৩৪ হাজার ফুট উঁচুতে আঙ্কারার আকাশে বিমান। ঘুমিয়ে পড়েছিলেন পাইলট। তাঁর জায়গায় বিমান সামলানোর দায়িত্বে যিনি ছিলেন, সেই কো-পাইলট তখন ইলেকট্রনিক ফ্লাইট ব্যাগ (ইএফবি) দেখতে ব্যস্ত। আর ঠিক সেই সময়ই হুড়মুড়িয়ে পাঁচ হাজার ফুট নেমে এসেছিল বিমানটি। আঙ্কারার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) খেয়াল না করলে মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যেতে পারত বড়সড় কোনও দুর্ঘটনা। এটিসির নির্দেশেই তড়িঘড়ি বিমানটিকে ৩২ হাজার ফুট উচ্চতায় তুলে আনেন পাইলট। দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও গত শুক্রবারের এই বিপর্যয়ের খবর সামনে আসার পড়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ওই বিমানের দুই চালককেই আপাতত সাসপেন্ড করেছে ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)।
এমনিতেই তুরস্কের আকাশ এখন প্রবল ব্যস্ত। ইরাক এবং ইউক্রেনের আকাশ এড়ানোর জন্য আপাতত ওই রাস্তা দিয়ে প্রচুর বিমান যাতায়াত করে। এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আকাশ পথ এটি। তাই সে দিন আঙ্কারার আকাশ সীমায় ২৯ হাজার ফুটে অন্য যে কোনও বিমান থাকার সম্ভাবনা ছিল। এটিসি বিষয়টি না দেখলে কত বড় বিপত্তি ঘটতে পারত, তা ভেবেই শিউরে উঠছেন অনেকে।
গত শুক্রবার ২৮০ জন যাত্রী নিয়ে মুম্বই থেকে ব্রাসেলস হয়ে নেওয়ার্ক যাচ্ছিল জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইট ৯ ডব্লিউ-২২৮। বোয়িং ৭৭৭-৩০০ বিমানটি তখন তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার আকাশে। হঠাৎই এটিসি বিষয়টি লক্ষ্য করে। বিমানের কো-পাইলটের কাছে তারা জানতে চায়, কেন ২৯ হাজার ফুটে নেমে এসেছে বিমনাটি। তখনই সম্বিৎ ফেরে তাঁর। দেখেন, সত্যিই বিমান তখন নির্ধারিত উচ্চতা থেকে ৫ হাজার ফুট নীচে চলে এসেছে। তিনি পাইলটকে ডাকেন।
কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, পাইলট এবং কো-পাইলট কেউই বিষয়টি বিমান সংস্থার নজরে আনেননি। সাধারণত বিমানের যাত্রা পথে এই ধরনের কোনও বড় বিপত্তি ঘটলে পাইলটকে রিপোর্ট করতে হয় সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থার কাছে। কিন্তু ওই বিমানের দুই পাইলট এমন কিছুই করেননি। উল্টে এই ঘটনার পরেও নিয়মিত বিমান চালিয়েছেন তাঁরা। দিন দু’য়েক আগে বিষয়টি ডিজিসিএ-র নজরে আসে। একটি এসএমএসের মাধ্যমে। তার পরই ডেকে পাঠানো হয় ওই দুই পাইলটকে। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত সংক্রান্ত একটি বোর্ড এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করবে। এতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগতে পারে। তার পরই জানা যাবে পাইলটদের শাস্তির পরিমাণ ঠিক কতটা হতে পারে। এ ছাড়া আলাদা করে তদন্ত করছে জেট এয়ারওয়েজও। ডিজিসিএ-র এক আধিকারিক বলেছেন, “তদন্তের বিষয়ে বিমান সংস্থা সব রকম তথ্য দিয়ে সাহায্য করছে। জেট এয়ারওয়েজের কাছে যাত্রী সুরক্ষাই সবচেয়ে বড় বিষয়। তা করতে ওই বিমান সংস্থা সব রকম ব্যবস্থা নেবে বলেই আমাদের আশা।” অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু বলেছেন, “তদন্ত চলছে। আমরা রিপোর্টের অপেক্ষা করছি। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা ঘটা উচিত নয়। দুই পাইলটের লাইসেন্স সাসপেন্ড করা হয়েছে। আইন আইনের পথে চলবে।”
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সে দিন পাইলট ‘কন্ট্রোলড রেস্ট’ নিচ্ছিলেন। আন্তর্জাতিক উড়ানের ক্ষেত্রে লম্বা পথ যাওয়ার সময় পাইলটরা একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী বিষয়টা বৈধ। এখানেই বিশেষ করে প্রশ্ন উঠেছে কো-পাইলটের ভূমিকা নিয়ে। ইএফবি আসলে একটি ট্যাবলেট। বিমান সংক্রান্ত তথ্য থাকে সেখানে। যা প্রয়োজনে দেখে নিতে পারেন পাইলটরা। অনেকেরই প্রশ্ন, সে দিন কো-পাইলট তাতে কী দেখছিলেন যে এত বড় একটা বিষয় তাঁর চোখে পড়ল না! তবে কি পাইলটের মতো তিনিও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন? বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরে ট্যাবলেট দেখার অজুহাত দেন? এ নিয়ে মুখে কুলুপ ডিজিসিএ-র। তবে সে দিন বিমানে কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিন সদস্যের একটি কমিটি বিমান সংস্থার পাইলটদের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া অডিট করে দেখবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিজিসিএ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy