Advertisement
E-Paper

বিপর্যয় মোকাবিলায় মৎস্যজীবীর গর্বিত ছেলে

গোটা গোটা হরফে লেখা— ‘হলিউডের স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান, আয়রনম্যান সব আছে। আমাদের সবেধন নীলমণি এই ফিশারম্যানই।’ ছবিটা ইতিমধ্যেই ভাইরাল।

ভাইরাল হয়েছে এই ছবি। জয় সেবাস্টিয়ান (ডানদিকে)।

ভাইরাল হয়েছে এই ছবি। জয় সেবাস্টিয়ান (ডানদিকে)।

স্নেহাংশু অধিকারী

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৮ ০২:৫২
Share
Save

ডিঙি নৌকায় রাখা কেরলের ম্যাপ—কার্ডবোর্ডের। পাশেই দাঁড় নিয়ে দাঁড়িয়ে এক জন। উড়ছে তাঁর ‘কেপ’।

গোটা গোটা হরফে লেখা— ‘হলিউডের স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান, আয়রনম্যান সব আছে। আমাদের সবেধন নীলমণি এই ফিশারম্যানই।’ ছবিটা ইতিমধ্যেই ভাইরাল।

আলাপুঝার মৎস্যজীবী পরিবার থেকে উঠে আসা মধ্য চল্লিশের জয় সেবাস্টিয়ান পেশায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। পোস্টটা দেখেই উত্তেজিত হয়ে ফোনে বললেন, ‘‘হক কথা। ছবিটা ফটোশপে বানানো, কিন্তু চরিত্রটা কাল্পনিক নয়। খাটো লুঙ্গি আর মাথায় গামছা জড়িয়ে এই ক’টা দিন ওঁরাই তো বাঁচালেন গোটা রাজ্যটাকে। পেটে কিল মেরে বুক চিতিয়ে লড়লেন, অথচ কী অবলীলায় দৈনিক ৩০০ টাকার পুরস্কার-ভাতা (রাজ্য সরকারের দেওয়া) জমা দিচ্ছেন ত্রাণ তহবিলে! নিজেকে মৎস্যজীবীর ছেলে বলতে গর্ব হচ্ছে।’’ মৎস্যজীবীর গর্বিত পুত্র হিসেবে লেখা তাঁর একটি পোস্ট ইতিমধ্যেই ইংরেজিতে অনূদিত এবং ভাইরালও।

আরও পড়ুন: কেরলের জন্য বিদেশি অর্থ নিতে ‘ঘুর’ পথ

জয়ের বাবা এখন ৮০। ইদানীং বাড়িতেই থাকেন। আর ছেলে ব্যস্ত চেরতালায় নিজের সদ্য তৈরি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা নিয়ে। তবে দিন সাতেক জয়-ও অফিস যাননি। ১৫ অগস্ট থেকে জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্রের সদর দফতরেই ছিলেন। ওখানকার কল-সেন্টার থেকে ত্রাণের কাজ দেখভাল করছিলেন। মঙ্গলবার ফের কাজে যোগ দিয়েছেন জয়। তাঁর কথায়, ‘‘গোড়ায় বিপদটা আন্দাজ করতে পারিনি। কিন্তু ১৭ তারিখ রাত থেকে একের পর এক ফোন আসতে শুরু করল। বুঝলাম, বন্যায় আটকে পড়া মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ছে উদ্বেগও।’’

তত ক্ষণে ডিঙি নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। খবর আসছে, পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ যে রাতেও নাকি কপ্টার নামিয়ে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে নৌসেনা। জয়ের দাবি, এমন ‘ভুয়ো খবরে’ই দুর্গতদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়তে থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘এয়ারলিফ্‌ট ব্যাপারটা দেখতে খুব ভাল। সিনেমা-সিনেমা ব্যাপার আছে। কিন্তু রাতে তা কী ভাবে সম্ভব! তা ছাড়া, ১৬-১৯ অগস্টের মাঝরাত পর্যন্ত রাজ্যের যে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষকে উদ্ধার কিংবা নিরাপদ জায়গায় স্থানাস্তরিত করা হয়েছে, তা ৬০ শতাংশ তো করলেন আমাদের উর্দি-হীন মৎস্যজীবীরাই। এয়ারলিফট করে উদ্ধার করা হয়েছে গোটা রাজ্যে বড় জোর ৩০০ জনকে।’’ রাজ্য সেচ দফতরের এক কর্তাও জানালেন, আলাপুঝা, এর্নাকুলম, কোল্লম, তিরুঅনন্তপুরম মিলিয়ে গত ক’দিন হাজার তিনেক মৎস্যজীবী তাঁদের ৭০০ দেশি নৌকা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

আরও পড়ুন: ভাসল ভিটের গ্রামও, তবু নীরব ‘ভূমিপুত্র’

অথচ এই সময়টা মাছ ধরার ভরা মরসুম। সমুদ্রে গেলেই এক-এক বারে হাজার পাঁচেক রোজগার। ‘‘ওঁরা কিন্তু সে সবের তোয়াক্কা করেননি। ভাবতে অবাক লাগে যে, এই লোকগুলোই তো কয়েক মাস আগে মাঝসমুদ্রে অক্ষি-র চোখরাঙানি সহ্য করে এসেছেন,’’ বলছিলেন ন্যাশনাল ফিশওয়ার্কার্স কো-অর্ডিনেশন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক টি পিটার।

আলাপুঝায় জল এখন অনেকটাই নেমেছে। ত্রাণ শিবির ছাড়ছেন দুর্গতেরা। তবু ১৮ অগস্ট রাতের কথা ভুলতে পারছেন না জয়। বললেন, ‘‘প্রায় বাবার বয়সি এক মৎস্যজীবী সে দিন সটান চলে এসেছিলেন কন্ট্রোল রুমে। বলছিলেন, ‘বাবু, রাত হয়ে গিয়েছে বলে ওরা যেতে দিচ্ছে না। কিন্তু খবর পেলাম, এখান থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ১৫ জন আটকা পড়ে আছে। কিছু একটা করুন। রাতে সত্যিই আমাদের চোখ জ্বলে, সব দেখতে পাই। দেখবেন ঠিক পারব।’ এঁদের কথা ভুলব কী করে?’’

কেরল Kerala Flood Kerala Joy Sebastian Fishermen Social Media জয় সেবাস্টিয়ান Alappuzha

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}