দেড় বছর আগের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ভোট-প্রাপ্তি কমে গিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস ও বিজেপির। অথচ ভোট না-কমলেও আসনের মানচিত্রে ফেললে সংখ্যালঘু হয়ে গিয়েছে পিনারাই বিজয়নের এলডিএফ সরকার! এই জটিল পরিস্থিতিতেই দেশে একমাত্র বাম সরকার আগলানোর লড়াইয়ে নামছে সিপিএম।
ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়া চলাকালীনই পুর-নিগম, পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে কেরলে। স্থানীয় ওই নির্বাচনে প্রথম শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ। রাজধানী তিরুঅনন্তপুরমের পুর-নিগমে একক বৃহত্তম শক্তি হয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ। কেরলের রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পুর ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের গড় ধরলে ইউডিএফ পেয়েছে ৩৮.৮১%। এলডিএফ পেয়েছে ৩৩.৪৫% অর্থাৎ কংগ্রেসের ফ্রন্ট বামেদের চেয়ে প্রায় পাঁচ শতাংশ বিন্দুতে এগিয়ে। স্থানীয় এই নির্বাচনে দক্ষিণী রাজ্যে এনডিএ-র ঘরে এসেছে ১৪.৭১% ভোট।
পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটের ফলের নিরিখে বিধানসভার হিসেব করলে এলডিএফ এই মুহূর্তে এগিয়ে ৬৪টি কেন্দ্রে । কেরলে ১৪০ আসনের বিধানসভায় গরিষ্ঠতার জাদু-সংখ্যা ৭১। বিজয়নের সরকার টানা দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছিল ৯৯টি আসনে জিতে, এখন বিধানসভায় তাদের হাতে রয়েছে ৯৭টি আসন। স্থানীয় ভোটের অঙ্কে হিসেব করলে এলডিএফের ৬৪টির পাশাপাশি এনডিএ এগিয়ে রয়েছে দু’টি আসনে এবং বাকিগুলি ইউডিএফের দিকে।
সূত্রের খবর, কলকাতায় দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে এসে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবি এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলে গিয়েছেন, কেরলে এলডিএফ ৬৪টি আসনে এগিয়ে আছে। তার মানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের (৭১) পথ এখনও আয়ত্তের বাইরে নয় একেবারেই। পুরসভা ও পঞ্চায়েতে আসন জয় বা বোর্ড গড়ার নিরিখে ইউডিএফ এগিয়ে গেলেও লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বামেদের ভোট কমেনি। বরং, কংগ্রেস এবং বিজেপির কমেছে! তৃণমূল স্তরে এই পরিস্থিতি মাথায় রেখেই লড়াই করতে হবে। বেবির মতে, কেরলে বাম সরকারকে রক্ষা যেমন জরুরি, তেমনই আবশ্যক পশ্চিমবঙ্গে বামেদের পুনরুত্থান।
ভোটের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে কেরলে ২০টির মধ্যে ১৮টি লোকসভা আসন জয়ের পথে কংগ্রেসের ইউডিএফ ৪৫.২১% ভোট পেয়েছিল। মাত্র একটি আসন জিতেছিল এলডিএফ, পেয়েছিল ৩৩.৬০%। পুরসভা ও পঞ্চায়েতেক দখল হারালেও প্রায় সেই পরিমাণ ভোটই এ বার বামেরা ধরে রেখেছে। এনডিএ লোকসভায় একটি আসন জেতার পাশাপাশি ১৯.২৪% ভোট পেয়েছিল, যা স্থানীয় নির্বাচনে প্রায় পাঁচ শতাংশ কমেছে।
পুরসভা ও পঞ্চায়েতকে আলাদা করে দেখলে জেলা পঞ্চায়েতে (বঙ্গে জেলা পরিষদের মতো) এলডিএফের ভোট (৩৪.০২%) শহরের তুলনায় সামান্য বেশি হয়েছে। এই স্তরে ইউডিএফ পেয়েছে ৩৯.১৭% এবং এনডিএ ১৩.৯২%। রাজ্যের ৬টি পুর-নিগমে ইউডিএফ ৩৪.৯৫%, এলডিএফ ৩৩.৬৭% এবং এনডিএ ২৩ .৫৮%। আর পুরসভার ক্ষেত্রে ইউডিএফের ভোট ৩৮.৮৫%, এলডিএফের ২৯.৮৮% এবং এনডিএ-র ১৪.৪০%। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, কেরলে খ্রিস্টান ভোটের একাংশ বিজেপির দিকে ঘুরতে শুরু করেছে। তাতে বাম ও কংগ্রেস, দুই শিবিরের উদ্বেগ বাড়লেও স্থানীয় নির্বাচনে ভোট কাটাকাটির ফায়দা পেয়েছে ইউডিএফ। তা ছাড়া, পুরসভা ও পঞ্চায়েতে প্রায় ১৩% ভোট গিয়েছে এই তিন ফ্রন্টের বাইরে অন্যান্যদের দখলে। বিধানসভার মতো সাধারণ নির্বাচনে তা হবে না বলেই ওই অংশের মত।
এমতাবস্থায় সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই আরও জোরালো করারই ডাক দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। তাঁর মতে, ‘‘সংখ্যাগুরু মৌলবাদকে সংখ্যালঘু মৌলবাদ দিয়ে মোকাবিলা করা যায় না। দু’টোই বিপজ্জনক। এবং এই দু’টোর বিরোধিতা করা মানে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরোধিতা করা নয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিবাদ করলেই সেটা ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধাচরণ— এই প্রচার চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ আসলে দু’টো বিপরীত মেরুর বিষয়!’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)