জাভেদ হাবিব
ক্ষমা চাওয়া হয়েছিল, সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বিজ্ঞাপন। তাতেও রোষের মুখে বিশিষ্ট হেয়ার স্টাইলিস্ট জাভেদ হাবিব। পুজোর বিজ্ঞাপনে দেবদেবীদের ছবির ব্যবহার কোনও নতুন জিনিস নয়। এমনকী সেটা পুজোর বিজ্ঞাপনের অন্যতম বিশেষত্ব বলেই স্বীকৃত ছিল এত দিন। দুর্গাকে ঘরের মেয়ে হিসেবে দেখাটাই সেখানে রীতি। হিন্দুত্ববাদীদের আক্রমণ এ বার তাই নিয়েও।
শুক্রবার সন্ধেয় ধানবাদ এবং শনিবার উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে হাবিবের পার্লারে ভাঙচুর চালিয়েছে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সদস্যরা। দেশ জুড়ে ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতা এবং ঐতিহ্যের নামে উৎকট গোঁড়ামি চাপিয়ে দেওয়ার যে প্রয়াস চলছে, এই ঘটনা সেই তালিকা়তেই নতুন সংযোজন বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: জেএনইউ দখলে আবার ব্যর্থ সঙ্ঘ
দেশ জুড়ে বিভিন্ন শহরে হাবিবের পার্লার আছে। বিতর্কের সূত্রপাত ক’দিন আগেই। দুর্গাপুজো উপলক্ষে হাবিবের সংস্থা একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে। সেখানে দেখানো হয়েছিল, মা দুর্গা তাঁর ছেলেমেয়েদের নিয়ে চুল কাটতে এসেছেন। কলকাতার গেরুয়া শিবিরের একাংশ তাই নিয়ে হইচই শুরু করে। দেবদেবীদের অপমান করা হয়েছে বলে হইচই জোড়ে। বিতর্ক বাড়াতে না চেয়ে হাবিব নিজে ক্ষমাও চেয়ে নেন। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখিত ভাবে ক্ষমা চান। একটি ভিডিও বার্তাও পোস্ট করেন। বারবারই বলেন, যা ঘটেছে তা অনভিপ্রেত। কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। যদিও নাগরিক সমাজের অনেকেই মনে করেন, বিজ্ঞাপনটিতে আপত্তিকর কিছুই নেই। জাভেদকে যে তার জন্য ক্ষমা চাইতে হচ্ছে, সেটাই যথেষ্ট বাড়াবাড়ি। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভূত চর্চাও হয়।
কিন্তু দেখাই যাচ্ছে, এর পরেও মিটতে দেওয়া হয়নি বিষয়টি। হাবিবের নামে মামলা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধেয় ধানবাদের ব্যাঙ্ক মোড়ে হাবিবের পার্লারে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। দোকানের সাইনবোর্ডে, হাবিবের ছবিতে কালি লাগানো হয়। তাণ্ডব চলে পার্লারের ভিতরেও। পুলিশ কয়েক জনকে আটক করেছে।
এ দিন উত্তরপ্রদেশের উন্নাও জেলাতেও একই কাণ্ড। হাবিবের সেলুনে ভাঙচুর করা হয়। আটকে পড়েন খদ্দেররা। দুষ্কৃতীরা পার্লারের মালিককে হুমকি দিয়ে বলে, পার্লার বন্ধ করে না দিলে আরও বিপদ আসছে। হিন্দু জাগরণ মঞ্চের আঞ্চলিক সম্পাদক বিমল দ্বিবেদী নিজেই গলা চড়িয়ে বলেছেন, দেবতাদের অপমান সহ্য করা হবে না।
এমনিতেই কখনও গো-রক্ষার নামে সন্ত্রাস, কখনও প্রতিবাদী লেখক-সাংবাদিককে খুন নিত্য ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ বার নিপাট এক বিজ্ঞাপন নিয়েও এ ধরনের গুন্ডামি হচ্ছে দেখে নাগরিক সমাজের বড় অংশই হতভম্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy