Advertisement
১৯ মে ২০২৪

চার পক্ষে এমন টক্কর আগে দেখেনি ত্রিপুরা

ত্রিপুরার বর্তমান দুই সাংসদ সিপিএমের হলেও, এক বছর আগে পালাবদলের পরে, রাজ্য রাজনীতির ছবিটা বেমালিব বদলে গিয়েছে।

২০১৯-এ ত্রিপুরায় লড়াইটা চারমুখী। ছবি: এএফপি।

২০১৯-এ ত্রিপুরায় লড়াইটা চারমুখী। ছবি: এএফপি।

বাপি রায়চৌধুরী
আগরতলা শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৫
Share: Save:

লোকসভা ভোটে বরাবর বাম আর কংগ্রেসের মধ্যেই লড়াই দেখে এসেছে ত্রিপুরা। দ্বি-মুখী লড়াইয়ের অবসান ঘটল এ বার। ২০১৯-এ লড়াইটা চারমুখী। তিন জাতীয় দল বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের সঙ্গে ময়দানে আছে রাজ্যে ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরিক আইপিএফটি-ও।

রাজ্যের বর্তমান দুই সাংসদ সিপিএমের হলেও, এক বছর আগে পালাবদলের পরে, রাজ্য রাজনীতির ছবিটা বেমালিব বদলে গিয়েছে। সাধারণ ভাবে ধরে নেওয়া যেতে পারে বিজেপির দিকে পাল্লা ভারী মনে হত পারে, রাজ্যে পঁচিশ বছরের বাম শাসনে ছেদ টেনে তারা ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু গত এক বছর ধরেই সরকারে শরিক আইপিএফটির সঙ্গে বিরোধ-ক্ষোভ-বিক্ষোভ লেগেই রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে। রাস্তায় নেমে এসেছে দুই শরিকের ঝগড়া। এ বার লোকসভার নির্বাচনে দু’টি আসনের মধ্যে আদিবাসী সংরক্ষিত পূর্ব ত্রিপুরা আসনটি চেয়েছিল আইপিএফটি। বিনিময়ে পশ্চিম ত্রিপুরা আসনে বিজেপির প্রার্থীকে পূর্ণ সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিজেপি রাজি হয়নি। আইপিএফটি তাই দু’টি আসনেই লড়ছে। এতে ভোট ভাগ হয়ে গিয়ে নতুন সমীকরণ উঠে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের পাহাড়ি অংশে, বিশেষ করে আদিবাসী এলাকায় আইপিএফটি-র প্রভাব যথেষ্ট। গত বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ৮ জন প্রার্থী জিতেছেন। তাঁদের দুজনএখন মন্ত্রী। ফলে, এই লোকসভা ভোটে আইপিএফটি-র গুরুত্ব যথেষ্ট।

এদিকে, প্রদ্যোৎকিশোর দেববর্মণ দলের সভাপতি হওয়ার পর কংগ্রেস উজ্জীবিত। বিশেষ করে, নাগরিকত্ব বিল সংশোধনীর বিরুদ্ধে প্রদ্যোৎকিশোর আদিবাসীদের বিভিন্ন দল ও সংগঠনকে এক মঞ্চে নিয়ে আসার পরে। দলছুট ও আদিবাসীদের অনেকেই কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন ও দিচ্ছেন। কিন্তু, উপজাতিদের মধ্যে যাঁরা বিজেপির দিকে ঝুঁকে, তাঁদেরও পাশে আনতে নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতায় ভূমিপুত্রদের এক হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন প্রদ্যোৎকিশোর। কিন্তু আইপিএফটি সে ডাকে সাড়া দয়নি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বাকি তিন দলের মতো সিপিএমও দাবি করছে, ফল তাদের অনুকূলেই যাবে। দলের পশ্চিম জেলার সম্পাদক পবিত্র করের দাবি, ‘‘গত বিধানসভায় হারলেও আমাদের ৪৫ শতাংশ ভোট রয়েছে। রাজ্যের মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে বিজেপির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। এক বছরে মোহভঙ্গ হয়েছে। এক বছরে রাজ্যের সমস্ত নির্বাচনে সন্ত্রাস করে বিজেপি-আইপিএফটি ছিনিয়ে নিয়েছে ক্ষমতা। এ বারে তা করতে পারবে না। আইপিএফটি-ও আলাদা লড়ছে। কংগ্রেসের একটি অংশ বিজেপিতে গিয়েছিল। তারা আবার কংগ্রেসে ফেরত যাচ্ছে। এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতে পারে, তা হলে আমরা দু’টি আসনে জিতবই।’’

বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘খালি চোখে চার দলের লড়াই মনে হলেও একটা ‘ছায়াজোট’ রয়েছে। কংগ্রেস-সিপিএম বোঝাপড়া করেই চলছে। তার পরেও ২৩ মে দেখা যাবে দু’টি আসনেই আমরা বিরাট ব্যবধানে জিতব।’’ কিন্তু রাজ্য সরকারের শরিক দলই যে আলাদা ভাবে লড়ছে? এর প্রভাব পড়বে না ভোটে? নবেন্দুবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘বিধানসভায় যাদের নিয়ে ক্ষমতায় এসেছি এ বার তাদের সঙ্গেও লড়াই হচ্ছে। পৃথক দল হিসেবে এদের অধিকার রয়েছে নির্বাচনে লড়াই করার। এরা লড়ছে নিজেদের অস্তিত্বরক্ষার জন্য এবং নিজেদের অবস্থানের কারণে।’’ এতে দু’দলের সমর্থকেরা বিভ্রান্ত হবেন না বলেই নবেন্দুবাবুর দাবি জানিয়েছেন।

আইপিএফটি-র বুধু দেববর্মার বিশ্বাস দু’টি আসনেই মানুষ তাঁদের প্রার্থীকে জেতাবেন। তাঁর দাবি, পাহাড় মানেই আইপিএফটি। পাহাড়ে ঢুকতে পারছে না বিজেপি।

কংগ্রেস মনে করছে চারমুখী লড়াইয়ে আখেরে লাভ হবে তাদেরই। কংগ্রেসের মুখপাত্র তাপস দে-র অঙ্কটা এই রকম: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একাই বেরোচ্ছেন প্রচারে। গত এক বছরে এত আবোল-তাবোল কথা বলেছেন যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। সে দিক থেকে কংগ্রেসের সভাপতি প্রদ্যোৎকিশোরের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তার পারিবারিক ‘মানিক্য’ শাসনাধীন কাল সম্পর্কে রাজ্যের মানুষের জানা রয়েছে। কংগ্রেস ছেড়ে যাঁরাই বিজেপিতে গিয়েছিলেন, প্রদ্যোৎকিশোর সভাপতি হওয়ার পরে তাঁরা আবার ফিরে আসছেন। সভাপতি কথা দিয়েছিলেন সকলকে মর্যাদা দেওয়া হবে। তাই বিজেপির রজ্য সহসভাপতি কংগ্রেসে আসার পরই তাঁকে পশ্চিম আসনে প্রার্থী করা হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত যারাই জিতুক, চার পক্ষের এমন লড়াই আগে দেখেনি ত্রিপুরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE