Advertisement
১৭ মে ২০২৪

চিনকে রুখতে জাপানকে আরও কাছে চায় দিল্লি

এশিয়ায় চিনের মোকাবিলায় জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা আরও বাড়াতে চাইছে ভারত।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

এশিয়ায় চিনের মোকাবিলায় জাপানের সঙ্গে সহযোগিতা আরও বাড়াতে চাইছে ভারত।

গত কাল জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে। পরে এর প্রতিফলন দেখা গিয়েছে দু’দেশের যৌথ বিবৃতিতেও। কূটনৈতিক শিবিরের মত, পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠীর (এনএসজি) ভিয়েনা বৈঠকের আগে চিনের উপর পর্যাপ্ত চাপ তৈরি করার জন্যই এই পদক্ষেপ করেছে মোদী সরকার। দু’দেশের যৌথ বিবৃতিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবাধ এবং মুক্ত বাণিজ্য থেকে শুরু করে যৌথ নৌ- মহড়ার মতো বিষয়গুলি উল্লেখ করে চিনকে কড়া বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি-টোকিও। বোঝানো হয়েছে, এই এলাকায় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বাড়াবে ভারত ও জাপান।

এটা ঘটনা যে আমেরিকার পরামর্শ এবং কৌশলগত সহযোগিতায় ওই এলাকায় গত দু’বছর ধরে সক্রিয়তা বাড়াতে শুরু করেছে ভারত এবং জাপান। অতীতে বার বার ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে দক্ষিণ চিন সাগর এলাকায় জোর করে অস্থিরতা তৈরি এবং আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘন করেছে বেজিং। দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের মাত্রাতিরিক্ত হস্তক্ষেপ রুখতে আমেরিকা ও ‘মিত্র দেশগুলি’ সক্রিয় হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওয়াশিংটন। সেই ‘মিত্র’ দেশগুলির মধ্যে যে জাপান এবং ভারতও রয়েছে তা ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভারত এবং জাপান পর্যায়ক্রমে দক্ষিণ চিন সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। সম্প্রতি পূর্ব চিন সাগরে একটি দ্বীপ দখল প্রশ্নে জাপানের পাশে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকা। বেশ কিছু দিন ধরেই ওই দ্বীপটি নিজেদের বলে দাবি জানিয়ে আসছে চিন ও জাপান। পাশাপাশি চিনের চোখ রাঙানিকে অগ্রাহ্য করে এই অঞ্চলে অবাধ বাণিজ্যের আরও দুই দাবিদার ফিলিপিন্স আর ভিয়েতনামকে উপকূলরক্ষী বাহিনী দিয়ে সাহায্য করেছে জাপান।

অন্য দিকে মার্কিন হুঁশিয়ারিকে কার্যত উড়িয়ে বেজিংও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ চিন সাগরে আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি এত সহজে ছেড়ে দেবে না তারা। চার মাস আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যালের রায় চিনের বিপক্ষে গিয়েছে। কিন্তু বেজিং জানিয়েছে এই রায় তারা মেনে নেবে না। পাশাপাশি জাপানের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বেজিং ক্রমাগত তোপ দেগে চলছে আবে সরকারের বিরুদ্ধে।

এই অবস্থায় ফের একজোট হচ্ছে জাপান এবং ভারত। এ ক্ষেত্রে আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন কোনও অবস্থান নেন কি না সেটাও সতর্কতার সঙ্গে দেখে নিতে চাইছে এই দুই দেশ। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, ওবামা জমানার শেষ দিকে দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে কিছুটা ধীরে চলার পরামর্শ হোয়াইট হাউস দিয়েছিল সাউথ ব্লককে। এমনকী মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরির সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময়ে যে যৌথ বিবৃতি পেশ করা হয় সেখানেও এই বিষয়টি নিয়ে কোনও কড়া কথা ছিল না।

ভারতীয় কূটনীতিকরা জানাচ্ছেন, চিনের উপর ট্রাম্প অর্থনৈতিক চাপ বাড়াতে চান বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু কৌশলগত প্রশ্নে ভবিষ্যতে চিনের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়া (ডিল) ট্রাম্প করেন কি না তা আগে বুঝতে হবে। আবার ট্রাম্প জাপানের উপর থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষার ছাতা সরিয়ে নিতে পারেন বলেও মনে করেন টোকিও-র শাসকদের একাংশ। তাই মার্কিন নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরেই জাপানের সঙ্গে এই যৌথ বিবৃতি দিয়ে নতুন মার্কিন প্রশাসনের প্রতিও একটি বার্তা পাঠাতে চাইছে নয়াদিল্লি ও টোকিও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

china india japan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE