Advertisement
E-Paper

পাক মাটিতে সার্ক বয়কট, বাণিজ্যেও সুবিধা বন্ধের ভাবনা

উরির হামলা নিয়ে পাকিস্তানকে আরও চাপে ফেলতে নভেম্বরে ইসলামাবাদের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবে না ভারত। সেই সঙ্গে পাকিস্তানকে দেওয়া বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ (মোস্ট ফেভার্ড নেশন বা এমএফএন) মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে দিল্লির দরবারে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:০৩

উরির হামলা নিয়ে পাকিস্তানকে আরও চাপে ফেলতে নভেম্বরে ইসলামাবাদের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবে না ভারত। সেই সঙ্গে পাকিস্তানকে দেওয়া বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ (মোস্ট ফেভার্ড নেশন বা এমএফএন) মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে দিল্লির দরবারে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সার্ক বৈঠক বয়কটি নিয়ে আজ সন্ধ্যায় বিদেশ মন্ত্রকের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সীমান্তপারের সন্ত্রাসে মদত দিয়ে ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে একটি দেশ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, যার ফলে ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন সফল করা সম্ভব নয়।’

যে হেতু শীর্ষ সম্মেলন, তাই ইসলামাবাদ যাওয়ার কথা ছিল খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কিন্তু উরির ঘটনার পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার জন্য বিপুল চাপ তাঁর উপরে। শাসক দলের একাংশ তো সীমান্ত পেরিয়ে পাল্টা হামলা চালানোর পক্ষপাতী। এই অবস্থায় যুদ্ধের সম্ভাবনা খারিজ করে কূটনৈতিক পথে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার কথা বলেছেন মোদী। সার্ক সম্মেলনে যোগ না-দেওয়া সেই চাপেরই একটি পর্যায়।

সার্ক বয়কটের এই সিদ্ধান্তে আরও তিনটি দেশকে পাশে পেয়ে গিয়েছে ভারত— আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও ভুটান। বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আরও কয়েকটি দেশ ইসলামাবাদের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে তাদের অনিচ্ছার কথা জানিয়ে দিয়েছে বলেই আমাদের ধারণা।’

সার্কের সনদ বলছে, কোনও একটি সদস্য দেশ যোগ না দিলেই শীর্ষ সম্মেলন বাতিল হয়ে যাবে। ভারত তাদের সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই সার্কের চেয়ার-দেশ নেপালকে জানিয়ে দিয়েছে। (২০১৪ সালে শেষ বার সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল নেপালে। তাই তারাই এখন সার্কের চেয়ার-দেশ। সেই সম্মেলনেই সিদ্ধান্ত হয় ২০১৫ বাদ দিয়ে ২০১৬-য় সম্মেলন হবে ইসলামাবাদে।) ভারতের বক্তব্য, তারা আঞ্চলিক সহযোগিতা, যোগাযোগ এবং পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতি দায়বদ্ধ। কিন্তু একই সঙ্গে তারা এটাও বিশ্বাস করে যে, একমাত্র সন্ত্রাসমুক্ত পরিস্থিতিতেই এই বিষয়গুলি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

সন্ত্রাস নিয়ে সার্কভুক্ত একাধিক দেশ এককাট্টা হওয়ায় এবং সার্ক সম্মেলন বাতিলের যাবতীয় দায় ইসলামাবাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ায় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরও চাপের মধ্যে পড়বে। তবে এ দিন তারা পাল্টা বক্তব্যে ভারতকেই দুষেছে। পাক বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমাদের সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। কিন্তু ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের টুইট থেকে আমরা সার্ক সম্মেলনে যোগ না-দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জেনেছি।’’ এই সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং ভারতের অভিযোগকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে পাকিস্তানের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘গোটা বিশ্ব জানে যে ভারত পাকিস্তানে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে এবং তাতে অর্থ জোগাচ্ছে।’’

সার্ক সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্ত ভারত-পাক সম্পর্কের সাম্প্রতিক টানাপড়েনে নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা জুড়ল। উরির ঘটনার পর থেকেই পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার যাবতীয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মোদী। পাকিস্তানকে পাল্টা আক্রমণের পথে যাওয়া যে সম্ভব নয়, সেটা তাঁকে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন তিন সামরিক বাহিনীর প্রধান। ফলে কূটনৈতিক পথে ইসলামাবাদকে বেঁধার রাস্তাই নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

কোঝিকোড়ে বিজেপির সভায় মোদীর বেঁধে দেওয়া পথ ধরেই গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার বক্তৃতায় পাকিস্তানকে আক্রমণ করেছেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তীক্ষ্ণ ভাষায় বলেছেন, কাশ্মীর কেড়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিক পাকিস্তান। অন্য দিকে জল বা বাণিজ্য নিয়েও ইসলামাবাদের উপরে চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিল্লি।

গত কালই সিন্ধু চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিয়ে মোদী বলেছেন, রক্ত আর জল একসঙ্গে বইতে পারে না। সিন্ধু নদী কমিশনের বৈঠকও বাতিল করে দিয়েছে ভারত। আজ অবশ্য তার জবাব দিয়েছে ইসলামাবাদ। নওয়াজ শরিফের বিদেশ বিষয়ক পরামর্শদাতা সরতাজ আজিজ পাল্টা বলেছেন, সিন্ধু জলচুক্তির মতো আন্তর্জাতিক বিষয়ে একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ভারত। তারা এই চুক্তি ভঙ্গ করতে চাইলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে ইসলামাবাদ।

ভারত অবশ্য চুক্তি ভেঙে বেরিয়ে আসার কথা ভাবছে না। বিশেষজ্ঞদেরও মত হল, ইসলামাবাদকে রক্তচক্ষু দেখানো এক জিনিস, চুক্তি ভঙ্গ করা আর এক। যেমন, সরকারি একটি সূত্র বলছে, চন্দ্রভাগা নদীতে তুলবুল জলবিদ্যুৎ প্রকল্প খতিয়ে দেখে পাকিস্তানে যাওয়া জল নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে। তাতে সীমান্তের ও-পারে জলাভাব দেখা দেবে। যদিও কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শাকিল আহমেদ রমশোর বক্তব্য, এই পথে হাঁটলে বেগ পেতে হবে ভারতকেই। কারণ, এ জন্য তাকে বিশাল জলাধার তৈরি করতে হবে, যা বাড়িয়ে দেবে জম্মু-কাশ্মীরে বন্যার সম্ভাবনা।

তাই আবেগের বশে কোনও রকম পদক্ষেপ না করার পরামর্শই মোদী সরকারকে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় সরকারি একটি সূত্রেরও বক্তব্য, ভারতের মূল লক্ষ্য হল এই চুক্তির আওতায় থাকা নদীগুলি থেকে আরও বেশি জল আদায় করা। যার অর্থ, ভারতের উদাসীনতায় পাকিস্তান এত দিন যে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছিল, তাতে লাগাম টানা।

বাণিজ্য ক্ষেত্রেও পাকিস্তানকে দেওয়া সুবিধা কেড়ে নিতে চাইছে ভারত। ভারত সেই ১৯৯৬ সালেই পাকিস্তানকে এমএফএন-এর তকমা দিয়েছে। এই তকমা মোতাবেক বাণিজ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও রকম বৈষম্য করে না ভারত। পাকিস্তান কিন্তু ভারতকে পাল্টা এমএফএন তকমা দেয়নি। ভারত এ বার পাকিস্তানকে দেওয়া ওই মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার কথা ভাবছে।

তবে অনেকেই মনে করছেন, পাকিস্তানকে দেওয়া এমএফএন-এর মর্যাদা ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও আসলে চাপের কৌশল ছাড়া কিছু নয়। কারণ, পারস্পরিক আস্থার অভাব এবং লাগাতার সন্ত্রাসের কারণে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ এতটাই কম, যে তাতে নিষেধাজ্ঞা আনাটা অর্থহীন। ভারতের মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাত্র ০.৪১ শতাংশ পাকিস্তানের সঙ্গে! দিল্লি মোট যা আমদানি-রফতানি করে তার ১ শতাংশের ভাগিদার ইসলামাবাদ। এমএফএন মর্যাদা দেওয়ার পরেও যার বিন্দুমাত্র উন্নতি দেখা যায়নি। এখনও আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখায় বাণিজ্য হয় পণ্য বিনিময় প্রথায়। এই যখন বাণিজ্যের হাল, তখন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারির আদৌ গুরুত্ব নেই, তা ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করছে বিদেশ মন্ত্রক।

URI SAARC Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy