Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
রেলের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন
Indian Railways

দুর্ঘটনা এড়াতে নজরদারি বাড়ানোয় জোর

রেল সূত্রের খবর, মাত্র চার দিনের ব্যবধানে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে দু’টি বড় দুর্ঘটনার পরে সুরক্ষা সংক্রান্ত নজরদারি নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে।

সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভাগে কর্মীর বহু পদ ফাঁকা বলে অভিযোগ রেলের কর্মী ইউনিয়নগুলোর।

সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভাগে কর্মীর বহু পদ ফাঁকা বলে অভিযোগ রেলের কর্মী ইউনিয়নগুলোর। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২২ ০৮:১৬
Share: Save:

মোদী সরকারের উন্নয়নের মডেলে প্রায়ই রেলের নানা সাফল্যের কথা তুলে ধরা হয়। সরকারি ভাবনার সঙ্গে তাল রেখে রেলের পক্ষ থেকেও অহরহ নতুন প্রকল্প, প্রযুক্তি, পণ্য পরিবহণে সাফল্যের প্রচার উঠে আসে। কিন্তু, সরকারি প্রচারের ঢক্কা নিনাদ সত্ত্বেও সুরক্ষা সংক্রান্ত ফাঁক-ফোকর থেকে যাওয়ার অভিযোগ যে মুছে ফেলা যাচ্ছে না, তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন রেল কর্তারা।

রেল সূত্রের খবর, মাত্র চার দিনের ব্যবধানে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে দু’টি বড় দুর্ঘটনার পরে সুরক্ষা সংক্রান্ত নজরদারি নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠেছে।

নতুন করে অস্বস্তি এড়াতে গত ২৮ অক্টোবর থেকে তড়িঘড়ি সারা দেশে এক মাসের জন্য বিশেষ নজরদারি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে রেল বোর্ড। বিভিন্ন জ়োনের অধীনে থাকা ডিভিশনের কর্তাদের সরাসরি ওই নজরদারি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের ন্যূনতম ফাঁক-ফোকর ধরতে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ লাইনে রাতের দিকে শীর্ষ আধিকারিকদের ট্রেনের চালকের কামরা থেকে সরাসরি 'ফুটপ্লেট ইন্সপেকশন' বা ইঞ্জিনথেকে নজরদারি চালানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

গত ২৩ অক্টোবর কানপুর-প্রয়াগরাজ শাখায় রামওয়া স্টেশনের কাছে মুঘলসরাই সংলগ্ন দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশনগামী একটি খালি মালগাড়ির ২৯টি কামরা বেলাইন হয়ে যায়। ওই ঘটনার পরপরই গত ২৬ অক্টোবর পূর্ব-মধ্য রেলের ধানবাদ শাখায় সাতসকালে একটি কয়লা ভর্তি মালগাড়ির ৫৩টি ওয়াগন একসঙ্গে লাইনচ্যুত হয়। সে দিনের দুর্ঘটনায় কোনও প্রাণহানি না হলেও দুর্ঘটনার ভয়াবহতায় শিউরে উঠেছেন স্থানীয়রা। ওই মালগাড়ি টেনে নিয়ে যাওয়া ইঞ্জিনের গতি এতটাই ছিল যে একের পর এক ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরেও প্রায় উল্টে যাওয়া ওয়াগনকে লাইনের উপর দিয়ে ঘষটাতে ঘষটাতে টেনে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে ইঞ্জিনকে। দুর্ঘটনার অব্যবহিত পরে ধুলোর ঝড়ে ঢেকে যায় চারপাশ।

উত্তরপ্রদেশে প্রথম দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে একাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল করা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ একাধিক ট্রেনকে পণ্যবাহী করিডোর দিয়ে ঘুরিয়ে দিতে হয়। তার মধ্যে কালকা মেলের মতো ট্রেনও ছিল।

পরের দুর্ঘটনাটি ধানবাদ ডিভিশনের কোডরমা শাখায় গুরপা স্টেশনে ঘটে। ওই দুর্ঘটনার তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে ওই শাখায় এখনও ট্রেন চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। দূরপাল্লার বহু ট্রেন এখনও তার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক দেরিতে চলছে। একাধিক ট্রেনকে পটনা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়ার পরেও পরিস্থিতি পুরোপুরি আয়ত্তে আসেনি। ওই ঘটনার পরেই তড়িঘড়ি রেল বোর্ডের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেই রেল সূত্রের খবর।

রেল বোর্ডের জারি করা নির্দেশে ট্র্যাক, ইঞ্জিন, কোচ, ওয়াগনের সাধারণ স্বাস্থ্যের উপরে নজর দেওয়ার পাশাপাশি তাদের রক্ষণাবেক্ষণে কোথাও ফাঁক-ফোকর থাকছে কিনা, তা কঠোর ভাবে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক দু’টি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই ট্র্যাক বা লাইন ছাড়াও মালগাড়ির ত্রুটির অভিযোগ সামনে এসেছে। রেলের সমস্ত ডিভিশনের ম্যানেজার বা সহকারী ম্যানেজারদের রাতে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও সমস্ত স্তরে রক্ষণাবেক্ষণে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সামনে শীতের মরশুম আসায় লাইনের সমস্যা থেকে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা আরও বাড়বে। ফলে, সে দিকে তাকিয়েই ওই নির্দেশ বলে খবর।

রেলের অন্দর মহল জানিয়েছে, যে ভাবে গুরুত্বপূর্ণ লাইনে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে তাতে যাত্রিবাহী ট্রেন হলে বহু মানুষের প্রাণহানি হতে পারত। চলতি বছরের শুরুতে উত্তরবঙ্গে ময়নাগুড়ির রেল দুর্ঘটনার জেরে যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। রেলের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, বছরভর নজরদারি চললেও এখন আয় বাড়াতে পণ্য পরিবহণের উপর জোর বেড়েছে। মালবাহী ট্রেন চালানোর জন্য আরও বেশি নজরদারি চালাতে যত কর্মীর প্রয়োজন, তার তুলনায় কর্মী সংখ্যা অনেক কম। সুরক্ষা সংক্রান্ত বিভাগে কর্মীর বহু পদ ফাঁকা বলে অভিযোগ রেলের কর্মী ইউনিয়নগুলোর। ফলে, তড়িঘড়ি নজরদারি বাড়ালেও তা দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways accidents
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE