অখিলেশ যাদব সাইকেলেই সওয়ার হোন বা মোটরসাইকেলে, কংগ্রেস তাঁর হাত ধরছে। আর দেরি না করে চলতি সপ্তাহেই রাহুল গাঁধী ও অখিলেশ উত্তরপ্রদেশের ভোটে জোট বাঁধতে চলেছেন।
কংগ্রেস ও অখিলেশ শিবিরের খবর, দুই তরুণ নেতা আনুষ্ঠানিক ভাবে বৈঠকে বসবেন চলতি সপ্তাহেই। তার পরেই জোটের ঘোষণা হতে পারে। বর্তমানে আসন সমঝোতা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে দুই শিবিরে। রাজ্যের ৪০৪টি আসনের মধ্যে শ’খানেক আসনে লড়তে চায় কংগ্রেস। শেষ পর্যন্ত ৯০-এর কাছাকাছি আসন মিলতে পারে বলে আশা করছেন গুলাম নবি আজাদরা।
এই আসন সমঝোতাকে শুধু নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন না রাহুল-অখিলেশ। বিজেপিকে ঠেকাতে বিহারের ধাঁচে মহাজোট গড়ে তুলতে অজিত সিংহর রাষ্ট্রীয় লোকদল, নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ), এমনকী তৃণমূলকেও সঙ্গে চান তাঁরা। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে রাষ্ট্রীয় লোকদলের শক্তির কথা মাথায় রেখে তাদের ২০-২২টি আসন ছাড়া হতে পারে। জেডি(ইউ)-কে বিহার সীমান্তবর্তী পূর্ব-উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি আসন ছাড়া হতে পারে। গত বার তৃণমূল মথুরা আসনে জিতেছিল। পরে তাদের বিধায়ক মায়াবতীর দলে যোগ দেন। এ বারও তৃণমূলকে মথুরা বা বারাণসী আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। রাহুল-অখিলেশের ঘনিষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশে তৃণমূলের রাজনৈতিক শক্তি কতটা, সেটা বড় কথা নয়। এ ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির একজোট হওয়ার বার্তা দেওয়াটাই বেশি জরুরি। মুসলিম ভোট টানতেও মমতাকে পাশে রাখা জরুরি বলে মনে করছেন দুই শিবিরের নেতারা।
মুলায়ম সিংহ যাদব কিছু দিন আগেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেসের নেতারা বলছেন, সমাজবাদী পার্টির সিংহভাগ শক্তিই এখন অখিলেশের সঙ্গে। দল ভাঙুক বা না-ভাঙুক, অখিলেশই আসল সমাজবাদী পার্টি। তিনি সাইকেল প্রতীকে না লড়লেও অসুবিধে নেই। নিচুতলায় জোটের বাজনা বেজে গিয়েছে দুই শিবিরেই। উত্তরপ্রদেশে এই কংগ্রেসই প্রচারে নেমেছিল সকলের আগে। শীলা দীক্ষিতকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীও ঘোষণা করা হয়। শীলা পরে নিজেই জানিয়েছেন, জোট হলে অখিলেশই হবেন মুখ। অখিলেশও গত সপ্তাহে প্রিয়ঙ্কা বঢরার জন্মদিনে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পল যাদবের ছবি-সহ ব্যানারও পড়তে শুরু করেছে।
এই জোটের পিছনে দুই শিবিরেরই নিজস্ব কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাহুলের মূল লক্ষ্য, ২০১৯-এ মোদীর দিল্লির মসনদে ফেরা ঠেকানো। এর জন্য উত্তরপ্রদেশে বিজেপির হার নিশ্চিত করটা জরুরি। কিন্তু একা লড়ে রাজ্যে খুব একটা ভালো ফলের আশা করছে না কংগ্রেস। এই অবস্থায় অখিলেশদের সঙ্গে জোট বেঁধে ক্ষমতায় ফরতে পারলে সংগঠন মজবুত করাটা সহজ হবে। আবার অখিলেশ মনে করছেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বে যদি তাঁর ভোটব্যাঙ্কে ধাক্কা লেগে থাকে, তা হলে জোটের মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া, বাবার মতো তিনিও জাতীয় স্তরে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে চান। বিজেপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ জোটে থাকতে চান সে কারণেও।
এই জোটের ইঙ্গিতে বিপদ-ঘণ্টি বাজতে শুরু করেছে বহুজন সমাজ পার্টিতে। মায়াবতী এ দিন লখনউয়ে তাঁর জন্মদিনে দাবি করেছেন, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কারণে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হোক। তাঁর দাবি, সমাজবাদী পার্টি বা কংগ্রেস নয়, একমাত্র বসপা-ই উত্তরপ্রদেশে বিজেপির ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে পারে, ‘বুরে দিন’ (দুর্দিন) দেখাতে পারে মোদীর দলকে। মায়াবতী জানিয়েছেন, রাজ্যে একাই লড়বে তাঁর দল। পঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ডেও।
ঘর গোছানোর পাশাপাশি বিজেপি ব্যস্ত অখিলেশের মোকাবিলা করতে। গত কয়েক মাসে বসপার ১৫, কংগ্রেসে ৫, সমাজবাদী পার্টির ৩ ও রাষ্ট্রীয় লোকদলের ২ জন বিধায়ক বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন। এঁদের টিকিট দেওয়া হলে দলের নিচু তলায় বিদ্রোহ হতে পারে। সেই আশঙ্কা মাথায় নিয়ে আজ দিল্লিতে দলের নির্বাচনী কমিটি বৈঠকে বসেছিল প্রার্থী তালিকা ঠিক করতে। আলোচনা হবে কালও। এরই পাশাপাশি অখিলেশকে চাপে রাখতে তাঁর নিখরচায় স্মার্টফোন প্রকল্পের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশ ঠুকেছে বিজেপি। সেপ্টেম্বরে অখিলেশ ঘোষণা করেছিলেন, মাধ্যমিক পাশ এবং বছরে ৬ লক্ষ টাকার কম আয় হলেই বিনামূল্যে স্মার্টফোন মিলবে। বিজেপির অভিযোগ, ভোট ঘোষণার পরেও আদর্শ আচরণবিধি ভেঙে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্মার্টফোন পাওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy