রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলে ফের পাকিস্তানকে তুলোধনা করল ভারত। সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইসলামাবাদকে বেআব্রু করে নয়াদিল্লি বলল, পাকিস্তানের মতো দেশের মানবাধিকার নিয়ে বক্তৃতা মানায় না।
জেনেভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় ভারতীয় দূত মহম্মদ হুসেন বলেন, “যে দেশের মানবাধিকার রক্ষার রেকর্ড তলানিতে, মানবাধিকার নিয়ে বক্তৃতা দেওয়া তাদের মানায় না। ভারত এটিকে অত্যন্ত হাস্যকর বলে মনে করে। ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানোর জন্য তারা এই মঞ্চকে ব্যবহারের চেষ্টা করে। এটি তাদের ভণ্ডামিকেই প্রকাশ করে। এ সব অপপ্রচার ছড়ানোর পরিবর্তে তাদের উচিত নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মোকাবিলা করা।” বক্তৃতায় সরাসরি কোনও দেশের নামোল্লেখ না করলেও ভারতীয় দূতের নিশানায় যে পাকিস্তানই ছিল, তা স্পষ্ট।
বস্তুত, পাকিস্তানের বালোচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া— দুই প্রদেশেই বিদ্রোহীদের সামাল দিতে দৃশ্যত হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তানি বাহিনী। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অভিযানের ফলে প্রায়শই দুই প্রদেশেই সমস্যায় পড়তে হয় সাধারণ নাগরিকদেরও। সম্প্রতি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে একটি বিস্ফোরণে অন্তত ২৪ জনের মৃত্যু হয়। সংবাদ সংস্থা এপি-র তথ্য বলছে, নিহতদের মধ্যে মহিলা এবং শিশুও রয়েছে। এই প্রদেশে দীর্ঘ দিন ধরে সক্রিয় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) বা পাকিস্তানি তালিবান নামক জঙ্গিগোষ্ঠী। পাকিস্তানের স্থানীয় পুলিশের দাবি, জঙ্গিদের ডেরায় মজুত করে রাখা বোমা ফেটে এই বিস্ফোরণ। যদিও সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ( পিটিআই) দাবি করেছে, পাক সেনা হামলার কারণেই ওই বিস্ফোরণ। যদিও পাক প্রশাসন তা অস্বীকার করেছে। এই পরিস্থিতিতে জেনেভায় ভারতের এই বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
আরও পড়ুন:
গত মাসের শেষের দিকেও রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের সভায় পাকিস্তানের সমালোচনা করেছিল ভারত। নাম না-করে পাকিস্তানকে বিঁধে ভারতীয় দূত ক্ষিতিজ ত্যাগী বলেছিলেন, “নিজেদের লোকের উপরে বোমা ফেলা থেকে ফুরসত পেলে ওরা (পাকিস্তান) মানবাধিকার রক্ষায় নজর দিক।” তিনি বলেন, “একটি প্রতিনিধিদল ভারতের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন এবং উস্কানিমূলক বক্তব্যের জন্য এই মঞ্চের অপব্যবহার করে যাচ্ছে। আমাদের ভূখণ্ড (দখল)-এর লোভ ছেড়ে তাদের উচিত অবৈধ ভাবে দখল করে রাখা ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে সরে যাওয়া। এ সব ছেড়ে তাদের উচিত নিজেদের ‘লাইফ সাপোর্টে’ থাকা অর্থনীতি, সেনার হস্তক্ষেপে বিধ্বস্ত রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং মানবাধিকারের অবক্ষয় দূর করতে পদক্ষেপ করা। অবশ্য যদি তারা সন্ত্রাস ছড়ানো, রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘোষিত জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়া এবং নিজেদের লোকেদের উপর বোমা ফেলা থেকে অবকাশ পায়।”