নির্ভয়ার নাবালক অপরাধীর মুক্তি রুখতে তেড়েফুঁড়ে উঠল দিল্লির মহিলা কমিশন। শনিবার গভীর রাতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বাড়িতে গিয়ে হাজির হন মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। সঙ্গে আবেদনপত্র, নাবালক ধর্ষককে যেন কালই না ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে এক ঘণ্টারও বেশি ছিলেন স্বাতী। রাত দু’টো নাগাদ জানা যায়, প্রধান বিচারপতি স্থগিতাদেশের বিষয়ে কিছু না বললেও জানিয়েছেন, সোমবার সকালে এ বিষয়ে শুনানি হবে।
গত কাল ওই নাবালক অপরাধীর সংশোধন আবাসে থাকার মেয়াদ বাড়ানোর আর্জি খারিজ করে দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট। ফলে তিন বছর সংশোধনাগারে কাটানোর পর কাল, রবিবার বিকেল ৫টা নাগাদ মুক্তি পেতে চলেছে সে।
এ দিকে, নাবালক অপরাধীর প্রাণহানি হতে পারে এই আশঙ্কায় অপরাধীকে আজ আগেভাগেই সংশোধনাগার থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কোথায়, তা নিয়ে সারাদিন মুখ খোলেনি পুলিশ-প্রশাসন। সূত্রের খবর, দিল্লির বাইরে কোনও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে তাকে।
নাবালকের সম্ভাব্য মুক্তি নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি কোনও সংশোধন ঘটেছে ওই অপরাধীর মধ্যে? নির্ভয়াকে ধর্ষণ করে তাঁর শরীরের ভিতর থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নৃশংস ভাবে ছিঁড়ে বের করে এনেছিল যে ছেলেটি, এই তিন বছরে তার মানসিকতায় কি
কোনও বদল এসেছে?
এর স্পষ্ট জবাব মেলেনি কোনও তরফেই। তবে আধিকারিকদের অনেকেই স্বীকার করে নিয়েছেন, এ দেশে পুনর্বাসন ব্যবস্থায় যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। যার ফলে বহু ক্ষেত্রেই নাবালক অপরাধীদের মধ্যে আদৌ কোনও সংশোধন ঘটে না। অপরাধ প্রবণতা থেকেই যায়।
কী ভাবে কেটেছে এই তিনটে বছর? একটি সংবাদ সংস্থা মারফত শুধু জানা গিয়েছে, গত তিন বছর সংশোধনাগারের ২০ ফুট বাই ২০ ফুট একটা অন্ধকার ঘর ছিল ওই ছেলেটির দিনভরের আস্তানা। লোহার গেট আর একটা ছোট জানলা, হাওয়া চলাচলের বন্দোবস্ত বলতে এই। তবে একটা এলসিডি টিভি ছিল তার ঘরে। শোওয়া-বসার জন্য ছিল দু’টো গদি। প্রায় সারা দিনই কাটত ঘরের মধ্যে। প্রতিদিন মাত্র দু’ঘণ্টার জন্য বাইরে আসার অনুমতি দেওয়া হতো। সংশোধনাগারের অন্য ৪০ আবাসিকের থেকে আলাদা করে রাখা হতো তাকে। এ ক’বছরে শেখানো হয়েছে রান্না। আঁকা, সেলাই-ফোঁড়াইও শিখত সে। ভাল কাজের জন্য মাঝেমধ্যে মিলেছে প্রশংসাও। তবে একই সঙ্গে এ-ও শোনা গিয়েছে, দিল্লির ওই সংশোধনাগারে মৌলবাদী হয়ে উঠেছে সে। দিল্লি হাইকোর্টের বাইরে বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত জম্মু ও কাশ্মীরের একটি ছেলের সঙ্গে তার গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। নতুন বন্ধুকে সে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, মুক্তি পেলেই কাশ্মীরে যাবে।
আজ দিল্লির মজনু কি টিলার ওই সংশোধনাগারের বাইরে বিক্ষোভ দেখায় জনতা। তার মধ্যে ছিলেন নির্ভয়ার মা-বাবাও। বিক্ষুব্ধ জনতাকে হঠাতে ময়দানে নামে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় আশা দেবী ও বদ্রীনাথ সিংহকে। পরে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁদের। তবে এ নিয়েও শুরু হয়েছে রাজনীতি। দিল্লি পুলিশের এ হেন আচরণের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। তিনি টুইট করেন, ‘‘নির্ভয়ার মা-বাবার প্রতি পুলিশের এই আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে বলেছি মুখ্যসচিবকে।’’
প্রধান বিচারপতির বাড়ি যাওয়ার আগেই স্বাতী মালিওয়াল টুইটারে জানিয়েছিলেন, মুক্তির বিরোধিতা করে তাঁরা আজ রাতেই একটি বিশেষ আবেদন জমা দেবেন সুপ্রিম কোর্টে। পরে তিনি আবার টুইট করে জানান, আবেদন পেশ করা হয়ে গিয়েছে। শীর্ষ আদালতের রেজিস্ট্রার তাঁর কাছ থেকে নথিপত্র নিয়েছেন। নথি যাচাইয়ের কাজ চলছে। প্রসঙ্গত, স্বাতী আবার আপ নেতা নবীন জয়হিন্দের স্ত্রী। নিজেও আপের সদস্য। নাবালকের মুক্তি রুখতে তাঁর এই জোরদার চেষ্টা দেখে রাজনীতিকরা বলছেন,
কেজরীবাল সব দিক থেকেই নির্ভয়ার বাবা-মা-র পাশে থাকার বার্তা দিতে চেষ্টা করছেন!
নাবালক অপরাধীর মুক্তির খবরে খুশি নয় তার গ্রামও। বদায়ূঁর ওই গ্রামের অনেকেই জানিয়ে দিয়েছেন, এ গ্রামে জায়গা দেওয়া হবে না ওর মতো অপরাধীকে। ফুলচাঁদ নামে এক প্রবীণ বাসিন্দা যেমন বলেছেন, ‘‘ওর জন্য আমাদের গ্রামের যথেষ্ট বদনাম হয়েছে। গ্রামের ছেলেদের লোকে খারাপ চোখে দেখে।’’ তার মা-র অবশ্য আর্জি, আর একটা সুযোগ দেওয়া হোক ছেলেকে। যদিও কাল তাকে আনতে দিল্লি যাচ্ছেন না কেউ। তবে মহিলার আশা, ছেলে ঠিক গ্রামে ফিরবে। ঘরে ফিরে এ বার সংসারের হাল ধরবে সে। স্বামী মানসিক প্রতিবন্ধী, দুই মেয়ে শ্রমিকের কাজ করে। ছেলে ফিরলে দরিদ্র পরিবারের দুঃখ ঘুচবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy