Advertisement
২৬ মার্চ ২০২৩

জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের প্রমাণ আছে, সময়মতো প্রকাশ্যে আনা হবে, জানাল ভারতীয় সেনা

বায়ুসেনার অফিসারেরা সরকারের কোর্টে বল ঠেলে জানিয়ে দিলেন, প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু তা কখন প্রকাশ্যে আনা হবে, তা সরকারের সিদ্ধান্ত। আর সরকার?

সাংবাদিক বৈঠকে  (বাঁ দিক থেকে) এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কপূর, মেজর জেনারেল সুরিন্দর সিংহ মাহাল এবং রেয়ার অ্যাডমিরাল দলবীর সিংহ গুজরাল। বৃস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

সাংবাদিক বৈঠকে (বাঁ দিক থেকে) এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কপূর, মেজর জেনারেল সুরিন্দর সিংহ মাহাল এবং রেয়ার অ্যাডমিরাল দলবীর সিংহ গুজরাল। বৃস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০২:৫২
Share: Save:

বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদের শিবিরে বায়ুসেনার প্রত্যাঘাতের রাজনৈতিক ফসল তুলতে সক্রিয় নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তিন দিন পরেও সেই প্রত্যাঘাতের কোনও প্রমাণ এখনও দেয়নি মোদী সরকার।

Advertisement

আজ বায়ুসেনার অফিসারেরা সরকারের কোর্টে বল ঠেলে জানিয়ে দিলেন, প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু তা কখন প্রকাশ্যে আনা হবে, তা সরকারের সিদ্ধান্ত। আর সরকার? আজ নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে অরুণ জেটলিকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

খাতায়-কলমে মোদী সরকারের দাবি, বালাকোটের শিবিরে মাসুদ আজহারের আত্মীয় ইউসুফ আজহারের নেতৃত্বে ভারতে ফিঁদায়ে হামলার প্রশিক্ষণ চলছিল। বায়ুসেনার বোমায় জইশ-এর কমান্ডার এবং বহু জঙ্গির মৃত্যু হয়। সরকারি সূত্রের দাবি ছিল, প্রায় ৩৫০ জঙ্গি মারা গিয়েছে। কিন্তু আজ বায়ুসেনার এয়ার ভাইস মার্শাল আর জি কে কপূর বলেন, ‘‘নিহত জঙ্গির সংখ্যা বলাটা এখনও ‘প্রিম্যাচিওর’।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘আমরা জইশ-শিবিরের নিশানা যে গুঁড়িয়ে দিয়েছি, লক্ষ্য যে পূরণ হয়েছে, তার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু কত জন নিহত হয়েছে, তার সংখ্যা জানানোটা এখনই উচিত হবে না।’’

বালাকোটের হামলা নিয়ে বিজেপি তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী নিজেও পুরোদমে ভোটের প্রচারে নেমে পড়েছেন। গত তিন দিন ধরেই মোদী দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সামনে বুক ঠুকে চলেছেন। আজ বিজ্ঞান ভবনে শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার দিতে গিয়ে বিজ্ঞানীদের সামনেও থেমে রইলেন না।

Advertisement

আরও পড়ুন: জটিল অঙ্ক কষে বিমান ঘুরিয়ে দিয়েই মুখরক্ষা

আজ সেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনা কর্তারা একসঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করলেন, পাকিস্তানই ভারতের সেনার উপর হামলা করে সীমান্তে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। সেনার মেজর জেনারেল সুরেন্দ্র সিংহ মাহাল হুমকির সুরে বলেন, ‘‘যদি শত্রুরা কোনও রকম উস্কানি দেয়, তা হলে ভারত সব রকম জবাব দেওয়ার জন্য তৈরি রয়েছে।’’ কিন্তু ভারতের সামরিক পরিকাঠামোয় হামলা চালিয়ে পাকিস্তান কার্যত যুদ্ধ শুরু করে দিল কি না, বা এর থেকে আর কী বেশি উস্কানি হতে পারে, তার জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন সেনা-কর্তা। তাঁর হুঁশিয়ারি, পাকিস্তান যত দিন সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেবে, তত দিন সন্ত্রাসবাদী শিবিরগুলিকে নিশানা করা হবে।

মুখে এখনও ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাব ধরে রাখলেও বাস্তব হল, আজ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে ছেড়ে দেওয়ার কথা আচমকা ঘোষণা করায় প্যাঁচে পড়ে যায় মোদী সরকার। ইমরান যে ভাবে ঠান্ডা মাথায় শান্তির বার্তা দিয়েছেন, তাতে মোদীর ‘যুদ্ধং দেহি’ মনোভাবই প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

আরও পড়ুন: হাওয়ার গতি উল্টো থাকাতেই পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েন অভিনন্দন

প্রথমে সেনা কর্তাদের এই সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়েছিল সাউথ ব্লকের দোতলায়, বিকেল পাঁচটায়। ঠিক ছিল, সেখানে পাকিস্তানকে কড়া ভাষায় শাসানি দেওয়া হবে। তার সঙ্গে বুধবার ভারতীয় বায়ুসেনা যে পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানকে গোলা ছুড়ে নামিয়েছে, তা বিশদে জানাবেন সেনাকর্তারা।

কিন্তু ইমরানের ঘোষণার পরে সাংবাদিক সম্মেলন সন্ধ্যা ৭টায় পিছিয়ে যায়। সন্ধ্যায় সাউথ ব্লকের উঠোনে দাঁড়িয়ে সেনা, বায়ুসেনা ও নৌসেনার কর্তারা দাবি করেন, পাকিস্তানই যুদ্ধের জিগির তুলছে। তা প্রমাণ করতে বায়ুসেনার এয়ার ভাইস মার্শাল দাবি করেন, পাকিস্তানের বায়ুসেনা এফ-১৬ নিয়ে সেনার ব্রিগেড ও ব্যাটেলিয়নের হেডকোয়ার্টারে নিশানা করেছিল। সেখানে বোমাও ফেলেছিল। তবে বিশেষ ক্ষতি হয়নি। তার পরেও নিয়ন্ত্রণরেখায় টানা গোলাবর্ষণ করছে পাকিস্তান।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, আমেরিকা পাকিস্তানকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করলেও তাতে শর্ত ছিল, শুধু সন্ত্রাসবাদী দমনের জন্যই এফ-১৬ কাজে লাগানো হবে। কিন্তু পাকিস্তান ভারতীয় সেনার উপরে হামলার জন্য তা ব্যবহার করেছে।
পাকিস্তানি সেনাও এফ-১৬ ব্যবহারের কথা স্বীকার করতে চায়নি। তবে তাদের দাবি, পাক বায়ুসেনার শক্তি জাহির করতেই ফাঁকা জায়গায় বোমা ফেলা হয়েছিল।

পাকিস্তানের ওই দাবি মিথ্যা প্রমাণ করতে আজ সামরিক বাহিনীর কর্তারা ভেঙে পড়া এফ-১৬ যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত ‘আমরাম’ ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ সাংবাদিকদের সামনে হাজির করেন। এফ-১৬ পাকিস্তানের এলাকায় ভেঙে পড়লেও নিয়ন্ত্রণরেখার এপারে, কাশ্মীরের পূর্ব রাজৌরিতে এই ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ মিলেছে।

সরকারি সূত্রে দাবি করা হচ্ছিল, পাকিস্তান আন্তর্জাতিক চাপের সামনে অভিনন্দনকে ছেড়ে দিতে রাজি। কিন্তু তার বিনিময়ে পাকিস্তান ভারতের হাতে বন্দি কোনও জঙ্গির মুক্তি চাইছে। যেমনটা কন্দহরে বিমান অপহরণের পরে মাসুদ আজহারের মুক্তি চেয়েছিল তালিবান। কিন্তু মোদী সরকার এমন কোনও বিনিময় প্রথায় যেতে রাজি নয়। মোদী সরকারের এই দাবি উড়িয়ে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, পাইলটের বিনিময়ে কোনও জঙ্গির মুক্তি চাওয়ার মতো ভুল পাক-সরকার করতেই পারে না। তা হলে প্রমাণ হয়ে যাবে, পাকিস্তান জঙ্গিদের মদত দেয়।

বিশেষজ্ঞদের সেই অনুমানই সত্যি হল। বিকেল পাঁচটার একটু আগে পাক সংসদে ইমরান ঘোষণা করে দেন, অভিনন্দনকে শুক্রবারই ছেড়ে দেওয়া হবে। এর পরেই হইচই শুরু হয়ে যায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে। ইমরানের ঘোষণার পরে কতখানি পাকিস্তান-বিরোধী কথাবার্তা বলা হবে, তা নিয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও সেনার কর্তাদের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। পাকিস্তানের ঘোষণার পরে কী বলা হবে, তা ঠিক করতে সাংবাদিক সম্মেলন পিছিয়েই দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.