Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘খুন হয়ে থাকতে পারেন লাল বাহাদুর’, ফাইল প্রকাশের দাবি পরিবারের

নেতাজির পর এ বার শাস্ত্রীজি! প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু-রহস্যের ‘গোপন’ ফাইলও আর দেরি না করে প্রকাশ করার দাবি উঠল।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী।- ফাইল-চিত্র।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী।- ফাইল-চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

নেতাজির পর এ বার শাস্ত্রীজি!

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু-রহস্যের ‘গোপন’ ফাইলও আর দেরি না করে প্রকাশ করার দাবি উঠল। তাঁর পুত্র, কংগ্রেস নেতা অনিল শাস্ত্রী শনিবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ‘‘বাবার দেহ যখন দিল্লি বিমানবন্দরে নামানো হয় তখন গোটা শরীরটা নীল হয়ে গিয়েছিল। দেখে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। বাবার মুখটা পর্যন্ত নীল। কপালের দু’পাশে স্পষ্ট সাদা ছোপও দেখেছিলাম। ওই অবস্থা দেখে মা তখনই বলেছিলেন, এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়।’’ যদিও ৬১ বছর বয়সি লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলেই সে সময় সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নেতাজির অন্তর্ধান-সংক্রান্ত ৬৪টি ‘গোপন’ ফাইল প্রকাশ করে। গত সাত দশক ধরে যে ফাইলগুলিকে অন্ধকারে রাখা হয়েছিল। এর পর কেন্দ্রও যাতে এ বার নেতাজি-সংক্রান্ত ‘গোপন’ ফাইলগুলি প্রকাশ করে, নেতাজির পরিবারের তরফে সেই দাবিও জানানো হয়।

অনিল শাস্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘আমিও ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি যে বাবার মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিল না। খুব জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়, কিন্তু মনে হয় তদন্তে যথেষ্ট গাফিলতি হয়েছে। কেউই তো শাস্তি পায়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বাবা নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। সেখানে অনেক খুঁটিনাটি কথা লেখা থাকত। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর থেকে ওই ডায়রিরও কোনও হদিস মেলেনি। যেমন খোঁজ পাওয়া যায়নি তাঁর সঙ্গে যে ফ্লাস্কটি ছিল সেটিরও। হতে পারে সেখানেই এমন কিছু মেশানো হয়েছিল যার জেরে বাবার মৃত্যু হয়।’’ লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং সচিবও দুর্ঘটনার শিকার হন। এ দিনের সাক্ষাৎকারে তিনি সে কথাও উল্লেখ করে বলেন, ‘‘ওই দু’জনকেও তদন্ত কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল। দু’-দু’বার এমন সমাপতন খুবই আশ্চর্যজনক।’’

লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুতে ‘রহস্য’টা কোথায়, তাঁর সন্দেহ কেন, তা খোলসা করতে গিয়ে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর পরের ঘটনাগুলির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন অনিল। তাঁর কথায়, ‘ওই ঘটনার পর তাসখন্দের হোটেলে বাবার যে খানসামা ছিল, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে ছাড়াও পেয়ে যায়। পরে আমার মা তাসখন্দে গিয়ে সেই খানসামার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, আমার মাকে জানানো হয়, ওই খানসামাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হোটেলে বাবা যে-ঘরে ছিলেন, সেই ঘরে বাবার খাটের পাশেই একটা ছোট্ট টেবিলে সেই রাতে রাখা ছিল একটা থার্মোফ্লাস্কও। বাবার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাক্তার আর এন চুঘ রাতে বাবাকে দেখতে গিয়ে টেবিলে ওই থার্মোফ্লাস্কটি দেখেছিলেন। বাবার রাতে গরম দুধ খেয়ে ঘুমোনোর অভ্যাস ছিল। হয়তো সেই জন্যই ওই থার্মোফ্লাস্কটি রাখা হয়েছিল। কিন্তু, ওই থার্মোফ্লাস্কটিরও আর হদিশ পাওয়া যায়নি। তাই, ওই থার্মোফ্লাস্কে দুধই ছিল নাকি অন্য কিছু, এখনও পর্যন্ত আমরা তা জানতে পারিনি। আমার তো মনে হয়, বাবার মৃত্যু-রহস্যের কারণ লুকিয়ে রয়েছে ওই থার্মোফ্লাস্কেই! ’ নিয়মিত ডায়েরি লেখারও অভ্যাস ছিল প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর। অনিল বলেছেন, ‘বাবার সেই ডায়েরিও পরে আর পাওয়া যায়নি। ওই দিনই সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের বড় একটি চুক্তি হয়েছিল। বাবা হয়তো সেই চুক্তির কথা তাঁর ডায়েরিতে লিখেও রেখেছিলেন। কিন্তু, কী লিখেছিলেন, তা আজও আমরা কেউ জানতে পারিনি।’

প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় পুত্র, বিজেপি নেতা সুনীল শাস্ত্রীও এ দিন জানিয়েছেন, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যু-রহস্যের জট যাতে খোলে, তার জন্য তিনি ব্যক্তিগত ভাবে একাধিক বার চেষ্টা করেছেন। বাবার মুত্যু-সংক্রান্ত ‘গোপন’ সরকারি ফাইলগুলি যাতে প্রকাশ্যে আনা হয়, তার জন্য তিনি অন্তত তিন জন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে বেশ কয়েক বার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। চন্দ্র শেখর, আই কে গুজরাল ও মনমোহন সিং। কিন্তু, কেউই তাঁকে এ ব্যাপারে কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন সুনীল।

প্রায় সাড়ে পাঁচ দশক পর শাস্ত্রীজির মৃত্যু-সংক্রান্ত ‘গোপন’ ফাইলগুলি কি এ বার আসবে প্রকাশ্যে? লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর নাতি তথা বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ফাইলগুলি প্রকাশ্যে আনার ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদীর দ্বারস্থ হবেন তিনি। তাঁর আশা, মোদী নিশ্চয় তাঁর পরিবারের আর্জি মেনে নেবেন।

বাবার মৃত্যু সম্পর্কিত ফাইল প্রকাশ্যে আনা উচিত বলে মনে করেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর আর এক ছেলে তথা বিজেপি নেতা সুনীল শাস্ত্রীও। তাঁর দাবি, চন্দ্র শেখর, ইন্দ্রকুমার গুজরাল থেকে শুরু করে
মনমোহন সিংহ— বহু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কাছেই ওই গোপন ফাইলগুলি প্রকাশ করার আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। যদিও তাতে কোনও লাভ হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE