বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে বিহার জুড়ে যে ভাবে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে, তাতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার। সে দিন প্রকাশ্য দিনের আলোয় পটনার বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-তে ঢুকে চন্দন মিশ্র নামে চিকিৎসাধীন এক অপরাধীকে খুন করে নিশ্চিন্তে পালায় অপরাধীরা। মূল অভিযুক্ত-সহ কয়েক জন পরে ধরা পড়লেও ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের দিকে আঙুল উঠতে শুরু করে দিয়েছে। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। বিরোধীদের অভিযোগ, বিহারে খুন-তন্ত্র কায়েম করেছেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও তাঁর জোটসঙ্গী বিজেপি তথা এনডিএ। এই পরিস্থিতিতে শাসক জোটের অস্বস্তি বাড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে পরোক্ষে নীতীশের দিকেই আঙুল তুলেছেন বিজেপির অন্যতম জোটসঙ্গী লোক জনশক্তি পার্টির (রামবিলাস) নেতা চিরাগ পাসওয়ান। পাশাপাশি আজ মুঙ্গেরে এক জনসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, তাঁকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে! তবে সরাসরি কারও নাম করেননি তিনি।
বিহারের পরপর খুন নিয়ে বিরোধীদের মতোই সরব হলেও চিরাগ বিজেপি তথা এনডিএ-র সঙ্গে বিষয়টির দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করছেন। তিনি আজ বলেন, “বিহারকে উন্নত রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারে, সেটা সবাই জানেন। ফলে এই অবস্থার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দোষ দেওয়াটা ঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, বিষয়টা আমাদের সবার জন্যই অত্যন্ত উদ্বেগের।”
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ভোটমুখী বিহারে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক সপ্তাহে রাজধানী পটনায় খুন হয়েছেন এক আইনজীবী ও দুই ব্যবসায়ী। এ ছাড়া শেখপুরায় খুন হয়েছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা। মধুবনী, মাধেপুরা ও সিওয়ান থেকেও বেশ কিছু খুনের অভিযোগ এসেছে। চিরাগের দাবি, এ সব থেকে রাজ্যের সরকারের ব্যর্থতা ও দুষ্কৃতীদের ঔদ্ধত্য স্পষ্ট হচ্ছে।
পটনার হাসপাতালে ওই দুষ্কৃতীকে খুনের ঘটনার পরেই এক্স হ্যান্ডলে চিরাগ লিখেছিলেন, “রোজই খুন হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের মনোবল আকাশ ছুঁয়েছে। প্রশাসন কী করছে, বোধগম্য হচ্ছে না।” এ বারে তাঁর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্তুতি এবং নীতীশকে নিশানা করা ঘিরে শুরু হয়েছে চর্চা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের মতে, চিরাগ মূলত দু’টি কারণে নীতীশকে নিশানা করছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্তুতি করে এক দিকে যেমন বিজেপি নেতৃত্বের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন, তেমনই ইতিমধ্যেই কোণঠাসা নীতীশকে আরও চাপে ফেলে রাজ্য রাজনীতিতে নিজের জমি শক্ত করতে চাইছেন। বিহার রাজনীতিতে নিজের কণ্ঠস্বর আরও জোরালো করে তুলতেই তাঁর এই সক্রিয়তা বলে মনে করছেন শাসক এবং বিরোধী— দু’পক্ষের নেতারাই।
নীতীশকে দুষলেও তাঁর এনডিএ-জোট ছাড়া নিয়ে বিতর্কে জল ঢেলেছেন চিরাগ নিজেই। বিহারে ভোটার তালিকায় কারচুপি সংক্রান্ত বিতর্কে বিরোধীদের উদ্দেশে তোপ দেগে তাঁর মন্তব্য, “প্রক্রিয়াটাই যখন সম্পূর্ণ হয়নি, কারচুপির অভিযোগ ওঠে কী করে? বিরোধী শিবির স্রেফ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।” ঠিক ভোটের আগে আগে তালিকা সংশোধন ঘিরে শীর্ষ কোর্টেও প্রশ্নের মুখে পড়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। চিরাগ তাদের পাশে দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন, “পুরোদস্তুর স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে কমিশন। সেটা না হলে আমরাও প্রশ্ন তুলতাম। অন্তত আমি এবং আমার দল তো প্রশ্ন তুলতই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)