Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বলিউডি পরশে সুদিনের আশায় ম্যাকলাস্কিগঞ্জ

ম্যাকলাস্কিগঞ্জের পটভূমিতে তাঁর বাবা মুকুল শর্মার লেখা একটি গল্পকে ভিত্তি করেই সম্প্রতি কঙ্কনা বানিয়েছেন ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’। একটা আস্ত বলিউডি ছবিতে এ ভাবে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের উঠে আসা এই প্রথম।

ম্যাকলাস্কিগঞ্জের এমন বাংলোই দেখা গিয়েছে ছবিতে।

ম্যাকলাস্কিগঞ্জের এমন বাংলোই দেখা গিয়েছে ছবিতে।

আর্যভট্ট খান ও সুজিষ্ণু মাহাতো
রাঁচী ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০৮:২০
Share: Save:

‘‘ওই যে বাংলোটা দেখছেন, ওটা বক্সি বাংলো। ওই বাড়িতেই তো শ্যুটিং করলেন কঙ্কনা সেনশর্মারা। ওইখানেই বসেছিলেন ওম পুরী।’’

কলকাতা থেকে আসা পর্যটকদের ম্যাকলাস্কিগঞ্জ দেখাতে গিয়ে এ ভাবেই বলছিলেন এক গাইড। অপরূপ নিসর্গ, ও আবহাওয়ার টানে একসময় বাঙালির প্রিয় ছুটি কাটানোর জায়গা ছিল ঝাড়খণ্ডের এই ছোট্ট জনপদ। কিন্তু মাওবাদী-আতঙ্কে তা বন্ধই হয়ে গিয়েছিল। গত দু’য়েক বছর ধরেই পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। আর এ বার বলিউডি পরিচিতির দৌলতে পর্যটনে হারানো সুদিনের আশা করছে এই ছোট্ট জনপদ।

ম্যাকলাস্কিগঞ্জের পটভূমিতে তাঁর বাবা মুকুল শর্মার লেখা একটি গল্পকে ভিত্তি করেই সম্প্রতি কঙ্কনা বানিয়েছেন ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’। একটা আস্ত বলিউডি ছবিতে এ ভাবে ম্যাকলাস্কিগঞ্জের উঠে আসা এই প্রথম। ছবির দৌলতে সর্বভারতীয় পরিচিতি পেতেই বহু বছর পরে ফের ম্যাকলাস্কিগঞ্জের বাংলোবাড়ির ধুলো ঝেড়ে নতুন করে সাজাতে শুরু করছেন কেয়ারটেকাররা। বাসিন্দাদের আশা এত তারকাকে এখানে দেখে পর্যটন আবার চাঙ্গা হবে। স্থানীয় লোকেদের উপার্জনও বাড়বে। এই আশার কথা শুনে খুশি কঙ্কনাও। তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে এ রকম কত অপূর্ব জায়গা আছে তা অনেকে জানেনই না। ম্যাকলাস্কিগঞ্জও তেমনই একটা জায়গা। এই ছবির জন্য যদি এত সুন্দর একটা জায়গা নতুন করে পরিচিতি পায়, পর্যটন বাড়ে তা হলে খুবই ভাল লাগবে।’’

১৯৩০-এর দশকে কলকাতার বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী, ই টি ম্যাকলাস্কির হাত ধরে এই জনপদের সূচনা। এক সময় প্রায় শ’চারেক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পরিবার বাস করত এখানে। তবে ভারতের স্বাধীনতার পরে তাদের বেশিরভাগই বিদেশে চলে যায়। তার পরে সত্তর-আশির দশকে প্রচুর বাঙালিও এখানে বাংলো কিনেছিলেন। এখন অবশ্য অনেক বাংলোই তো স্থানীয় ডন বস্কো স্কুলের হস্টেল হয়ে গিয়েছে। ‘‘নানা সময়ে কত রকমের মানুষজন থেকেছেন এখানে। পর্যটকরা এলে এই সমৃদ্ধ ইতিহাসও তাঁরা জানতে পারবেন’’, বলছিলেন কঙ্কনা।

ম্যাকলাস্কিগঞ্জে তিন পুরুষের বাস ববি গর্ডনের। তাঁর নিজের গেস্ট হাউস আছে। কঙ্কনার ছবিতে একটা ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন ববি। বললেন, ‘‘ছোটবেলায় দেখেছি কত বাংলা ছবির শ্যুটিং। উত্তমকুমার, অপর্ণা সেন, মুনমুন সেন সবাই এখানে এসেছেন। কয়েক মাস আগে একটা বাংলা সিরিয়ালের শ্যুটিং হয়েছিল। কিন্তু সিনেমার শ্যুটিং? মনে পড়ে না।’’

ছবির সহ-প্রযোজক অভিষেক চৌবে নিজে জামসেদপুরের ছেলে। ‘উড়তা পঞ্জাব’-এর পরিচালক অভিষেক বলছিলেন, ‘‘নিজের রাজ্যের একটা জায়গাকে নিজেদের ছবিতে তুলে ধরছি, এটা ভেবে আমার গর্ব হয়। তবে ঝাড়খণ্ডে নেতারহাট, বেতলার মতো এমন আরও বহু জায়গা আছে, যেখানে শ্যুটিং হতে পারে।’’

সত্তর-আশির দশকে নিয়মিত শ্যুটিং হত তৎকালীন বিহারের এ সব জায়গায়। তবে মাওবাদী-আতঙ্কে গত এক দশকে তা একেবারেই কমে গিয়েছে। তবে এখন সেই সমস্যা নেই বললেই চলে বলে জানালেন এলাকার আরেক বাসিন্দা তৃপ্তি নিশা গর্ডন। শ্যুটিং এবং সিনেমায় পরিচিতির জোরে পর্যটনের বিকাশ অস্থির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পরিবেশটা অন্তত তৈরি করে দেয় বলে মত অভিষেকেরও। কলকাতার বাসিন্দা, পরিচালক সিক্তা বিশ্বাসও বলছেন, ‘‘এত কম খরচে এমন লোকেশনও মেলা ভার।’’

কঙ্কনাদের ছবির সময়কাল ছিল সত্তর দশকের শেষ। ববি বলছেন, ‘‘তখন ম্যাকলাস্কিগঞ্জের স্বর্ণযুগ। ফিরে এসেছিল সেই সময়ের টেপ রেকর্ডার, ট্রাঙ্ককল। হঠাৎ করে যেন ওই দেড় মাস অতীতে ফিরে গিয়েছিলাম।’’

এখন আবার অতীতের সেই সময়েই ফিরতে চান ম্যাকলাস্কিগঞ্জের বাসিন্দারা। চান, নির্জন বাংলোগুলো সেজে উঠুক। উপত্যকায় শোনা যাক সেই হারিয়ে যাওয়া আওয়াজ, ‘‘লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE