Advertisement
E-Paper

মরিয়া মাওবাদীরা, ভোট দেবে তো গ্রাম?

পলামুর সব থেকে বিপজ্জনক এই মাওবাদী এলাকায় আপনাকে ‘স্বাগত’ জানাতে তৈরি সিআরপিএফের নাকা। এলাকার নাম—লাভার নাকা। প্রখণ্ড বরওয়াডি। জিলা লাতেহার।

সুব্রত বসু

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৬
চলছে ভোটের প্রস্তুতি।

চলছে ভোটের প্রস্তুতি।

ঘন অরণ্যের মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে চলেছে রাস্তা। ভরদুপুরেও চারদিক সুনসান।

হঠাৎই প্রায় আশি ডিগ্রি বাঁক নিয়ে গাড়ি উঠে পড়ল ছোট্ট কালভার্টের উপর। চালক মুকেশ সিংহ বলেলেন, ‘‘এই কালভার্ট উড়িয়ে দিয়েছিল মাওবাদীরা। ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল দশ জওয়ানের দেহ।’’ একটু থেমে ফের বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময়ে চারটি বিস্ফোরণ হয়েছে এই রাস্তায়। মারা গিয়েছেন অনেকে।’’

পলামুর সব থেকে বিপজ্জনক এই মাওবাদী এলাকায় আপনাকে ‘স্বাগত’ জানাতে তৈরি সিআরপিএফের নাকা। এলাকার নাম—লাভার নাকা। প্রখণ্ড বরওয়াডি। জিলা লাতেহার।তল্লাশি হল গাড়ি। তিন জন জওয়ান খুঁটিয়ে দেখলেন পরিচয়পত্র। ভোট দেখতে কলকাতা থেকে এসেছি শুনে এক জন বললেন, ‘‘গাঁওমে জানা হ্যায়, জাইয়ে। মগর কই আপসে বাত নাহি করেগা। সবলোগ ডরে হুয়ে হ্যায়।’’

‘ডর’ যে কতটা থাবা বসিয়েছে, তা বেতলা থেকে নেতারহাট যাওয়ার এই নিরালা রাস্তায় ঢুকেই মালুম হয়েছে। রাস্তার কয়েকশো মিটার অন্তর স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে আধা সামরিক বাহিনী। কাল, শনিবার ভোট। ইভিএম এবং ভোটকর্মীদের জন্য গোটা এলাকা ‘স্যানিটাইজ’ করা চলছে।

লাভার থেকে কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে যে গ্রামটি সামনে পড়ে তার নাম ‘মুণ্ডু’। সবার মুখে কুলুপ। প্রায় আধ ঘণ্টার চেষ্টায় চায়ের দোকানে বসে ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে মুখ খুললেন কয়েকজন।

জানা গেল, এই সব এলাকার গভীর জঙ্গলে কয়েক বছর আগে পাকাপোক্ত ঘাঁটি গেড়েছিলেন মাওবাদীরা। খণ্ডহর হয়ে পড়ে থাকা পলামু কেল্লার উপরের পাহাড়ে চলত অস্ত্র প্রশিক্ষণ। মাঝে মাঝে খাবার সংগ্রহে তাঁরা আসতেন গ্রামগুলিতে। তবে গ্রামে ঢোকার আগে কোনও বিপদ আছে কি না, তার খোঁজ নিয়ে যেত বাল-দস্তা (শিশু-ফৌজ)। এক গ্রামবাসী জানালেন, ১০-১২ বছরের শিশুরা ছাগল চরানোর ভান করে পরিস্থিতি বুঝতে আসত গ্রামের বাইরে। পিছনে থাকত বড়দের ফৌজ। একজন জানালেন, জঙ্গলের মধ্যে কাঠ কাটতে গিয়ে তিনি এক বার ধরা পড়েছিলেন মাওবাদী এরিয়া কমান্ডার নির্মলাদিদি-র দলের হাতে। দীর্ঘক্ষণ জেরা করে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরেই তাঁর মুক্তি মেলে।

নির্মলাদিদি ছাড়াও এই এলাকায় প্রভাব ছিল রবীন্দ্র, করিম এবং সনাতনের দলের। গ্রামবাসীদের কথায়, এঁদের অনেকেই এনকাউন্টারে মারা গিয়েছেন, বা চলে গিয়েছেন ছত্তীসগঢ়ের দিকে। অনেকে আবার আত্মসমর্পণও করেছেন। এলাকা এখন অনেকটাই মাওবাদী-মুক্ত। মাওবাদী দমনের সঙ্গে যুক্ত এক কর্তা বলেন, ‘‘২০১৪ সালে রাজ্যে ৩৯৭টি মাওবাদী হিংসার ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৯ সালে এখনও পর্যন্ত ১১৯টি হয়েছে। ফি বছর গড়ে ২৮ জন করে মাওবাদী আত্মসমর্পণ করছে।’’

কী করে কমানো গেল মাওবাদীদের দাপট? প্রশাসনের ওই কর্তা বলছিলেন, ‘‘এর বড় কৃতিত্ব সিআরপিএফের। রাজ্য পুলিশ পেরে উঠছিল না। তাই পলামূতে বসানো হয়েছে সিআরপিএফের স্থায়ী ক্যাম্প। এলাকা কার্যত মুড়ে ফেলা হয়েছে ফৌজ দিয়ে। এছাড়া, গ্রামের লোকেদের অনেকেই ওদের অনেক গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য মানতে পারছিলেন না। তাঁরাও মুক্তি চাইছিলেন। আর এই কাজে সহায়তা করেছে মোবাইল ফোন। তবে তা দিয়ে শুধু ওদের টাওয়ার লোকেশন পেয়েছি, তা নয়। বরং লোকেশন লুকোতে মাওবাদীরা মোবাইল ব্যবহারে অনেক সতর্ক।’’ তা হলে? জবাব এল, ‘‘এখন গ্রামের ঘরে ঘরে মোবাইল। গ্রামে মাওবাদী ঢুকলেই খবর চলে আসে। ঠিক খবর দিলে গ্রামের লোক ইনাম পান। এই অস্ত্রেই কাবু হয়েছে অনেক মাওবাদী। তবে শেষ হয়ে যায়নি। উল্টে অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে মরিয়া তারা।’’

আর এ জন্যই কাল, শনিবার পলামুর ১৩টি আসনে বড় পরীক্ষা। গ্রামের মানুষ যাতে ভোট দিতে আসেন, তার জন্য চলছে প্রচার, টাঙানো হয়েছে বড় বড় ফ্লেক্স। তৈরি আধা সামরিক বাহিনী।

অন্য দিকে, হীনবল কিন্তু অস্তিত্ব প্রমাণে মরিয়া মাওবাদীরা।

Jharkhand Assembly Election Palamau Tiger Reserve CRPF Maoist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy