার ‘কাছের মানুষের মতো’ রাস্তার পাশে ধাবায় চা খেয়েছেন গুজরাতি ফাফড়া, জিলিপি আর তেলেভাজার সঙ্গে। প্রশংসাও করেছেন সেই চায়ের।

অক্ষরধাম মন্দিরে দর্শনের পরে কপালে তিলক কেটে মহন্ত স্বামীর আশীর্বাদ নেন রাহুল। সন্ধেয় যান বনাসকাণ্ঠার অম্বাজি মন্দিরে। গুজরাতে রাহুল প্রচারের শুরুটাই করেছিলেন দ্বারকাধীশ মন্দির থেকে। পাতিদার-অধ্যুষিত সৌরাষ্ট্র এলাকার একাধিক মন্দির-মঠে গিয়েছেন তিনি। দ্বারকা মন্দির, শারদাপীঠ থেকে ভালসাদের কৃষ্ণ মন্দির, দাহোদের কবীর মন্দির, রাজকোটের খোদালধাম মন্দির, সুরেন্দ্রনগরের চামুণ্ডা মাতা মন্দির— বাদ পড়ছে না কিছুই। আজ অক্ষরধামের যে স্বামীনারায়ণ মন্দিরে তিনি গেলেন, সেখানে পূজিত হন বিষ্ণু তথা নারায়ণ। মহাভারতের যুদ্ধে যাঁকে পক্ষে পেতে দরবার করেছিলেন দুর্যোধন ও যুধিষ্ঠির। এখন মোদী-রাহুল দু’জনেই সেই নারায়ণেরই শরণ নিচ্ছেন গুজরাতের কুরুক্ষেত্রে নর-নারায়ণকে পাশে পেতে।

স্বাভাবিক ভাবেই রাহুলের এই মন্দির দর্শনে মোটেই খুশি নয় বিজেপি। তাদের মতে, এটা কংগ্রেসের ‘নরম হিন্দুত্ব’। যার পাল্টা হিসেবে স্মৃতি ইরানি আজ অমেঠীর অনুন্নয়ন নিয়ে খোঁচা দেওয়ার পাশাপাশি, রাহুলের মন্দিরে যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেন। রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী নিতিন পটেলও বলেন, ‘‘রাহুল ভোটের আগেই শুধু মন্দিরে যাচ্ছেন কেন? মানুষ জানে, মনে ভক্তি নেই। এ সব ভোট পাওয়ার গিমিক।’’ সঙ্গে নিতিনের পরামর্শ, ‘‘ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষতা ছেড়ে মূল স্রোতের হিন্দুত্বকে সম্মান করুন।’’

এর জবাবে কংগ্রেসের শক্তিসিংহ গোহিল বলেন, ‘‘ওঁদের কি ভক্তিতেও পেটেন্ট নেওয়া রয়েছে। মন্দির দর্শনেও আপত্তি তোলেন ওঁরা। মানুষ ওঁদের উচিত শিক্ষা দেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE