জিতনরাম ও রামবিলাস।
যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে অমিত শাহ এনডিএ-র ঐক্যের ছবি তুলে ধরেছিলেন কাল। তাতে যে চিঁড়ে ভেজেনি সেটা বুঝলেন অচিরেই। বিহারে কে বড় দলিত নেতা—এ নিয়ে রামবিলাস পাসোয়ান ও জিতনরাম মাঁঝির লড়াই এখন তাঁর নতুন মাথাব্যথা। ভোটের বাজারে দুই নেতাই নিজের ক্ষমতা দেখাতে মরিয়া।
জিতনরামকে বুঝিয়ে ২০টি আসনে রাজি করিয়েছেন অমিত। আরও কয়েকটি আসনে জিতনরামের প্রার্থীকে বিজেপির টিকিট দিতে সম্মত হয়েছেন। কিন্তু এই ‘গোপন’ সমঝোতার খবর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত টের পাননি পাসোয়ান। কাল বিজেপি দফতরে অমিত এনডিএ শরিকদের নিয়ে আসন বণ্টনের কথা ঘোষণা করার পরে ছবিটা পাল্টে যায়। ঘরোয়া স্তরে বিজেপি নেতৃত্বকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে পাসোয়ান জানিয়ে দেন, বিহারে সদ্য উঠে আসা জিতনরামই যদি বড় নেতা হন, তা হলে জোট ছেড়ে একাই লড়বেন। পরিস্থিতি সামলাতে অমিত কাল মাঝরাতে পাসোয়ানের ছেলে চিরাগকে ডেকে পাঠান। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও যান রামবিলাস ও চিরাগের সঙ্গে বৈঠক করতে। বৈঠকের পরে ধর্মেন্দ্র বলেন, ‘‘সকলেই এনডিএ-র জয় চান। পরিবারে অল্পবিস্তর সমস্যা থাকেই। কিন্তু রামবিলাসের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব গোটা দেশের নেতা। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা।’’ অমিত জানেন, লড়াই আসলে প্রভাব বিস্তারেরই। তাই সেই ভাষাতেই তিনি রামবিলাসের মানভঞ্জন করতে চান।
জিতনরামকে বেশি আসন দেওয়া নিয়ে রামবিলাসের ক্ষোভ গোপন করেননি চিরাগ। দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি অবশ্য বলেন, তাঁদের কোনও ক্ষোভ নেই। জোট ছাড়ারও প্রশ্ন নেই। কিন্তু আগুনের ফুল্কি ছাড়া তো আর ধোঁয়া ওঠে না। চিরাগের মতে, ‘‘কাল যখন অমিত শাহ আসন বণ্টনের ঘোষণা করেন, তাতে আমরা চমকে যাই। আলোচনার সময়ে যে সমীকরণ রাখা হয়েছিল, দেখা যাচ্ছে জিতনরামের বেলায় তা খাটছে না।’’ চিরাগ জানান, আগে ঠিক ছিল, লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের নিরিখে আসন ভাগ হবে। জিতনরামের দল সবে জন্মেছে। তাদের লোকসভা বা বিধানসভায় লড়ার প্রশ্ন উঠছে কোথায়?’’ কাল রাতে অমিত তাঁদের সেই উদ্বেগ প্রশমনের আশ্বাস দিয়েছেন বলে দাবি চিরাগের।
কী সেই আশ্বাস? পাসোয়ান-পুত্র তা খোলসা করেননি। বাড়তি আসন দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়নি বলে জানাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের মতে, রামবিলাসকে বেশি আসন দিয়ে এমনিতেই জিতনরামের থেকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভোটে জিতলে বড়জোর মন্ত্রীপদ দেওয়ার সময়ে বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। মঙ্গলবার রাতে বিজেপি নির্বাচনী কমিটির বৈঠক বসে প্রার্থী তালিকা তৈরির জন্য। কিন্তু যে ভাবে প্রকাশ্যে আজ রামবিলাসের দল তোপ দেগে বসল, তার পর জিতনরাম আর কোনও বেগ না দেন, সেটিও ভাবাচ্ছে অমিত শাহকে।
ক’দিন আগেই রামবিলাসকে প্রকাশ্যে গালমন্দ করে জিতনরাম বলেছিলেন, ‘‘রামবিলাস পাসোয়ান আদৌ বিহারের দলিত নেতা নন। দলিতদের জন্য তিনি কিছুই করেননি। লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর হাওয়াতেই ক’টি আসন পেয়েছিলেন।’’ মোদী ও অমিত শাহকে তাই জিতনরাম বুঝিয়েছেন, তিনিই আসল দলিত নেতা। বাস্তবে পাসোয়ান শুধু নিজের ছেলে ও পরিবারের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু জানেন না। পাসোয়ানকে তোপ দেগে নিজেকেই বিহারের বড় দলিত নেতা হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন জিতনরাম। কিন্তু পাসোয়ান প্রচার করছেন, নীতীশ কুমার জিতনরামকে মুখ্যমন্ত্রী করার আগে তাঁকে কেউ চিনতই না। নীতীশ তাঁকে বিতাড়িত করার পরেই জিতনরাম রাতারাতি নেতা হয়ে ওঠেন।
বিহারের এই দুই নেতার কোন্দল যাতে তাঁদের ভোটবাক্সে প্রভাব না ফেলে, তা নিয়েই এখন চিন্তিত অমিত শাহ। আপাতত দুই শিবিরকেই মুখে কুলুপ আঁটতে বলেছেন তিনি। কারণ এক বার আসন ঘোষণার পরে যদি প্রকাশ্যে কোন্দল বাড়ে, তা হলে বিরোধী পক্ষেরই সুবিধা বেশি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy