পূর্ব লাদাখে ভারতের টহলদারির সীমা কমেছে চিনা সেনা গত দু’বছর পিছু না হটার জন্য। ভারত এবং চিনের মধ্যে ১৫ রাউন্ড সামরিক বৈঠকও হয়ে গিয়েছে। তাতেও বরফ গলেনি। এই পরিস্থিতিতে ভারতে এসে চিনের বিদেশমন্ত্রীর বার্তা, সম্পর্ক আগের মতোই স্বাভাবিক চলুক।
গোটা বিষয়টি বেজিংয়ের নির্দিষ্ট কৌশল এবং বিস্তৃত ফাঁদ বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ফিরে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, তাঁর সফরে সীমান্ত-জট এতটুকু কাটেনি। চিনা বিদেশমন্ত্রী তিনটি বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতকে। প্রথমত, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিতে দেখতে হবে। দুই, উন্নয়ন ও বৃদ্ধি যেন পরস্পরের জন্য লাভজনক হয়। তিন, বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানো।
ভারত স্পষ্ট জানিয়েছে, সীমান্ত সঙ্কট মেটানোর চেষ্টা না হলে সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সীমান্তের অস্থিরতা প্রভাব ফেলছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অন্যান্য দিকে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, চিনের প্রস্তাব মেনে দীর্ঘমেয়াদী ভাবে কোনও বিষয়কে ঝুলিয়ে রাখার অর্থ, নতুন বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া। চিনের বরাবরের কৌশল, যে জমি তারা একবার দখল করে নেয়, তাতে নিজেদের অধিকার কায়েম করে ফেলে। তারপর বাড়তি যা চায়, তা নিয়ে দরকষাকষি চালাতে থাকে। ফলে সাউথ ব্লক ভাবছে, সীমান্তের বর্তমান জটিলতাকে বেশি সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখলে চিনের সম্প্রসারণবাদের নীতি বহাল রাখার সুবিধা হয়ে যাবে।
নয়াদিল্লি মনে করছে, বেজিংয়ের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে— ইউক্রেন পরিস্থিতিতে ভারত ও চিনের অবস্থান এক। কারণ, দু’টি দেশই রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়া-বিরোধী প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, রাশিয়া-বিরোধী ভোটে ভা্রত অংশ নেয়নি ঠিকই। কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জে ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, রাশিয়ার আগ্রাসনকে সমর্থন করছে না দিল্লি। হিংসা অবিলম্বে বন্ধ করার আবেদন জানিয়ে ভারত বলেছে, আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ভূকৌশলগত যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তাতে ভারতকে পাশে দেখানোর চেষ্টা করছে রাশিয়া, চিন দু’দেশই। রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি করার পর চিন-রাশিয়া ব্লকের এই প্রয়াস আরও বেড়েছে। তবে বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, এই ফাঁদে তারা পা দিতে রাজি নয়।