ভোটপ্রচারে গঙ্গায় ১৪০ কিলোমিটার নৌসফর করবেন প্রিয়ঙ্কা। —ফাইল চিত্র
হোলির আগে মোদীর খাসতালুকে অভিনব ভোটপ্রচার শুরু করছেন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা। আগামিকাল সোমবার গঙ্গায় দীর্ঘ ১৪০ কিলোমিটার জনসংযোগ যাত্রা করবেন কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক। ইলাহাবাদ অর্থাৎ প্রয়াগরাজ থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত দীর্ঘ নৌপথে প্রিয়ঙ্কার একাধিক কর্মসূচি রয়েছে। গঙ্গার দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ জনপদের সঙ্গে একাত্ম হতে মাঝে মাঝেই থেমে যাবে প্রিয়ঙ্কার স্টিমার। কোথাও ছোট সভা, কোথাও বা শুধুই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনবেন তিনি। রয়েছে একাধিক মন্দির, দরগা পরিদর্শনের কর্মসূচিও। প্রিয়ঙ্কার ভোটপ্রচার শেষ হবে মোদীর কেন্দ্র বারাণসীতে।
কংগ্রেসের তরফে শুক্রবার বিকেলেই প্রিয়ঙ্কার এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। যদিও তখনও নৌবিহারের অনুমতি মেলেনি। কংগ্রসে সূত্রে খবর, শনিবার রাতেই সেই অনুমোদন দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। জানা গিয়েছে, আজ রবিবারই লখনউ পৌঁছবেন প্রিয়ঙ্কা। সেখান থেকে সড়কপথে আজই পৌঁছে যাবেন প্রয়াগরাজে। রাতে সেখানে থাকার পর সোমবার সকাল থেকে শুরু হবে জলপথে যাত্রা। কংগ্রেস সূত্রে খবর, একাধিক স্টিমার বোট সহ যাত্রা করবেন প্রিয়ঙ্কা। সঙ্গে থাকবেন কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। তাঁর সফর ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে পুলিশ–প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।
প্রয়াগরাজ থেকে বারাণসী। ১৪০ কিলোমিটারের দীর্ঘ জলপথে গঙ্গার দুই তীরে রয়েছে এমন জনপদ, যা উত্তরপ্রদেশে ভোটের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেয়। এঁরা মূলত নিম্মবর্গীয় এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। এ ছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত গোষ্ঠী। লোকসভা ভোটের মুখে জনসংযোগ বাড়াতে এই সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করবেন প্রিয়ঙ্কা। পাশাপাশি মোদী জমানায় কী আশা ছিল, তার কতটা পূরণ হয়েছে বা হয়নি— সে সব কথাও শুনবেন পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা।
লোকসভা ভোটের সব খবর জানতে ক্লিক করুন
আরও পড়ুন: দেশের চৌকিদারি দশের দায়
উদ্দেশ্য আরও রয়েছে। মোদী জমানায় ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ চালু হয়েছে। গঙ্গা দূষণ ঠেকাতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু গঙ্গা কি আদৌ নির্মল হয়েছে? কংগ্রেস সূত্রে খবর, ভোটারদের এই প্রশ্ন করতে চান প্রিয়ঙ্কা। কারণ, এই প্রকল্পে কী কাজ হয়েছে— সেটা গঙ্গা তীরবর্তী জনপদই সবচেয়ে ভাল জানবেন। শুধু প্রতিশ্রুতি বা কাগজে কলমে নয়, আক্ষরিক অর্থেই জলে নেমে কতটা কাজ হয়েছে, তা নিজের চোখে দেখেছেন এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। আবার এই প্রকল্পে যাঁদের সবচেয়ে বেশি এবং প্রত্যক্ষ সুবিধা পাওয়ার কথা, সেই গঙ্গা তীরবর্তী মানুষজন কি আদৌ সেটা পেয়েছেন, সেই সব বিষয় নিয়েও চর্চা করবেন প্রিয়ঙ্কা।
প্রিয়ঙ্কা গাঁধী সম্পর্কে এই তথ্যগুলি জানেন কিনা যাচাই করে নিন
আরও পড়ুন: জোট চাই না, দাবি এ বার কংগ্রেসেই
২০১৪ সালে আগের বার লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী এবং গুজরাতের বডোদরা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। দু’টি কেন্দ্রেই জিতেছিলেন। পরে বডোদরা থেকে ইস্তফা দেন মোদী। ফলে বিগত পাঁচ বছর ধরে এই কেন্দ্রেরই সাংসদ তিনি। বিজেপি সূত্রে খবর, এ বারও এই বারাণসী থেকেই প্রার্থী হচ্ছেন মোদী। প্রিয়ঙ্কার গঙ্গাবিহার শেষ হচ্ছে এই বারাণসীতেই। সেখানে একাধিক মন্দির দর্শন যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে সাধু-সন্ত এবং স্থানীয়দের সঙ্গে জনসংযোগ। এ ছাড়া বারাণসীতেই একটি হোলি মিলন উৎসবেও যোগ দেবেন প্রিয়ঙ্কা।
দিল্লির মসনদের জন্য উত্তরপ্রদেশ সব রাজনৈতিক দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের মধ্যে হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যেই আসন সংখ্যা সবেচেয়ে বেশি (৮০)। অখিলেশ-মায়াবতী জোট করে ভোটে লড়ছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রাথমিক কথাবার্তা হলেও তা ব্যর্থ হয়। তার পরই রাহুল গাঁধী প্রিয়ঙ্কাকে সক্রিয় রাজনীতিতে আসার ঘোষণা করেন এবং দলের সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দিয়েছেন। তার পর থেকেই কংগ্রেসের পালে অনেকটাই হাওয়া লেগেছে উত্তরপ্রদেশে। সেই জোয়ার ধরে রাখতেই প্রিয়ঙ্কার এই নৌ-সফর, মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy