মুম্বইয়ের আকাশে বিমানের ঝাঁক। উপগ্রহ চিত্র।
কান ঝালাপালা হয়ে যাওয়ার জোগাড়। ‘মুম্বই কন্ট্রোল, ফ্লাইট নম্বর ... কলিং, প্লিজ রেসপন্স!’ তারস্বরে চিৎকার করে চলেছেন পাইলটেরা। মুম্বইয়ের আকাশসীমায় ঢুকে কত উচ্চতায়, কোন রুটে কত গতিতে তাঁরা যাবেন, জানতে চাইছেন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এর কাছে। অন্য দিকে মুম্বই এটিসি অফিসারেরা ক্রমাগত বলে চলেছেন, ‘মুম্বই কন্ট্রোল কলিং, ফ্লাইট নম্বর .... প্লিজ মেনটেন লেভেল।’
গত বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান তার আকাশপথ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। তার পর সপ্তাহ গড়িয়ে গিয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান গিয়ে ভিড় করছে মুম্বইয়ের আকাশে। স্যাটেলাইট ছবি দেখাচ্ছে, দিল্লির পশ্চিম আকাশ বেমালুম ফাঁকা। আর মুম্বইয়ের আকাশে বিমানে বিমানে প্রায় ঠোকাঠুকি লেগে যাওয়ার পরিস্থিতি।
সাত দিন ধরে অবস্থা সামাল দেওয়ার কৃতিত্বের পুরোটাই দাবি করতে পারেন মুম্বই এটিসি-র অফিসারেরা। সোমবার নাইট ডিউটি করে ফেরা এমনই এক অফিসারের সঙ্গে ফোনে কথা হল মঙ্গলবার বিকেলে। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণত আমাদের মাথার উপর দিয়ে দিনে ৭৫০ থেকে ৮০০ বিমান উড়ে যায়। গত কয়েক দিনে সেই সংখ্যাটা ১৩০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। প্রতিটি পাইলট চাইছেন, কাঙ্ক্ষিত উচ্চতা পেতে। তার জন্য ক্রমাগত আমাদের উপরে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন। না দিতে পারলেই বলছেন, ‘আমার কাছে বেশি জ্বালানি নেই। কাঙ্ক্ষিত উচ্চতা না পেলে এই জ্বালানি নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারব না।’ অথচ যে উচ্চতা তিনি চাইছেন, সেই উচ্চতায় তখন অন্য বিমান রয়েছে।’’
বিষয়টা কী রকম? বিমান টেক-অফ করার পরে তার ওজন, আবহাওয়া, গন্তব্যের দূরত্ব-সহ বেশ কিছু বিষয়ের উপরে নির্ভর করে পাইলট হিসেব কষে দেখেন, ঠিক কত গতিতে, কত উচ্চতা দিয়ে উড়ে গেলে সবচেয়ে কম জ্বালানি পুড়বে। গতি পাইলটের নিজের হাতে থাকে। কিন্তু উচ্চতার জন্য এটিসি-র মুখাপেক্ষী থাকতে হয়। কারণ ওই সময়ে ওই উচ্চতায় আর কোনও বিমান রয়েছে কি না, তা শুধু এটিসি-ই জানে। এয়ারবাস ৩২০-র মতো বিমানের ক্ষেত্রে সেই কাঙ্ক্ষিত উচ্চতা ৩৪ হাজার ফুটের কাছাকাছি থাকে। কিন্তু দূরপাল্লার এয়ারবাস ৩৩০ অথবা বোয়িং ৭৮৭-এর মতো বড় বিমানের ক্ষেত্রে ৩৮ হাজার থেকে ৪২ হাজারের মধ্যে সেই উচ্চতা হেরফের করে।
মুম্বই এটিসি-র ওই অফিসারের কথায়, ‘‘এখন একসঙ্গে এত বিমান চলে আসছে যে, কোনও কোনও বিমানকে ২২ হাজার ফুটেও নামিয়ে দিতে হচ্ছে। এ যেন অনেকটা ‘আপনার পাঁচ গিয়ারের গাড়ি রয়েছে আর আপনি দ্বিতীয় গিয়ারে জোরে গাড়ি চালাচ্ছেন’-এর মতো ঘটনা। এর ফলে হু হু করে জ্বালানি খরচ হচ্ছে বিমানের।’’ অফিসার জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বা কাছাকাছি দেশ থেকে অনেক বিমান উড়ে যায় মাসকট, দোহা, দুবাই, শারজায়। তারা আরব সাগর পেরিয়েই নেমে যেতে পারবে। ফলে তাদের জ্বালানি কমে গেলেও ক্ষতি হবে না। তাই এই বিমানগুলিকে তুলনায় নীচের আকাশ দিয়ে ওড়ানো হচ্ছে। আর সিঙ্গাপুর, হংকং, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ থেকে যে বিমানগুলি ইউরোপের দিকে উড়ে যাচ্ছে, তাদের উপরের আকাশে কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যাতে গন্তব্য পর্যন্ত জ্বালানি তাদের কাছে থাকে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মুম্বইয়ের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর কেশব শর্মা ফোনে মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আপৎকালীন পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছি।’’ ছুটি সবার বাতিল। সাধারণত প্রতি শিফটে যেখানে ৪০ জনের মতো অফিসার থাকেন, সেখানে এখন ৫৫ থেকে ৬০ জন অফিসার থাকছেন। নাইট ডিউটি করার পরে সামান্য বিশ্রাম নিয়েই সবাই আবার ছুটছেন অফিসে। এটিসি অফিসারের কথায়, ‘‘এমনিতেই ভারতে সবচেয়ে বেশি বিমান ওঠানামা করে মুম্বই থেকে। তাদেরও তো সামলাতে হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy