Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Tripura Assembly Election

‘ভয়’ সরিয়ে ভোর থেকে রাত ভোট-লাইনে ত্রিপুরা

নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮১.১০%। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও প্রায় ১৬০০ ভোট-কেন্দ্রে যত মানুষ লাইনে ছিলেন, তাঁদের টোকেন দেওয়া হয়েছে।

Picture of Tripura Election.

বৃহস্পতিবার বেলা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত এই ভাবেই ভোটারের লাইন দেখা গেল গোটা ত্রিপুরা রাজ্য জুড়ে। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তেলিয়ামুড়া শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৮:০৫
Share: Save:

সকালের মিঠে রোদ তখনও দেখা দেয়নি। ঘড়ির কাঁটায় ভোটগ্রহণ শুরুর সময়ও হয়নি। তখনই জিরানিয়ার পশ্চিম মজলিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ভোট-কেন্দ্রের বাইরে কয়েকশো লোকের লাইন!

পাহাড়ি পথ ধরে উঠে গিয়ে রিয়াং বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়। মহিলা পরিচালিত নির্বাচন কমিশনের ‘মডেল’ ভোট-কেন্দ্র সাজানো রং-বেরঙের বেলুনে। তার বাইরেও মানুষের সর্পিল সারি। তখনও শুরু হয়নি ভোট নেওয়া!

দিনভর তো বটেই, বৃহস্পতিবার বেলা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত এই ভাবেই ভোটারের লাইন দেখা গেল গোটা ত্রিপুরা রাজ্য জুড়ে। সমতলের সাধারণ কেন্দ্র হোক বা পাহাড়ি এলাকায় জনজাতি-অধ্যুষিত আসন, সর্বত্র একই ছবি। বুথে যাওয়ার পথে বাধা দেওয়া, প্রার্থীর এজেন্টকে বার করে দেওয়া বা এজেন্টের গাড়িতে হামলা, বিপক্ষের সমর্থকদের উপরে চড়াও হওয়ার মতো বিক্ষিপ্ত কিছু গোলমাল ও অশান্তির অভিযোগ এসেছে ঠিকই। তবে ত্রিপুরায় গত পুরভোট বা বিধানসভার উপনির্বাচনের তুলনায় তা নেহাতই নগণ্য। বরং, সিপিএমের মানিক সরকারের প্রাক্তন নির্বাচনী কেন্দ্র ধনপুরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক যেখানে বিজেপির প্রার্থী, সেখানে ভোট দিতে বাধা পেয়ে মানুষকে রাস্তা অবরোধ করতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ এসে তাঁদের ভোট দিতে নিয়ে গিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের হিসেবে, বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৮১.১০%। কিন্তু সন্ধ্যার পরেও প্রায় ১৬০০ ভোট-কেন্দ্রে যত মানুষ লাইনে ছিলেন, তাঁদের টোকেন দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেব ধরলে ভোটদানের হার ৯২% ছাড়িয়ে যাবে বলে কমিশনের বক্তব্য। গত বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরায় প্রায় ৮৮% ভোট পড়েছিল, সে বার পালাবদল হয়েছিল। আবার এই রাজ্যেই ২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৯৩% ভোট পড়ার নজির আছে। তখন কিন্তু সরকার বদলায়নি।

রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কিরণ গিত্যের কথায়, ‘‘মানুষের ভোট দেওয়ার উৎসাহ ছিল অসাধারণ। আমরা মানুষকে আশ্বাস দিয়েছিলাম, হিংসাহীন নির্বাচন হবে। সেই আশ্বাসে মানুষ আস্থা রেখেছেন, তাঁদের কৃতজ্ঞতা জানাই।’’

বস্তুত, কাকভোর থেকেই দফতরে ছিলেন গিত্যে। সকলের ফোন ধরেছেন। অভিযোগ পেলেই কমিশন সেখানে পর্যবেক্ষক এবং পুলিশ পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে সব রাজনৈতিক দলই মেনে নিচ্ছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের ভারপ্রাপ্ত নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘কিছু জায়গায় ভয় দেখানো, বাইরের লোক এনে ছাপ্পা হয়েছে। বাংলায় ভোট হলে কমিশন যেমন আধা-সামরিক বাহিনী নিয়ে অতি সক্রিয় থাকে, এখানে সব ক্ষেত্রে তা ছিল না। তবে প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষ ভোট দিয়েছেন, আমরাও লড়াই করেছি।’’

এখন প্রশ্ন হল, সকাল থেকে লাইন দিয়ে, ভোটগ্রহণের ধীর গতি মেনে নিয়েও যে বিপুল সংখ্যায় মানুষ ভোট দিলেন, তাঁরা কি প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ছাপ রাখলেন? নাকি সরকারের প্রত্যাবর্তনের পক্ষে রায় দিলেন? এই নিয়ে ধন্দে রয়েছে শাসক ও বিরোধী সব পক্ষই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বুথে এজেন্ট ও প্রার্থীকে ঢুকতে না দেওয়া এবং হেনস্থার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত একমাত্র পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছেন শাসক দল বিজেপির গোলাঘাটি কেন্দ্রের প্রার্থী হিমানী দেববর্মা। সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক, তেলিয়ামুড়ার বিজেপি প্রার্থী কল্যাণী রায়কে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান ও বিক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছে।

ভোট দিয়ে বেরিয়ে সকালে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা দাবি করেছেন, ‘‘বাম ও কংগ্রেসের অশুভ আঁতাঁতের জন্যই বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বিজেপির জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই।’’ ভোটের পরে রাতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যেরও দাবি, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তাঁদের দল ক্ষমতায় ফিরছে। বিজেপি শিবিরের যুক্তি, বিপুল হারে ভোট পড়েছে এবং সেই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলই জয়ী হয়েছে, এমন একাধিক নজির অতীতে ত্রিপুরা ও বাংলায় আছে।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী আবার দাবি করছেন,‘‘অত্যাচার থেকে মুক্তি ও গণতন্ত্রকে বাঁচানোর জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েই সাহসে ভর করে মানুষ বিপুল সংখ্যায় ভোট দিতে বেরিয়েছেন।’’ কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মণের দাবি, ‘‘আমাদের বিশ্বাস, গুন্ডা-পান্ডাদের সরিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করতেই মানুষ এগিয়ে আসছেন।’’ তিপ্রা মথা-র শীর্ষ নেতা প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মারও দাবি, ‘‘জয় আমাদের নিশ্চিত!’’

কার দাবি ঠিক, বোঝা যাবে আগামী ২ মার্চ। সে দিনই ৬০ আসনের এই বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tripura Assembly Election Tripura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE