Advertisement
E-Paper

১০ ওষুধে আস্থা রাখছেন সৌমিত্রেরা

সৌমিত্রবাবুর কথায়, “দেশের ১৩০ কোটি মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিষেধকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব কী হবে, তার কোনও ধারণা নেই কারও।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৬:০১
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

করোনা থেকে পরিত্রাণ পেতে সবারই নজর প্রতিষেধকের দিকে। ভারতে করোনা প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ যে পর্যায়ে রয়েছে, তাতে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রতিষেধক বাজারে চলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু কতটা কার্যকরী হবে সেই প্রতিষেধক? অন্তঃসত্ত্বা বা দুধের শিশুদের কি তা দেওয়া যাবে? যাঁদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁরাও কি সহ্য করতে পারবেন প্রতিষেধকের ডোজ়? তাই প্রতিষেধক নয়, বর্তমানে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে, এমন ১০টি ওষুধের মধ্য থেকেই করোনার কার্যকরী দাওয়াই খুঁজে পাওয়া যেতে পারে বলে দাবি করলেন আইআইটি রুড়কীর এক দল বাঙালি গবেষক।

নির্দিষ্ট কোনও ওষুধ আবিষ্কার না-হওয়ায় করোনা সংক্রমণের গোড়ার থেকেই বেশ কিছু ওষুধকে ‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হচ্ছিল। আইআইটি-রুড়কীর গবেষক দলটির প্রধান সৌমিত্র শতপথী জানান, যে কোনও ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শেষ হতে পাঁচ থেকে দশ বছর সময় লাগে। বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। তাই এখানে ‘রিপারপাসিং’ পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে। যার অর্থ, স্বীকৃত যে ওষুধগুলি এখন রয়েছে, করোনার চিকিৎসায় সেগুলি ব্যবহার করা সম্ভব কি না, তা দেখা হবে। এ ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের গায়ে থাকা প্রোটিনের কাঁটা বা ‘স্পাইক’-এর উপরে এক-একটি ওষুধ কী প্রভাব ফেলছে, সেটা দেখা হয়। স্পাইকগুলি কার্যকারিতা হারালে ধরে নেওয়া হয় সফল হয়েছে ওই ওষুধ।

পদার্থবিদ্যার গবেষক সৌমিত্রবাবুরা এই ধরনের প্রায় ৪০ হাজার ওষুধ নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর প্রতিটিকে ধরে পরীক্ষা চালাতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। তাই যন্ত্রমেধার সাহায্যে দেখা হয়, এদের মধ্যে কোনগুলি সবচেয়ে কার্যকর। সৌমিত্রবাবু বলেন, “মেশিন লার্নিং মডেলে নাইভ বায়াস অ্যালগরিদম-এর মাধ্যমে প্রথমে ২০০টি, পরে ১০টি ওষুধকে চিহ্নিত করা হয়। যেগুলি ইতিমধ্যে ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)’-এর স্বীকৃত।”

যন্ত্রমেধাই বলে দিয়েছে, এই ১০টি ওষুধ করোনা রোগীদের ব্যবহারের প্রশ্নে সবচেয়ে উপযোগী হতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে অ্যামপ্রিনেভির। এচআইভি সংক্রমিতদের এই ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে। করোনা সংক্রমণ রোখার প্রশ্নে এটি দেশে ও বিদেশে কার্যকর ভূমিকা নিচ্ছে। এ ছাড়া ১০টি ওষুধের মধ্যে রয়েছে অ্যাটাজানাভির, রিটোনাভির, ইনডিনাভির-এর মতো ওষুধ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এদের সঙ্গে ভাইরাসের বিক্রিয়ায় দ্রুত শক্তি হারিয়েছে সেগুলির ‘স্পাইক প্রোটিন’। সৌমিত্রবাবুর দাবি, নতুন ওষুধ আবিষ্কার সময়ের ব্যাপার। ওই ১০টি ওষুধ নিয়ে গবেষণা করা হলে করোনার কার্যকর দাওয়াই মিলতে পারে। বিষয়টি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে জানিয়েছেন তাঁরা। ওই ১০ ওষুধের তালিকায় থাকা লোপিনাভির, ট্রিপানাভির-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগও শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে।

সৌমিত্রবাবুর কথায়, “দেশের ১৩০ কোটি মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিষেধকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব কী হবে, তার কোনও ধারণা নেই কারও। ফলে অন্তঃসত্ত্বা বা শিশুদের ওই টিকা দেওয়া মুশকিল। ক্যানসার বা এচআইভি রোগী যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের প্রতিষেধক দেওয়াও কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ওষুধ ব্যবহারের বিকল্প ভাবনা সেই সূত্রেই। কারণ এই ওষুধগুলি ইতিমধ্যেই পরীক্ষিত। এগুলির ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধে আমাদের ধারণা রয়েছে। কিন্তু প্রতিষেধকের ক্ষতিকর দিকটি এখনও অজানা।”

সৌমিত্রবাবুদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘পিএলওএস ওয়ান’ জার্নালে। সৌমিত্রবাবুর সঙ্গে এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন সোমেশ মহাপাত্র, প্রতুল নাথ, মনীষা চট্টোপাধ্যায়, নীলাদ্রিসিংহ দাস, দেবজ্যোতি কলিতা ও পার্থ রায়।

IIT Roorkee Coronavirus Covid-19 researchers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy