Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্বেষ নয়, বামেদের মঞ্চে একসুর গুজরাতের দুই মুখ

প্রথম জন অশোক মোচী। আসল পদবি পারমার। তাঁর জুতো সেলাইয়ের পেশার দৌলতে ‘মোচী’ পদবিটাই নামের সঙ্গে সেঁটে গিয়েছে।

সম্প্রীতি: কেরলের ভাডাকারার সিপিএম প্রার্থী জয়রাজনের সঙ্গে গুজরাত হিংসার দুই মুখ অশোক মোচী (বাঁ দিকে) এবং কুতুবউদ্দিন আনসারি (একেবারে ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

সম্প্রীতি: কেরলের ভাডাকারার সিপিএম প্রার্থী জয়রাজনের সঙ্গে গুজরাত হিংসার দুই মুখ অশোক মোচী (বাঁ দিকে) এবং কুতুবউদ্দিন আনসারি (একেবারে ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

সন্দীপন চক্রবর্তী
কালপেট্টা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৪৬
Share: Save:

এক জনের চেহারায় বয়সের ছাপ ধরা যাচ্ছে। এখন স্বল্পকেশ। তবে সেই ছবিটায় য‌েমন ছিল, এখনও গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। সে দিন হাতে উদ্যত লোহার রড ছিল। মাথায় গেরুয়া ফেট্টি। এখন করজোড়ে।

অন্য জন সে দিন হাতজোড় করে প্রাণভিক্ষা করছিলেন। এখন হাসিমুখে প্রথম জনকে বুকে টেনে নিচ্ছেন। চেহারাটা এখনও গোলগাল। দাড়ি-গোঁফের বালাই তখনও ছিল না, এখনও নেই।

প্রথম জন অশোক মোচী। আসল পদবি পারমার। তাঁর জুতো সেলাইয়ের পেশার দৌলতে ‘মোচী’ পদবিটাই নামের সঙ্গে সেঁটে গিয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর গুজরাতে ২০০২ সালের দাঙ্গায় দাপিয়ে বেড়ানোর সময় মিডিয়ার ক্যামেরায় ধরা পড়েছিলেন। দ্বিতীয় জন কুতুবউদ্দিন আনসারি। নারোডা পাটিয়ায় সজল চোখে, করজোড়ে তাঁর প্রাণভিক্ষার ছবি সন্ত্রস্ত ভারত আজও ভোলেনি। গুজরাত দাঙ্গার সেই দুই প্রতীকী মুখ কেরলের ভাডাকারায় মঙ্গলবার হাত ধরাধরি করে দাঁড়ালেন মোদী-অমিত শাহের হাত থেকে দেশ বাঁচানোর আর্জি নিয়ে। তাঁদের এক সুতোয় বাঁধল সিপিএম।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভাডাকারা লোকসভা আসনে এ বার প্রার্থী হয়েছেন সিপিএমের দাপুটে নেতা পি জয়রাজন। বিরোধীদের প্রচারে তিনি অবশ্য আদপেই ‘গাঁধীবাদী’ নন। বরং, বাংলার রাজনীতির পরিভাষায় বললে ‘হার্মাদ’! কান্নুরে আগে কংগ্রেস-সিপিএম এবং ইদানীং সিপিএম-আরএসএসের যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইতিহাস, তার পিছনে জয়রাজনেরই মস্তিষ্ক দেখতে পায় বিরোধীরা। ঘরে-বাইরে আপত্তি উপেক্ষা করেই এ হেন জয়রাজনকে লোকসভা ভোটে কান্নুর জেলার ভাডাকারা থেকে দলের প্রার্থী করেছেন পিনারাই বিজয়ন, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনেরা। সেই জয়রাজনেরই দু’পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর হয়ে ভোট চেয়ে গেলেন অশোক ও কুতুব।

অশোক বলেছেন, ‘‘ভুল করেছিলাম। অন্ধ হয়ে অস্ত্র হাতে ভাইকে মারতে গিয়েছিলাম। ভুল রাজনীতির শিকার আমরা। আপনাদের বলব, আমার ভুল আপনারা করবেন না। ঘৃণা, বিদ্বেষের রাজনীতিকে পরাস্ত করুন। দাঙ্গাবাজদের হাত থেকে দেশকে বাঁচান!’’একই সুর কুতুবেরও, ‘‘আমার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি আর কেউ হোক, কখনও চাই না। ভোটাধিকার আপনাদের। বুঝে-শুনে সেই অধিকার প্রয়োগ করবেন।’’ কেন কেরলে বামপন্থী ফ্রন্ট এলডিএফের ডাকে এসেছেন, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন কুতুব। বলেছেন, ‘‘বামপন্থীরা ঘৃণার রাজনীতি করে না। দাঙ্গা করে না। এই কেরলে বিদ্বেষ, বিভাজনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়িয়েছে।’’

আর কী বলেছেন জয়রাজন? গুজরাতের দুই বিপরীত প্রতীককে মেলানোর কারিগর যিনি? তাঁর কথায়, ‘‘পার্টির সূত্রেই প্রথম কুতুবউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। এক সাংবাদিকের মাধ্যমে তার পরে খোঁজ মিলেছিল অশোকের। কান্নুরে পাঁচ বছর আগে একটা কনভেনশনে ওঁদের নিয়ে এসেছিলাম প্রথম বার। তখনই অশোক কুতুবের হাত ধরে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। এ বার দেশ জুড়ে মোদী-শাহেরা যখন বিভেদের বীজ বুনে বেড়াচ্ছেন, আমরা সংহতির কথা বলতে চাইছি।’’

ভাডাকারায় জয়রাজনের নির্বাচনী কার্যালয়ে এ দিন গিয়েছিলেন অশোক ও কুতুব। গুজরাতে দাঙ্গার সময়ে অবশ্য তাঁরা মুখোমুখি হননি। দাঙ্গার পরে কিছু দিন কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছিলেন কুতুব। তার পরে নানা শহর ঘুরে এখন নিজের রাজ্যেই থিতু। অশোক গোড়া থেকেই গুজরাতের শাহপুরের বাসিন্দা। ঠিকানা বদলায়নি। এত দিনে মনটা বদলে গিয়েছে আমূল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE