Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাপ খুঁজতে এ বার দলকেই নিশানা কীর্তির

বিরোধীরা এক সুরে ইস্তফার দাবি তুলছেন, তবু আপাতত সুষমা স্বরাজের পাশেই বিজেপি। নতুন করে বড় মাপের কোনও ঘটনা না-ঘটলে এ যাত্রায় হয়তো বিদেশমন্ত্রীর পদ হারাতে হচ্ছে না সুষমাকে।

কীর্তি আজাদ

কীর্তি আজাদ

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৫ ০৩:৪০
Share: Save:

বিরোধীরা এক সুরে ইস্তফার দাবি তুলছেন, তবু আপাতত সুষমা স্বরাজের পাশেই বিজেপি। নতুন করে বড় মাপের কোনও ঘটনা না-ঘটলে এ যাত্রায় হয়তো বিদেশমন্ত্রীর পদ হারাতে হচ্ছে না সুষমাকে। যদিও বিজেপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, এই মুহূর্তে না-হলেও বিরোধীদের চাপ কেটে গেলে সুষমাকে সরানোর কথা ভাবতে পারেন মোদী। তবে এখন চাপ সহ্য করে পরে ব্যবস্থা নিলে কতটা ফায়দা, তা নিয়েও দলের একাংশের ভিতরে প্রশ্ন রয়েছে।

সুষমার সঙ্গে মোদী-জেটলি শিবিরের দূরত্ব নতুন কোনও কথা নয়। তবু এ ভাবে মুখ পোড়ার পরেও কেন সমর্থন করতে হচ্ছে বিদেশমন্ত্রীকে? নরেন্দ্র মোদী শিবিরের এক শীর্ষ নেতার ব্যাখ্যা, এখন সুষমাকে সরালে সংসদের বাদল অধিবেশনের আগে রক্তের স্বাদ পাবে বিরোধীরা। সে ক্ষেত্রে কার্যত স্বীকার করে নেওয়া হবে মোদী সরকারের মন্ত্রীরা স্বজনপোষণ ও দুর্নীতিতে যুক্ত। প্রথম বছর দাগমুক্ত থেকে, দ্বিতীয় বছরের শুরুতেই সরকারের মাথায় এমন কলঙ্কের বোঝা চাপুক— তা চাইছেন না নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। সে জন্যই আপাতত সুষমাকে পদে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে বিজেপির সুষমা-বিড়ম্বনায় আরও ইন্ধন জুগিয়েছেন দলের ক্রিকেটার-সাংসদ কীর্তি আজাদ। আজ সকালে টুইট করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, বছরখানেক আগের ঘটনা উস্কে দেওয়ার পিছনে আসল ব্যক্তিটি কে! তাঁর কথায়, ‘আস্তিনের সাপটি কে?’ কীর্তি কারও নাম করেননি। কিন্তু বিজেপি শিবিরের অনেকেরই বক্তব্য, অরুণ জেটলির শিবিরের দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি। দলীয় রাজনীতিতে সুষমার বিরোধী শিবিরের লোক বলেই পরিচিত জেটলি। ক্রিকেট রাজনীতিতেও তিনি ললিত মোদীর প্রতিপক্ষ শিবিরে। ফলে দু’য়ে দু’য়ে চার করছেন অনেকেই।

সেই জল্পনা আরও বাড়িয়েছে গত দু’দিন ধরে অরুণ জেটলির নীরবতা। বিজেপির নানা স্তরের নেতারা যখন সুষমার সমর্থনে মুখ খুলেছেন, তখন দলের প্রধান মুখপাত্র হয়েও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন জেটলি। ফলে সব মিলিয়ে খানিকটা হলেও প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দলের অভ্যন্তরীণ টানাপড়েন।

বিজেপি সূত্র বলছে, ললিত মোদী রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ললিত যখন আইপিএল-কর্তা ছিলেন, তখন দু’জনের দহরম মহরম অনেকেরই নজর কেড়েছিল। ২০১৩-র শেষে বসুন্ধরা রাজস্থানে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্রিকেট রাজনীতিতে ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করেন ললিত। বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে সেই তৎপরতা আরও বাড়ে। ব্রিটেনে বসেই রাজস্থান ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। সেটা জেটলি ভাল চোখে দেখেননি বলেই ক্রিকেট রাজনীতির অন্দরমহলের খবর। এম শ্রীনিবাসনের ক্রিকেট বোর্ড পরে সেই নির্বাচন বাতিলও করে দেয়।

কিন্তু সম্প্রতি বোর্ডের ক্ষমতা শ্রীনিবাসনের হাত থেকে চলে যাওয়ার পরে জেটলি-বিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ফের তৎপর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ললিত মোদী। সূত্রের খবর, সেই কারণেই ক্রিকেট রাজনীতিতে ললিতের বিরোধীরা পরিকল্পিত ভাবে তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে বিতর্কিত ই-মেলগুলি ফাঁস করে দেয়। যার জেরে বিপাকে পড়েছেন সুষমা স্বরাজ।

আজ তাঁর সমর্থনে মুখ খুলে সুষমার বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন খোদ ললিত। ললিত আজ টুইট করে বলেন, ‘ভুল লোকের ইস্তফা চাওয়া হচ্ছে।’ কিন্তু আইনের চোখে ললিত পলাতক। ফলে তাঁর সমর্থনে সুষমার সমস্যা কমার বদলে বেড়েছে। সুষমার অস্বস্তি বেড়েছে আরও একটি খবরে। বিদেশমন্ত্রী গত কাল বলেছিলেন, ললিতের স্ত্রী মিনাল ক্যানসারে আক্রান্ত। পর্তুগালে তাঁর চিকিৎসা চলছে। ললিত তাঁকে জানান, সে দেশে স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের আগে স্বামী হিসেবে তাঁকে বন্ডে স্বাক্ষর করতে হবে। তাই তিনি মানবিকতার খাতিরে ললিতের নামে আন্তর্জাতিক সফরের অনুমতিপত্রের (ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট) জন্য তদ্বির করেছিলেন। কিন্তু আজ একটি সংবাদমাধ্যম দাবি করে, পর্তুগালে এমন কোনও নিয়ম নেই। ফলে সুষমার ‘অতি-সক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা।

নরেন্দ্র মোদী আপাতত তাঁর বিদেশমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ালেও সেই সমর্থনের আয়ু কত দিন, প্রশ্ন সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE