বারাণসীতে নিজের মনোনয়ন পেশ করতে গিয়েও বাংলার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণের নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর অভিযোগ, মমতার রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের প্রাণসংশয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মোদী বলেন, ‘‘ওখানকার বিজেপি কর্মীরা সকালে কাজে বেরোনোর আগে মাকে বলে যান, দলের কাজে যাচ্ছি। যদি সন্ধ্যাবেলা বেঁচে না ফিরি, তা হলে কাল থেকে ছোট ভাইকে পাঠিয়ো।’’
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল। দলনেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার মোদীর বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ বলার অভিযোগ করছেন। প্রধানমন্ত্রী সঠিক তথ্য ছাড়াই কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন বলেও মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ। মোদীর এ দিনের মন্তব্যের পরে তৃণমূল শিবিরের প্রতিক্রিয়া আরও কড়া। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ‘ঘৃণ্য রাজনীতি’ করতে গিয়ে মোদী শুধু ক্রমাগত মিথ্যাই বলছেন না, বাংলার মানুষকেও অপমান করছেন। এর জবাব রাজ্যের মানুষ দেবে।
এ দিন মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার আগে হোটেলে স্থানীয় বুথকর্মীদের উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘‘আপনারা তো তা-ও ভাগ্যবান যে, আপনাদের বাংলার মাটিতে বিজেপি কর্মী হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে না। তাঁর বক্তব্য, বাংলার গ্রামে বিজেপি কর্মীকে গলায় দড়ি দিয়ে গাছে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে বাকিরাও তা দেখে ভয় পান। বাংলায় বোমা-বন্দুক-পিস্তলের মধ্যে কার্যত প্রাণ বাজি রেখে বুক চিতিয়ে লড়তে হয় বিজেপি কর্মীদের। বাম-শাসিত কেরলেও একই হাল বলে মোদীর দাবি।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, মোদীর রাজত্বে দেশ জুড়ে মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা কতটা বিপন্ন তা সকলেই দেখছেন। ধর্মান্ধতা থেকে শুরু করে এক রাজ্যের মানুষের অন্য রাজ্যে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার অধিকারটুকু পর্যন্ত বিজেপি কেড়ে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের এই বাস্তব পরিস্থিতি মোদীর অজানা নয়। কিন্তু ‘মিথ্যার রাজনীতি’ করে তিনি ভুল বোঝাচ্ছেন। এই কৌশল সফল হবে না।
নরেন্দ্র মোদীর বিষয়আশয়
• ব্যাঙ্কে জমা: ১.২৭ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজ়িট, সেভিংস অ্যাকাউন্টে ৪,১৪৩ টাকা
• নগদ: ৩৭,৭৫০ টাকা
• বিনিয়োগ: ৭.৬১ লক্ষ টাকার এনএসসি, ২০,০০০ টাকার ট্যাক্স সেভিং ইনফ্রা বন্ড
• বিমা: ১.৯০ লক্ষ টাকা
• সোনা: ১.১৩ লক্ষ টাকা মূল্যের ৪টি সোনার আংটি
• স্থাবর সম্পত্তি: গাঁধীনগরের সেক্টর-১-এ ৩,৫৩১ বর্গফুট জমি,
যার মূল্য ১.১ কোটি টাকা
• অস্থাবর সম্পত্তি: ১.৪১ কোটি টাকার
• আয়ের উৎস: সরকারের বেতন ও ব্যাঙ্কের সুদ
• শিক্ষাগত যোগ্যতা: গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (১৯৮৩), দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ (১৯৭৮), এসএসসি (১৯৬৭)
• ফৌজদারি মামলা: নেই
• ঋণ: নেই
এ দিনই এক সাক্ষাৎকারে মোদী ফের মমতার উপহার পাঠানো নিয়ে মুখ খোলেন। তবে এ দিন তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক আলাদা।’’ মমতাও আগেই বলে দিয়েছেন, বাংলার সৌজন্যের সংস্কৃতি জানলে মোদী বিষয়টি নিয়ে ‘রাজনীতি’ করতেন না।