Advertisement
০৭ মে ২০২৪
মোদী-পুতিন বৈঠক আজ

পাক সন্ত্রাসের ছায়ায় ঢাকছে ব্রিকসের মঞ্চ

উরি-সন্ত্রাসের ক্ষত এখনও টাটকা। ইসলামাবাদের বরাবরের ‘বন্ধু’ চিন বাদে প্রায় সব বড় দেশই উরির ঘটনা এবং পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করেছে। রাশিয়া সন্ত্রাসের নিন্দা করলেও পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় যোগ দিয়ে চাপ বাড়িয়েছে নয়াদিল্লির।

শুরু হচ্ছে ব্রিকস সম্মেলন। গোয়ার বেনলিমের সৈকতে চলছে নজরদারি। শুক্রবার। ছবি: রয়টার্স।

শুরু হচ্ছে ব্রিকস সম্মেলন। গোয়ার বেনলিমের সৈকতে চলছে নজরদারি। শুক্রবার। ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:১৩
Share: Save:

উরি-সন্ত্রাসের ক্ষত এখনও টাটকা। ইসলামাবাদের বরাবরের ‘বন্ধু’ চিন বাদে প্রায় সব বড় দেশই উরির ঘটনা এবং পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করেছে। রাশিয়া সন্ত্রাসের নিন্দা করলেও পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় যোগ দিয়ে চাপ বাড়িয়েছে নয়াদিল্লির।

এমন একটা আবহের মধ্যেই গোয়ার মাটিতে বৈঠকে বসছে ব্রাজিল-রাশিয়া-ভারত-চিন-দক্ষিণ আফ্রিকা— একযোগে ‘ব্রিকস’। শনি ও রবি, দু’দিন ধরে চলবে সম্মেলন। ব্রিকসের দুই মহা শক্তিধর দেশকে নিয়ে কপালে ভাঁজ থাকলেও সন্ত্রাসকে অস্ত্র করে পাকিস্তানকে আরও কোণঠাসা করার এমন সুযোগ কোনও ভাবেই হাতছাড়া করতে চায় না ভারত। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে থমকে যাওয়া সম্পর্কে উষ্ণতা ফেরাতেও মরিয়া দিল্লি।

আগামিকাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কালই মোদী কথা বলবেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর সঙ্গেও। পরের দিন, অর্থাৎ রবিবার ব্রিকস গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির প্রাথমিক বৈঠক। তার পর বিমস্টেকভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলির আলোচনা হওয়ার কথা।

এই বিভিন্ন বৈঠকে ভারতের পাখির চোখ— পাক সরকারের মদতে পুষ্ট সন্ত্রাসকে তথ্য সহযোগে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরা। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন শুক্রবারই সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছেন। সরকারি সূত্রের খবর, রবিবার ব্রিকস-এর ঘোষণাপত্রেও সন্ত্রাস প্রশ্নে কড়া ভাষায় নিন্দাপ্রস্তাব থাকবে।

সন্ত্রাস নিয়ে ইতিমধ্যেই পাকিস্তান বাদে সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলিকে পাশে পাওয়ার পরে এ বারে ভারতের লক্ষ্য দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে অন্য দেশগুলির সমর্থন জোগাড় করা। সে কারণেই কাল রাশিয়া এবং চিনের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে মোদীর আলোচনা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

পাক-প্রশ্নে কেন এত গুরুত্বপূর্ণ চিন এবং রাশিয়া?

উরি-কাণ্ডের পরে অন্যদের সঙ্গে মস্কোও সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করেছিল। কিন্তু নয়াদিল্লিকে অবাক করে তার পরেও পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক মহড়া দিয়েছিল তারা।

এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় দিল্লি। রাশিয়ার নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শারন সরাসরি বলেছিলেন, মস্কো এ ভাবে ইসলামাবাদের সঙ্গে হাত মেলালে আখেরে মস্কো-দিল্লি দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ধাক্কা খাবে। তখন শারন বলেছিলেন, ‘‘আমরা মস্কোকে জানিয়েছি যে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতির মধ্যেই রয়েছে সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি। এমন দেশের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা অত্যন্ত ভুল পদক্ষেপ।’’ মুখে এ কথা বলার পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বে পুরনো উষ্ণতা ফেরানোর চেষ্টাও চালিয়ে গিয়েছে ভারত।

তারই কিছুটা ছাপ পড়তে চলেছে আগামিকাল পুতিন-মোদী বৈঠকে। দু’দেশের মধ্যে অন্তত ১৮টি সামরিক চুক্তি সই হবে। যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র এস-৪০০ ভারতকে দেওয়া সংক্রান্ত চুক্তিও। মোদী শনিবার বৈঠক করবেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর সঙ্গেও। উরি-কাণ্ডের পরেও প্রকাশ্যেই পাকিস্তানের হয়ে সওয়াল করে যাচ্ছে চিন। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, মোদীর মুখোমুখি হওয়ার আগে বেজিং ধারাবাহিক ভাবে চাপ বাড়াচ্ছে নয়াদিল্লির উপর। যার সর্বশেষ উদাহরণ, আজ চিনা বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারের পাশেই থাকছে তারা। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় মাসুদকে রাখা নিয়ে ভারতের সঙ্গে ‘মতবিরোধ’ রয়েছে তাদের। কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এটা চিনের কৌশল। কারণ তারা বিলক্ষণ জানে, পাকিস্তান নিয়ে ভারত কতটা আগ্রাসী হবে। ‘বন্ধু’কে বাঁচাতে আগেভাগে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে তারা।

এটা স্পষ্ট যে, পাকিস্তানকে পাশে নিয়েই ভারতকে চাপে ফেলতে চায় বেজিং। ইসলামাবাদের সঙ্গে তাদের বিপুল অঙ্কের অর্থনৈতিক করিডর যে নয়াদিল্লির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলার জন্যই, সে ব্যাপারে কারও সন্দেহ নেই। কিন্তু চিনের আবার অন্য চাপও আছে। যে এলাকা দিয়ে ওই করিডর যাবে, সেটি জঙ্গি অধ্যুষিত। তা নিয়ে চিনা সরকারের অন্দরেও দ্বিধা কাজ করছে। কিন্তু ভারতকে চাপে রাখতে অন্তত প্রকাশ্যে বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করছে চিনা সরকার।

এই পরিস্থিতিতে আগামিকাল রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে পুরনো উষ্ণতা ফিরলেও চিনের প্রাচীর টপকে বন্ধুত্বের হাওয়া ঢোকা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BRICS goa India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE