সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ মামলা। —ফাইল চিত্র।
ওয়াকফ মামলা নিয়ে মঙ্গলবারের পর বুধবারও সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে শুনানি চলল। মঙ্গলবার মামলাকারী পক্ষের বক্তব্য শুনেছিল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চ শুনল কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য। কেন্দ্রের হয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। নতুন ওয়াকফ আইনে কী কী সুবিধা রয়েছে তা বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। নতুন আইনের ৩ডি নম্বর ধারা মূল ধারার অংশ ছিল না বলে অভিযোগ তুলেছে মামলাকারী পক্ষ। সেই অভিযোগের বিরোধিতা করেন মেহতা। তাঁর বক্তব্য, এটি মূল সংশোধনীরই অংশ ছিল।
সিব্বল মঙ্গলবার দাবি করেছিলেন, ওয়াকফ বোর্ড একটি ধর্মীয় বিষয়। সেই দাবিরও বিরোধিতা করেন মেহতা। সলিসিটর জেনারেল জানান, ওয়াকফ বোর্ডের ভূমিকা ধর্মনিরপেক্ষই। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহার করলেই তার উপর মৌলিক অধিকার জন্মায় না। ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে ওয়াকফ কোনও আবশ্যিক অংশ নয় বলেও সুপ্রিম কোর্টে জানান সলিসিটর জেনারেল। আদালতে তিনি জানান, অনেক মুসলিমই আছেন, যাঁরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল নন। তাঁরা যদি ওয়াকফে সম্পত্তি দান না করেন, তবে কি তাঁরা মুসলিম নন? কোনও কিছু দান করা যে কোনও ধর্মের অঙ্গ, কিন্তু তা আবশ্যিক নয়। তিনি আশ্বস্ত করেন, নতুন ওয়াকফ আইন ইসলাম ধর্মের কোনও আবশ্যিক কর্তব্যের উপর হস্তক্ষেপ করে না।
সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য, এমন ব্যক্তিরা মামলা দায়ের করেছেন যাঁরা সরাসরি প্রভাবিত নন। এমনকি সংসদের আইন তৈরির ক্ষমতা নেই এটাও তাঁরা বলছেন না। সংসদের আইন সংশোধন ক্ষমতার কেউ বিরোধিতা করছেন না। ওয়াকফ কাউন্সিলে কেন অমুসলিম সদস্য থাকবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল গত শুনানিতে। মেহতা জানান, ওয়াকফের সম্পত্তিতে স্কুল বা অনাথাশ্রমও হতে পারে। এমন অনেক ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারে ওয়াকফ। যেহেতু ওয়াকফের সম্পত্তি অমুসলিমদের সুবিধার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই অমুসলিম সদস্যদের জন্য ওয়াকফ কাউন্সিলে জায়গা দেওয়া যেতে পারে।
আগামিকাল, বৃহস্পতিবার ফের এই মামলার শুনানি রয়েছে।
প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, যখন যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠিত হয়, তখন কি নতুন আইনের ৩ডি নম্বর ধারাটি ছিল? সলিসিটর জেনারেল তাঁকে আশ্বস্ত করেন, সেটি ছিল যৌথ সংসদীয় কমিটি তৈরির সময়ে। মেহতা জানান, যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্টেও প্রস্তাবিত ৩ডি ধারার প্রসঙ্গ উল্লেখ ছিল। প্রধান বিচারপতি নিশ্চিত হতে আবার প্রশ্ন করেন, এমন নয় তো যে সেটি পরবর্তী সময়ে যুক্ত করা হয়েছ? তবে সলিসিটর জেনারেল বক্তব্য, এমন কিছুই হয়নি। মূল সংশোধনীর মধ্যেই ৩ডি ধারাটি ছিল।
মেহতা জানান, যৌথ সংসদীয় কমিটির তরফে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছিল। ওই সময় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ জানিয়েছিল, অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ড সংরক্ষিত সৌধগুলিকেও ওয়াকফ সম্পত্তি বলে ঘোষণা করে দিয়েছিল। এর ফলে প্রাচীন সৌধের সংরক্ষণের আওতায় কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছিল। সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বিঘ্ন ঘটছিল।
নতুন আইনের ৩ডি নম্বর ধারা নিয়ে মঙ্গলবার প্রশ্ন তুলেছিলেন মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীরা। সেটির উপর স্থগিতাদেশেরও আর্জি উঠেছিল। বুধবার ফের ওই ধারার প্রসঙ্গ উঠল সুপ্রিম কোর্টে। আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, “যে বিলটি প্রথমে প্রচারিত হয়েছিল, সেখানে ওই অংশটি ছিল। যৌথ সংসদীয় কমিটিতে এটি অনুচ্ছেদ ছিল, কিন্তু সেটি নিয়ে কোনও প্রচার হয়নি।” সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিও জানান, এই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে নথিবদ্ধ হয়েছে। তখন সলিসিটর জেনারেল জানান, তিনিও যৌথ সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট দেখাবেন।
সলিসিটর জেনারেল জানান, ওয়াকফের সম্পত্তিতে স্কুল বা অনাথাশ্রমও হতে পারে। এমন অনেক ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারে ওয়াকফ। যেহেতু ওয়াকফের সম্পত্তি অমুসলিমদের সুবিধার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই অমুসলিম সদস্যদের জন্য ওয়াকফ কাউন্সিলে জায়গা দেওয়া যেতে পারে।
কেন্দ্রের তরফে তুষার মেহতা বলেন, “আগে ‘ওয়াকফ আলাল আওলাদ’ নামে একটি ধারণা ছিল। যার অর্থ, সন্তানদের সুবিধার জন্য আল্লার উদ্দেশে সম্পত্তি উৎসর্গ করা। সন্তান বলা হলেও সংশোধিত আইন আসার আগে প্রাথমিক ভাবে কন্যা বা বিধবাদের অন্তর্ভুক্ত করা হত না। এই প্রথম তাঁদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সৌভাগ্যবশত যা চ্যালেঞ্জ করা হয়নি।”
সলিসিটর জেনারেল জানান, নতুন ওয়াকফ আইন ইসলাম ধর্মের কোনও আবশ্যিক কর্তব্যের উপর হস্তক্ষেপ করে না।
ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রে ওয়াকফ কোনও আবশ্যিক অংশ নয় বলে সুপ্রিম কোর্টে জানান সলিসিটর জেনারেল। আদালতে তিনি জানান, অনেক মুসলিমই আছেন, যাঁরা আর্থিক ভাবে সচ্ছল নন। তাঁরা যদি ওয়াকফে সম্পত্তি দান না করেন, তবে কি তাঁরা মুসলিম নন? কোনও কিছু দান করা যে কোনও ধর্মের অঙ্গ, কিন্তু তা আবশ্যিক নয়।
সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্য, এমন ব্যক্তিরা মামলা দায়ের করেছেন যাঁরা সরাসরি প্রভাবিত নন। এমনকি সংসদের আইন তৈরির ক্ষমতা নেই এটাও তাঁরা বলছেন না। সংসদের আইন সংশোধন ক্ষমতার বিরোধিতা কেউ করছেন না।
সলিসিটর জেনারেল বলেন, “ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবহার করলেই তার উপর মৌলিক অধিকার তৈরি হয় না। ১৯৫৪ সালের আইনে তা ছিল। এমনকি তার আগে বেঙ্গল অ্যাক্টেও তার উল্লেখ রয়েছে। একটি রায়ে বলা হয়েছে, কোনও অধিকার আইন দ্বারা অর্জন করলে, রাষ্ট্র সেই অধিকার যে কোনও সময় কেড়ে নিতে পারে।”
ওয়াকফ বোর্ডের ভূমিকা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ। সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে এমনটাই জানালেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। বস্তুত, মঙ্গলবারই মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতে দাবি করেছিলেন, ওয়াকফ বোর্ড একটি ধর্মীয় বিষয়। সেই দাবির বিরোধিতা করলেন কেন্দ্রের আইনজীবী।
১৯২৩ সালের আইনেও কি ওয়াকফ সম্পত্তি নিবন্ধীকরণের কোনও ব্যবস্থা ছিল? জানতে চান প্রধান বিচারপতি। তিনি জানান, আইনজীবী কপিল সিব্বল বলছেন এটি ১৯২৩ সালে ছিল না, ১৯৫৪ সাল থেকে এসেছে। সে কথা শুনে সলিসিটর জেনারেল বলেন, “একটি প্রচার চলছে। যেখানে ১০০ বছরের পুরনো সম্পত্তিগুলির প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে, আমরা কাগজ কোথা থেকে আনব! কিন্তু আমি জানিয়ে রাখতে চাই, কাগজের কোনও প্রয়োজনই ছিল না এ ক্ষেত্রে।” তিনি আরও বলেন, “যদি কোনও সম্পত্তি ১০০ বছরের পুরনো হয়, তবে শেষ পাঁচ বছরের নথিপত্র দেখান।”
কিছু ক্ষেত্রে সম্পত্তি ওয়াকফের অধীনে কি না, তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে কোনও সম্পত্তি যে ওয়াকফের, তা সাধারণ মানুষ জানেই না। কিছু মানুষ সেটিকে নিজস্ব সম্পত্তি হিসাবে ব্যবহার করছেন। এই কারণেই ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি ওয়াকফ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে কি না, তার উপর নজরদারির জন্য নির্দিষ্ট পদাধিকারীর প্রয়োজন।
ওয়াকফ সম্পত্তি দানের জন্য পাঁচ বছর ইসলাম ধর্ম পালনের কথা বলা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল মঙ্গলবার। বুধবারও তার ব্যাখ্যা দিলেন সলিসিটর জেনারেল। তাঁর বক্তব্য, “শরিয়ত আইনের ৩ নম্বর ধারায় বলা আছে, আপনাকে নিজেকে মুসলিম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এর অর্থ এই নয় যে আপনাকে দিনে পাঁচ বার নমাজ় পড়তে হবে বা মদ্যপান করা যাবে না।”
প্রধান বিচারপতি বিআর গবই জানান, মামলাকারীরা আশঙ্কা করছেন ওয়াকফের জমি দখল করে নিতে পারে সরকার। তাতে সলিসিটর জেনারেল আশ্বস্ত করেন, কোনও সম্পত্তি সরকারি জমি কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন রাজস্ব কর্তৃপক্ষ। তবে তিনি এ-ও জানান, যদি দেখা যায় যে জমিতে ভবন তৈরি হচ্ছে সেটি একটি সরকারি জমি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে কি সেটি যাচাই করতে পারবে না সরকার? সেই কারণেই সংশোধিত ওয়াকফ আইনের ৩সি ধারা রয়েছে।
সলিসিটর জেনারেল তুষার বলেন, “যৌথ সংসদীয় কমিটি দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাতারাতি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এমনটা নয় যে, কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও মন্ত্রক বিলের খসড়া তৈরি করেছে আর তা পাশ করানো হয়েছে। কয়েক জন মামলাকারী নিজেকে সমগ্র মুসলিম সমাজের বলে দাবি করতে পারেন না। এই বিল নিয়ে প্রচুর মতামত নেওয়া হয়েছে। যৌথ সংসদীয় কমিটি ৯৬টি বৈঠক করেছে। এবং প্রায় দেশ জুড়ে ৯৭ লক্ষ মানুষের মতামত পেয়েছে।”
বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ মামলার ফের শুনানি শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহর বেঞ্চে। বুধবার সংশোধিত ওয়াকফ আইন সংক্রান্ত মামলায় কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য শুনছে আদালত। কেন্দ্রের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা।
মঙ্গলবার প্রায় চার ঘণ্টা ধরে সুুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ মামলার শুনানি হয়। মূলত মামলাকারী পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের ৩ডি ধারার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে মঙ্গলবারের শুনানিতে। ওই ধারাটির উপর সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশ জারির আর্জি জানান মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy